প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
স্থানীয় বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পাল্স এর উদ্যোগে গত ১৯ মার্চ স্থানীয় এক হোটেল সম্মেলন কক্ষে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে কার্যকর ও যথাসময়ে মানবিক সাড়া দানের লক্ষ্যে 'গ্রান্ড বার্গেন প্রতিশ্রম্নতি ২০২৩’ পরবর্তী এবং স্থানীয় পর্যায়ে লোকালাইজেশন এ্যাডভোকেসি চাহিদা তৈরি বিষয়ক পরিকল্পনা নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাল্স এর অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা এর উপস্থাপনয় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার, সরকারের অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বিটা এর নির্বাহী পরিচালক এবং বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শিশির দত্ত, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল ইসলাম।
আবু মোরশেদ চৌধুরী উনার প্রারম্ভিক বক্তব্যে বলেন, আমরা যারা স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের ছোট ছোট সংগঠনগুলো বিভিন্ন মানবিক বিপর্যয়কালে সহায়তা প্রদান/সাড়াদানে সামাজিক দায়বদ্ধতার তাগিদে কাজ করে যাচ্ছি, অনেকেই আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা/মধ্যস্থতাকরদের সাথে পার্টনারশিপ করার সময় তাদের কি দক্ষতা, স্বচ্ছতা, ক্ষতিগ্রস্ত গোষ্ঠীর প্রতি কি জবাবদিহিতা আছে বা তাদের আন্তর্জাতিকভাবে কি প্রতিশ্রম্নতি আছে তা আমলে নেই না! আজকের আলোচনায় সকলে মিলে এসব বিষয়গুলো নিয়ে কিছু জানার চেষ্টা করবো। ইতিমধ্যে পাল্স কর্তৃক সরবরাহকৃত “ডকুমেন্টস কিট” গ্রান্ড—বার্গেনিং প্রতিশ্রম্নতি এবং লোকালাইজেশন সম্পর্কিত কিছু সংগৃহীত রেফারেন্স কাগজপত্র দেয়া হয়েছে। আশা করি এসব ডকুমেন্টস আমাদের পুনরায় কিছুটা হলেও বর্তমান “লোকালাইজেশন” কর্মসূচি এবং আমাদের করনীয় বিষয়ে চিন্তার পরিধিকে আরও বিকশিত করবে।
প্রিন্সিপাল অফ পার্টনারশিপ, চার্টার ফর চেঞ্জ নীতিমালা ২০১৬ সালে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড হিউম্যানিটেরিয়ান সামিটে গ্রান্ড বার্গেনিং প্রতিশ্রম্নতি এবং ২০১৬ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত “নিউ ওয়ে অফ ওয়ার্কিং” সিদ্ধান্ত সমুহ ‘লোকালাইজেশন’ এর অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। যেহেতু "গ্রান্ড বার্গেনিং" একটি বিভিন্ন রাষ্ট্র, জাতিসংঘের কিছু অঙ্গসংস্থা,আন্তর্জাতিক সংস্থা সহ মোট ৬৭ জন প্রতিনিধি কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি ৫১টি প্রতিশ্রম্নতি সম্বলিত দলিল। যার সময়সীমা বিভিন্ন সময় কমিটির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৬ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। যা বর্তমানে গ্রান্ড—বার্গেনিং—৩.০। আমি মনে করি, এই সুযোগটা আমাদের হাতছাড়া করা যাবে না। গ্রান্ড—বার্গেনিং প্রতিশ্রম্নতি চার্টার ফর চেঞ্জ নীতিমালায় অনুস্বাক্ষরকারী এবং স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সিভিল সোসাইটি, স্থানীয় সরকার এর মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে নিজ নিজ আদি—দক্ষতা কাজে লাগিয়ে, সংগঠনের সক্ষমতাকে আরো যুগোপযোগী কিভাবে করা যায়, যাতে পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজেরাই স্থানীয়ভাবে মানবিক বিপর্যয়কালে সময়মত দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করতে পারি। আজকের মতবিনিময়ের মাধ্যমে দাতা সংস্থা সমুহের প্রতিশ্রম্নতি বিবেচনায় নিয়ে সকল অংশীজনের মতামতে উপর একটি স্থানীয় “লোকালাইজেশন এ্যাডভোকেসি চাহিদা ক্যানভাস” তৈরি করা। যাতে আমরা সুনির্দিষ্ট সময়ে অনুস্বাক্ষরকারী দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর প্রতিনিধিদের সাথে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে, ন্যায্য, মর্যাদাপূর্ণ অংশীদারী এবং মানসম্পন্ন তহবিল সংগ্রহের মধ্যে “লোকালাইজেশন” কর্মসূচিকে আরো বেগবান করতে পারি। ফলশ্রম্নতিতে দেশে বিভিন্ন মানবিক বিপর্যয় এবং দুর্যোগকালীন সময়ে দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করার জন্য স্থানীয়ভাবে টেকসই মানবিক সাড়াদান গোষ্ঠীর/সংগঠন সৃষ্টি হবে বলে আমার বিশ্বাস। পাশাপাশি দাতা সংস্থা /অনুদান সরবরাহকারী দেশ সমুহের মানবিক অনুদানের সিংহভাগ মানবিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের কাছে সরাসরি পৌঁছাবে।
