অনলাইন ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ও বাংলা একাডেমিকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন। তিনি বলেছেন, ‘মাতৃভাষা ও সাহিত্যের প্রশ্নে আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ও বাংলা একাডেমিকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে হবে।’
বুধবার(২১ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস- ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভাষার ওপর পড়াশোনা করলে অনেক মানুষ ও জাতি সম্পর্কে জানা যায়। যেহেতু আমরা মাতৃভাষা রক্ষায় রক্ত দিয়ে পথ দেখিয়েছি, তাই সারাবিশ্বের মাতৃভাষা সংরক্ষণ এবং গবেষণায়ও জোর দিতে হবে।’
বিভিন্ন দেশের সাহিত্য ও ইতিহাস অনুবাদ করে আমাদের ছেলে-মেয়েদের হাতে তুলে দেয়া দরকার বলেও মত ব্যক্ত করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল ডিভাইসে দেখি অনুবাদ করে। এই অনুবাদ করতে গিয়ে এমন উদ্ভট কিছু লেখে, ভাষার বিকৃতি ঘটে যায়। এটিতে নজর দেয়া উচিত। অনুবাদ ডিভাইসে হয়ে যায় ঠিক, কিন্তু সেটা ঠিকমতো হলো কি না তা দেখে ভুল হলে সংশোধন করে বাজারজাত করা উচিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাতৃভাষার ধ্বনি সারাবিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। অনেকে এ নিয়ে লজ্জা পেয়ে যান, ভুল হলো কি না। আমি সেটা মনে করি না। লজ্জা পাই না। ভুল নিয়ে আমি চিন্তা করি না।
‘আমি মনে করি, আমি নিজের মতো করে আমার কথাটা বুঝাতে পারলাম কি না। ভুল হলো কি না- এই চিন্তায় আমরা অনেক সময় কথাই বলতে পারি না। এটা কিন্তু ঠিক না। আমি নিজেও শুধু বাংলাটাই ভালোভাবে পারি। আমি বাংলা সাহিত্যে পড়েছি। ইংরেজি ভালো করে পারতাম না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাতৃভাষা জানার ফলে নিজের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জানা যায়। আমি মনে করি, আমাদের মাতৃভাষা শিক্ষার মাধ্যম থাকবে। তবে অন্যান্য ভাষা শেখারও সুযোগ থাকতে হবে। কিছু কিছু পরিবার হঠাৎ টাকার মালিক হয়ে গেছে। তারা মনে করে ইংরেজি ভাষায় কথা বললেই স্মার্ট। অনেকে দেশি ভাষা পরিত্যাগ করার মতো অবস্থায় চলে যায়। শুদ্ধভাবে বাংলা বলতে অসুবিধা কী?’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য, আমাদের ইতিহাস বিকৃত করা হয়। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করেছিল। শুধু ইতিহাস নয়, ভাষারও বিকৃতি শুরু হয়েছিল। আরবি ভাষায় বাংলা লিখতে হবে, পরে আবার ল্যাটিন ভাষায় বাংলা লিখতে হবে, এমন সিদ্ধান্ত এসেছিল। আমাদের ছেলে-মেয়েরা সেটারও প্রতিবাদ করেছিল।
‘সেদিন আর নেই। এখন মানুষ সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে বাঙালি জাতির ভাষা ও সংস্কৃতি সরিয়ে ভিন্ন ধারা পরিচালনার চেষ্টা হয়। আমরা সেটা থেকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলাম। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছে। সারা পৃথিবীর মাতৃভাষা যাতে হারিয়ে না যায়, সেজন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছি। এটি ইউনেস্কো কর্তৃক ক্যাটাগরি টু-তে উন্নীত হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু কিছু পরিবার হঠাৎ টাকার মালিক হয়ে গেছে। তারা মনে করে ইংরেজি ভাষায় কথা বললেই স্মার্ট। অনেকে দেশি ভাষা পরিত্যাগ করার মতো অবস্থায় চলে যায়। শুদ্ধভাবে বাংলা বলতে অসুবিধা কী?’
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. হাকিম আরিফ।