বিশেষ প্রতিবেদক:
পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন পলাতক থাকা মাদক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি মোহাম্মদ উল্লাহ (৩১) প্রকাশ টেমা উল্লাহকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার ( ১৭ নভেম্বর) মধ্যরাতে নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক ( এসআই) উইলিয়াম। গ্রেফতারকৃত উল্লাহ মধ্যম বাহারছড়া এলাকার জলু সর্দারের বাড়ির মৃত আবুল হোসেনের পুত্র।
তিনি বলেন, একটি ইয়াবা মামলায় পুলিশ তাঁকে আটক করেছিল। পরে সে আদালত থেকে জামিন নেয়। পরে ওই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে আদালত। গোপন সংবাদে খবর পেয়ে শুক্রবার রাত ৩ টার দিকে তার বাসা থেকে তাঁকে আটক করা হয়েছে। থানায় আইনি কার্যক্রম শেষে তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
খবর নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন সে ইয়াবা সেবন বিক্রির সাথে জড়িত। ২০১৭ সালে ইয়াবাসহ পুলিশ তাঁকে আটক করেছিল। পরে সে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও মাদকের কারবারের সাথে জড়িয়ে পড়ে। ইয়াবা সেবন করে বাসায় গিয়ে নিজের স্ত্রীর উপর অমানুষিক নির্যাতন করারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। তার অত্যাচার সয্য করতে না পেরে সদর মডেল থানায় তিনবার লিখিত অভিযোগ দেয় তার স্ত্রী। এমনকি তার বাবা নিজেই পুত্রের অত্যাচার থেকে বাঁচতে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল। গর্ভাবস্থায় থাকা তার একমাত্র বোনকে মারধর করলে তিনিও তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছিল। টেমা উল্লাহ'র বিরুদ্ধে থানায় দুটি মামলাসহ ডজন খানেক অভিযোগ আছে। চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর বোনের স্বামী ও সন্তানদের অপহরণ করার প্রকাশ্যে হুমকি দেয়। পরে জীবনের নিরাপত্তা ও শিশু সন্তানের নিরাপদ চেয়ে ১৯ অক্টোবর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন তার দুলাভাই। মামলায় মোহাম্মদ আলী ও মোহাম্মদ উল্লাহ প্রকাশ টেমা উল্লাহ'কে আসামি করা হয়। এক মিছিল শেষে তথ্য প্রমানের সাপেক্ষে নভেম্বরের ২২ তারিখ তাঁদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে বিজ্ঞ আদালত। শুধু তাই নয়, স্বয়ং নিজের মা তাদের দুইজনের অবহেলা ও পুত্র বঁধুর অত্যাচার সয্য করতে না পেরে জেলা লিগ্যাল এইডে হাজির হয়ে তাঁদের নাম উল্লেখ করে অভিযোগও করেন । নোটিশের মাধ্যমে তাঁদের ডাকলেও তারা তা কর্ণপাত করেনি। সেটা জানার পর আর-ও বেপরোয়া হয়ে উঠে তাদের দুই পুত্র বঁধু। পরে অনাহার অর্ধাহারে নিদারুণ কষ্ট ও নিষ্ঠুর বাস্তবতার কাছে হেরে যান তিনি। বিনা চিকিৎসায় মারা যান তাদের গর্ভধারিনি মা।
সদর মডেল থানার এস আই শাহনেওয়াজ বলেন, তাদের একমাত্র বোন গত অক্টোবরের ১৮ তারিখ তাদের নাম উল্লেখ থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিল। ওসি স্যার অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়। পরে দুই পক্ষকে থানায় ডেকে বিষয়টি মিমাংসার কথা বলি। কিন্তু আলী এবং উল্লাহ আসেনি।
আরও জানা যায়,ঝিলংজা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের চন্দ্রিমা মাঠ জলুর ঘোনা নির্জন এলাকায় টেমা উল্লাহ একটি মাদকের আস্তানা গেড়েছেন। দুপুরের পর থেকে দাগী মাদক সেবকদের নিয়ে তার আস্তানায় বসে মাদকের আসর। ইয়াবা সেবনের পাশাপাশি সোর্সের মাধ্যমে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ইয়াবা বড়ি সাপ্লাই দেয়। প্রতিদিন রাত ১০ টার দিকে বাহারছড়া বাজারের গরুর মাংস বিক্রির স্থানে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ইয়াবা সেবনে মেতে উঠে। ব্যবসায়ীরা বিষয়টি গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের জানালেও কোনো কাজ হয়নি।
সর্বশেষ গত শুক্রবার ( ১৭ নভেম্বর) বিকেল ৪ টায় জলুর ঘোনা এলাকায় এক মহিলার ভোগ দখলীয় জায়গায় ভাংচুর চালিয়ে বিভিন্ন ফলজ গাছের চারা নষ্ট ও ঘেড়া উপড়ে ফেলে। তিনি বাঁধা দিতে গেলে মোহাম্মদ আলী তাকে কিল-ঘুষি মারে। ওই ভুক্তভোগী থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি অন্যথায় তিন শতক জমি কেড়ে নেওয়ারও হুমকি দেয় আলী ও টেমা উল্লাহ। ওই দিন সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী মহিলা মেডিকেল রিপোর্ট সংযুক্ত করে ও ঘটনার ছবি সংযুক্ত করে সদর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।