অনলাইন ডেস্ক:
মিয়ানমার ইস্যুতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে দিনের বেলায় তেমন গোলাগুলির শব্দ শোনা না গেলেও রাতের বেলায় থেমে আসছে গুলির শব্দ।
এদিকে উখিয়া সীমান্তের রহমতের বিল এলাকায় তিন থেকে চারটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল শুক্রবার(০৯ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে না পারায় লাশ উদ্ধার করতে পারেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা নিশ্চিত করতে পারেনি লাশের পরিচয়।
এ ছাড়া গতকাল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের পশ্চিমকুল এলাকায় অবিস্ফোরিত একটি মর্টার শেল পাওয়া যায়।
অপর দিকে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মিয়ানমারের ২৩ নাগরিকের বিরুদ্ধে গতকাল উখিয়া থানায় মামলা হয়েছে। তাঁদের কাছে ১২টি অস্ত্র ছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল দুপুরে উখিয়া সীমান্তের রহমতের বিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের জটলা দেখা যায়। সেখানে সবাই বলাবলি করছিলেন, কয়েকজন কৃষক তিন থেকে চারটি লাশ সীমান্তের পাশে পড়ে থাকতে দেখেছেন। বিদ্যালয়টি থেকে ওপারে মিয়ানমারের ঢেঁকিবুনিয়া সীমান্তের দূরত্ব আধা কিলোমিটার।
স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক স্কুলশিক্ষক নুরুল বশর ভাষ্যমতে, সীমান্তের এপারে তিন থেকে চারটি লাশ পড়ে আছে, এমনটা জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা। তবে নিরাপত্তার কারণে কৃষকদের নাম প্রকাশ করতে চাননি তিনি।
উখিয়া থানার ওসি শামীম হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, উখিয়া সীমান্তের রহমতের বিল এলাকায় কয়েকটি লাশ পড়ে আছে, স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে এমন খবর পেয়ে শুক্রবার দুপুরে পুলিশ সেখানে যায়। কিন্তু সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি লাশগুলো থাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে পুলিশ তা উদ্ধার করতে পারেনি। তবে চেষ্টা চলছে।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কক্সবাজারের টেকনাফের জিম্বংখালী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। তবে গতকাল পুরো দিন শান্ত ছিল। সীমান্তের ওপারে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে কিছু গুলির শব্দ শোনা গেলেও আওয়াজ ছিল ছোট।
সরেজমিনে দেখা যায়, জিম্বংখালী ও উনচিপ্রাং সীমান্তের এপারে দেড় দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বসতি নেই। এই এলাকার মধ্যে কিছু ধানখেত, লবণ খেত ও মাছের ঘের রয়েছে। এ কারণে ওপারে গুলি হলে আওয়াজ ছোট হয়ে কানে আসে। তবে মর্টার শেল নিক্ষেপ হলে বিকট শব্দে এপারের লোকালয় কেঁপে ওঠে। এছাড়া জিম্বংখালী ও উনচিপ্রাং সীমান্ত এলাকায় নাফ নদী রয়েছে। এ কারণে এপারের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক একটু কম। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদীতে কোস্টগার্ডের টহল দেখা গেছে।
হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, শুক্রবার দিনে পরিবেশ শান্ত ছিল। ওপারে গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতের বিল এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত ছিল একেবারে শান্ত। গতকাল এ দুই সীমান্তে কোনো গোলযোগের ঘটনা শোনা যায়নি।
মঙ্গলবার রহমতের বিল সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের ২৩ নাগরিক এ দেশে ঢুকে পড়েন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের ধরে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসেন। মিয়ানমারের নাগরিকদের কাছে অস্ত্র ছিল। পরে তাঁদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অনুপ্রবেশের অভিযোগে মিয়ানমার ২৩ নাগরিকের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ওসি শামীম হোসেন। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমারের নাগরিকদের কাছে অস্ত্র ছিল। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাঁদের থানায় হস্তান্তর করেছে।
উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার রহমতের বিল সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের ২৩ নাগরিক এ দেশে ঢুকে পড়েন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের ধরে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসেন। মিয়ানমারের নাগরিকদের কাছে অস্ত্র ছিল। পরে তাঁদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গফুরউদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, অনেকে বলছেন তাঁরা উখিয়া আশ্রয়শিবিরের তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা। কিন্তু বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গতকাল বেলা দুইটার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের পশ্চিমকুল এলাকার একটি ধানখেতে আরেকটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল পাওয়া গেছে। পরে মর্টার শেলটি তুমব্রু-ঘুমধুম সড়কে তুলে দুই পাশে লাল পতাকা পুঁতে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, একজন নারী ধানখেতে মর্টার শেলটি দেখতে পান।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘুমধুম ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকার খোলা বিল থেকে উদ্ধার হওয়া অবিস্ফোরিত মর্টার শেলটি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
সূত্র : প্রথম আলো