মো. নুরুল করিম আরমান ,লামা প্রতিনিধি:
চাঁদা না দেওয়ায় বান্দরবানের লামা উপজেলায় এক বৃদ্ধের দীর্ঘ বছরের ভোগ দখলীয় জমি জবর দখলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের মিশন পাড়ার বাসিন্দা মো. জহিরের ছেলে মো. বেলাল সহ ৮জন সংঘবদ্ধ হয়ে জোর পূর্বক জমি দখলে নেয় বলে অভিযোগ করেন বৃদ্ধ ফয়জুল কবির (৭০)। এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে বৃদ্ধকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসাবে ও হত্যা করে লাশ গুম করবে বলেও হুমকি প্রদান করেন অভিযুক্তরা। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে বৃদ্ধ ফয়জুল কবির বাদী হয়ে মো. বেলালসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন। এতে অন্য অভিযুক্তরা হলো- মিশনপাড়ার বাসিন্দা ইদ্রিসের ছেলে আবুল হাশেম (৫০) ও মফিজুর রহমান (৪৫), বেলালের স্ত্রী খালেদা বেগম (৩৮), ইদ্রিসের মেয়ে মিন্টু আক্তার (৩০) ও ববি আক্তার (২৬), মফিজুর রহমানের স্ত্রী কুলচুমা আক্তার (২৫) আবুল হাশেমের স্ত্রী পারভিন আক্তার (৪৫)। পাশাপাশি বেদখল জমি উদ্ধার ও মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন অসহায় বৃৃদ্ধ ফয়জুল কবির।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, বৃদ্ধ ফয়জুল কবিরের নামে লামা উপজেলার ৩০৭নং চাম্বি মৌজার ১০নং হোল্ডিং মূলে দুই চৌহদ্দিতে তিন একর জমি রেকর্ডভুক্ত আছে। ২০-৩০ বছর ধরে এ জমিতে বহু অর্থ-কায়িক শ্রম ব্যয়ে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছের বাগান সৃজন করে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ করে আসছেন। বর্তমানে জমির বাজারমুল্য অতিমূল্যবান হওয়ায় ওই জমির উপর অভিযুক্তদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। অভিযুক্তরা বিভিন্ন সময় ওই জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে মো. বেলালের নেতৃত্বে অন্য অভিযুক্তরা বৃদ্ধ ফয়জুল কবিরের কাছে গত দু মাস আগে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। চাঁদা না দিলে জমি ভোগ করতে দিবেনা এবং জোর পূর্বক জমি তাদের দখলে নিবে বলে হুমকি দেন অভিযুক্তরা। তারই ধারাবাহিকতায় চাঁদা না দিলে গত ১৫ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে ফয়জুল কবিরের ভোগ দখলীয় জমি দখলের উদ্দেশ্যে ঘর নির্মাণ শুরু করেন অভিযুক্ত বেলালসহ অন্যরা। পরে এ ঘটনায় তাৎক্ষনিকভাবে বৃদ্ধ ফয়জুল কবির স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ বরাবরে অভিযোগ করেন। এ প্রেক্ষিতে পুলিশ ক্যাম্প ইচার্জের মধ্যস্থতায় বৈঠকও হয়। বৈঠকের পরবর্তীতে ঘর নির্মাণ কাজ দুই তিন দিন বন্ধ রাখলেও অভিযুক্তরা পরবর্তীতে আবার ঘর নির্মাণ শুরু করে দেন। পরবর্তীতে অভিযুক্তরা পুুণরায় ঘর নির্মাণের চেষ্টা করলে বৃদ্ধ ফয়জুল কবির ক্যাম্প ইনচার্জ আসাদ উল্লাহ খানকে জানান। কিন্তু ক্যাম্প ইনচার্জ আসাদ উল্লাহ খান এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বরং উল্টো ফয়জুল কবিরের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। শুধু তাই নয়, এ সময় তিনি অভিযক্তদেরকে ফয়জুল কবিরের জমি থেকে ১০শতক জমি ছেড়ে দিতে বলেন। অন্যথায় পুলিশের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা করা হবেনা এবং অভিযুক্তদের ঘর নির্মাণে কোন বাঁধাও প্রদান করতে পারবেনা বলে হুমকি দেন এ ক্যাম্প ইনচার্জ। এরপর ২০ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে অভিযুক্তরা পুণরায় ঘর নির্মাণ শুরু করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ২০শতক জমি দখল করে নেয়। পরে প্রতিকার চেয়ে ২৩ নভেম্বর উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মো. বেলাল সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন বৃদ্ধ ফয়জুল কবির।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত মো. বেলাল বলেন, আমরা ফয়জুল কবিরের জমি দখল করিনি। তাছাড়া তার কাছে চাঁদা চাওয়া বা হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। উল্টো ফয়জুল কবির আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করায় আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। তার অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এদিকে এ ঘটনায় আজিজনগর পুলিশ ক্যাম্পের সাবেক ইনচার্জ আসাদ উল্লাহ খানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার রিং করেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শিবেন বিশ্বাস জানান, ফয়জুল কবির কর্তৃক মো. বেলাল গংদের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত মামলা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।