মুহাম্মাদ মিযানুর রহমান:
মাহে রমজান মু’মিন জীবনের বসন্ত! ইবাদতের মৌসুম! পুণ্যময় আবহ জেগে ওঠার মাহেন্দ্রক্ষণ! পরকালীন পাথেয় অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ। এই মাহে রমজানে চার খলিফার আমল ছিল বর্ণনাতীত। তারা রমজান মাস আসার আগেই আমলের জন্য সময় নির্ধারণ করতেন এবং কোনোভাবে সময় নষ্ট হতে দিতেন না। রমজানে বিশেষ যে ইবাদতগুলোর প্রতি তারা গুরুত্বারোপ করতেন তার একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ।
মানুষকে সেহরি খাওয়ানো:
খলিফা হজরত আবু বকর রাযি. শুধু একা একা সেহরি খেতেন না বরং তিনি সেহরিতে সব শ্রেণির মানুষকে শরিক রাখতেন, দাওয়াত করে মানুষকে সেহরি খাওয়াতেন। হাদিস শরিফে বিবৃত হয়েছে, তাউস (রহ.) বর্ণনা করেন, আমি ইবনে আব্বাস রাযি.-কে বলতে শুনলাম, ওমর রাযি. সেহরিতে আমাকে খাবার জন্য ডেকেছে। তখন লোকদের হট্টগোল শুনতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এটা কী হচ্ছে?’ আমি বললাম, (মানুষ যৌথভাবে সেহরি খেয়ে) ‘মসজিদ থেকে বের হচ্ছে’ (মুখতাসারু কিয়ামিল লাইল: ৯৭)
অপ্রয়োজনীয় কথা-কাজ থেকে বিরত থাকা:
খলিফা উমর ইবনু খাত্তাব সব সময়ে অপ্রয়োজনীয় কথা-কাজ এড়িয়ে চলতেন। তবে রমজানে এদিকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতেন। তিনি বলতেন, ‘রোজা শুধু পানাহার বর্জনের নাম নয়; বরং রোজা মিথ্যা, বাতিল ও বেহুদা কসম খাওয়া থেকে বর্জনের নামও।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৯৮৭৫)। এ ধরনের কথা আলী ইবনে আবি তালেব রা. থেকেও বর্ণিত আছে। (প্রাগুক্ত: ৯৮৭৭)।
তারাবির নামাজ:
আবদুর রাহমান ইবনু আবদ আল-ক্বারী (রহ.) বলেন—আমি রমজানের এক রাতে হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. এর সঙ্গে মসজিদে নাববীতে গিয়ে দেখি যে, লোকজন এলোমেলো-জামাতে বিভক্ত। কেউ একাকী আবার কেউ জামাতে নামাজ আদায় করছে।
তখন হজরত ওমর রাযি. বললেন―আমি যদি এই লোকদের একজন ইমামের পেছনে একত্রিত করে দেই, তবে তা উত্তম হবে। এরপর তিনি উবাই ইবনু কাব রাযি.-এর পেছনে সবাইকে একত্রিত করে দিলেন। আরেকদিন রাতে আমি হজরত ওমর রাযি.-এর সঙ্গে বের হলাম। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সঙ্গে নামাজ আদায় করছিল।
কোরআন তেলাওয়াত:
বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার ইবনুল বাত্তাল (রহ.) বর্ণনা করেন, ‘ইসলামের তৃতীয় খলিফা ওসমান ইবনে আফফান রাযি. প্রতি রাতে পূর্ণ এক খতম কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করতেন।’ (শরহু ইবনে বাত্তাল: ৩৯০/২)।
অন্য বর্ণনা আছে, হযরত উসমান ইবনে আফফান রাযি. এক রাতেই কোরআন শরীফ খতম করতেন। (ফাজায়েলে কোরআন, আবু উবাইদ: ১/৩৫১)।
দানশীলতা:
কোনও এক রমজানে ইফতারের সময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হজরত আলী রাযি. ইফতার করতে বসেছেন। কিশোর পুত্র হাসান ও হোসাইন বাবার সঙ্গে বসেছে। সবার সামনে একটি করে রুটি। এমন সময় একজন মুসাফির এসে কিছু চাইলো। হজরত আলী রাযি. নিজের রুটি ইমাম হাসানের হাতে তুলে দিয়ে বলেন, ‘বাবা যাও মুসাফিরকে খালি হাতে ফেরাতে নেই, আমার ভাগের রুটি দিয়ে এসো।’
ইমাম হাসান বলেন, ‘আব্বু আমার ভাগেরটিও মুসাফিরকে দিতে চাই।’ আলী বলেন, ‘মাশাআল্লাহ, দিয়ে দাও।
বিষয়টি দেখে ছোট ছেলে ইমাম হোসাইন বলেন, ‘আব্বু আমার ভাগের রুটিও দিতে চাই।’ হজরত আলী বলেন, ‘বেশ তো দিয়ে দাও।’ হজরত ফাতেমা ছুটে এসে বলেন, ‘আমিও কল্যাণের ভাগী হবো। বাবা হাসান আমার ভাগের রুটিও নিয়ে যাও।’ এ দৃশ্য দেখে তাদের গৃহপরিচারিকা উম্মে ফাজ্জা দৌড়ে এসে বলে ভাইয়া হাসান, ‘আমার ভাগের রুটিও নিয়ে মুসাফিরকে দিয়ে দাও।’ এই ছিল নবীজির ঘরে বেড়ে ওঠা হজরত আলী রাযি. এবং তার পরিবারের দানশীলতা।
লেখক: মুহাদ্দিস জামিয়া ইসলামিয়া নুরুল উলুম পান্থশালা, নরসিংদী।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।