সিবিএন ডেস্ক:
দেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী সাদী মহম্মদের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে তার বাসার গান করার ঘরে।

তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। পুলিশের ধারণা, আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন এই শিল্পী।

সাদীর ভাই শিবলী মহম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, বুধবার সন্ধ্যা ৭টার পর কোনো এক সময় মোহাম্মদপুরের বাসায় তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়।

তবে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত বলার মত অবস্থায় ছিলেন না তিনি।

মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক তদন্ত তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “বাসায় যে ঘরে বসে সাদী মহম্মদ গান করতেন, সেখানেই তার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। মনে হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।”

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সন্ধ্যা ৭টার পর কোনো এক সময় ওই ঘটনা।

“বাসার লোকজন ডাকাডাকি করে তার সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে লাশ ঝুলতে দেখে। পরে খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।”

এই পরিবারের ঘনিষ্ঠ নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিবারের কেউ এখন কথা বলার মত অবস্থায় নেই। মরদেহ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

রাত ১০টার দিকে সাদী মহম্মদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, নৃত্যশিল্পী স্নাতা শাহরিন, অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদ, নাট্যনির্দেশক পান্থ শাহরিয়ারসহ অনেকে সাদী মহম্মদের মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে এসেছেন।

বাসায় থাকা স্বজনরা জানান, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য মরদেহ আসতে একটু দেরি হবে। এরপর পরিবার থেকে বিস্তারিত জানানো হবে।

শহীদ সলিম উল্লাহর ছেলে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদী মহম্মদ এবং নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ বাংলাদেশে সংস্কৃতি অঙ্গনে খুবই চেনা মুখ।

সলিম উল্লাহ ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে তার ছিল সখ্য। একাত্তরের ২৩ মার্চ মোহাম্মদপুরের বাসার ছাদে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিলেন তিনি।

২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিনই অবাঙ্গালিরা ওই বাড়িতে চড়াও হয়ে আগুন দেয়। হত্যা করা হয় সলিম উল্লাহসহ তার পরিবারের কয়েকজনকে। পরে স্বাধীন বাংলাদেশে তার নামেই ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিম উল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়।

বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্র সংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা সাদী মহম্মদ একাধারে শিল্পী, শিক্ষক ও সুরকার ছিলেন। ২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

২০০৯ সালে তার ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে তার ‘সার্থক জনম আমার’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। অসংখ্য সিনেমা ও নাটকে প্লেব্যাক করেছেন সাদী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক।

২০১২ সালে সাদী মহাম্মদকে আজীবন সম্মাননা দেয় চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি তাকে রবীন্দ্র পুরস্কার দেয়।

তবে গত কয়েক বছর ধরে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠানে খুব একটা দেখা যাচ্ছিল না সাদীকে। গতবছর জুলাই মাসে মারা যান সাদী-শিবলীর মা বেগম জেবুন্নেসা সলিম উল্লাহ। তারপর থেকে সাদী নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিলেন বলে পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য।

নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা বলেন, “আমরা তো বুঝতে পারিনি কোন অভিমান বুকে চেপে রেখেছিলেন? এমন একটি কাজ করলেন, আমরা স্তব্ধ। শুধু বলব, সবাই উনার জন্য দোয়া করবেন। অনেক ভালো একজন মানুষ ছিলেন। তার এমন মৃত্যু আমাদের স্তব্ধ করে দিয়েছে।”

শিবলী মহম্মদ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বাদ জোহর বাসার পাশে তাজমহল রোড কবরস্থানে দাফন করা হবে তার ভাইকে। তার আগে কবরস্থান জামে মসজিদেই জানাজা হবে।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মানুষের ভালোবাসা আমার ভাই পেয়েছেন। এই যে এত মানুষ এখানে ছুটে এসেছেন। এটাই আমার ভাইয়ের প্রতি সবার ভালোবাসা। মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়া হবে না। মরদেহ রাতে হিমঘরে রাখা হবে। সেখান থেকে কাল আনা হবে।”