প্রধান অতিথি মিজানুর রহমান পাল্স এর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন রোহিঙ্গা সংকটের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো, দিন দিন তাদের অনুদান কমে যাচ্ছে। এই সংকট নিয়ে আমাদের অনেক দিন থাকতে হবে। কারণ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখন কী চলছে, ভবিষ্যতে কী হবে তা বলা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় আমরা না পারছি রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করতে, না পারছি চুপ থাকতে। তাই এখন বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে কাজ করতে হবে।
বিশেষ অতিথি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম বলেন দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এখন কক্সবাজার অবস্থান করছেন, তারা কবে নিজ দেশের ফেরত যাবে তাও নিশ্চিত নয়। এর নেতিবাচক প্রভাবের শিকার এখন সমগ্র কক্সবাজার জেলাবাসী। রোহিঙ্গারা ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত তাদের নিয়ে একটি সুষ্ঠ পরিকল্পনা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি রোহিঙ্গা আগমনের ফলে পরিবেশগত ক্ষতি পুসিয়েন নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে।
সুশীলন এর এ্যাডভাইজার মুজিবুর রহমান বলেন দীর্ঘমেয়াদী রোহিঙ্গা সংকটের এই মুহূর্তে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকল বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য ‘লোকালাইজেশন’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
আলোচনা সভায় সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়ে বক্তব্য রাখেন ডেইলি স্টারের স্টাফ রিপোর্টার মোহাম্মদ আলী জিন্নাত, দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোটার এইচ এম এরশাদ, টিটিএন এর নির্বাহী তৌফিকুল ইসলাম লিপু, ব্র্যাক গ্রান্ড ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, পালস বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী কলিম, স্কাস এর চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা, এন.আর.সি এর জেলা প্রধান মাহদী, অক্সফ্যাম প্রতিনিধি, মাল্টিজার এর জেলা প্রধান সরদার মতিন, জুপজাপ এর প্রধান নির্বাহী মোঃ নুরুল আমিন, জেনাস এর প্রধান উপদেষ্টা আশিশ ধরসহ ৬৫টি স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভার সমাপনী বক্তব্যে বিশেষ অতিথি শিশির দত্ত বলেন, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে আরও ঐক্যবদ্ধভাবে মানবিক বিপর্যয়কালে এবং দেশের আর্থ—সামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা স্থানীয় সংস্থাগুলো শিকড় হিসেবে কাজ করছে। দাতা সংস্থাগুলো মানবিক সাহায্য দিয়ে চলে যাওয়ার পরেও স্থানীয় সংস্থা গুলো নিজ নিজ এলাকায় কেন্দ্র করে কাজ করে যায়। ফলে জবাবদিহিতার জায়গায় তারা আরো সংকল্পবদ্ধ, তাছাড়া এনজিও গুলোকে তাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য জনগণের সাথে প্রকল্পের বাইরে গিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। অত্র এলাকায় রোহিঙ্গা অবস্থান দীর্ঘ মেয়াদী হওয়ায় স্থানীয় সমাজ ব্যবস্থায় যে সকল নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে যা আগামীতে একটা বিপর্যয় হতে পারে। বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনগুলো সরকারের সাথে বসে আগামী বিপর্যয় কিভাবে মোকাবেলা করা যায় এবং ‘লোকালাইজেশন’ কর্মসূচিকে সামাজিকীকরনের মাধ্যমে একটি টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ইফতারের আয়োজনের মাধ্যমে আলোচনা সভা সমাপ্ত হয়।