রেজাউল করিম চৌধুরী:
লজ্জা! এটা ইউরোপ-আমেরিকার করদাতাদের অর্থের প্রতি খুব কমই সম্মানের। কিছু স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কক্সবাজারের ৪/৫ তারকা হোটেলে সেমিনারের সাথে নৈশভোজ বা ইফতার পার্টির আয়োজন করছেন। এমনকি ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, পুলড ফান্ড, স্থানীয়করণ ও শরণার্থী বিষয়ক বিভিন্ন ইস্যু’র নামে এ ধরনের নৈশভোজের আয়োজন করা হচ্ছে।
যেখানে তারা প্লেট প্রতি ১৫/২০ ডলার পরিশোধ করছে সেখানে আমরা প্রতিটি শরণার্থী পরিবারকে তাদের মৌলিক খাবার ও জীবনধারণের জন্য প্রতি মাসে মাত্র ১০ ডলার দিচ্ছি। আমাদের গবেষণায় দেখা যায় সহায়তার মাত্র এক চতুর্থাংশ সরাসরি শরণার্থী পরিবারগুলিতে যাচ্ছে। আমরা সাহায়তা কমানোর বিষয়ে বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করছি ঠিক, কিন্তু আমরা খুব কমই স্বচ্ছ এবং খুব কম কথাই বলছি ব্যবস্থাপনাগত খরচ কমানোর বিষয়ে। আমরা কি স্বার্থপর নই?
আমাদের বন্ধু নীতি নির্ধারক যারা আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে অর্থায়ন করছেন এবং সেইসব পার্টিগুলিতে যোগ দিচ্ছেন, এ বিষয়ে তাদের ভাবতে হবে এবং এই সেমিনার/সভাগুলোকে একটি পদ্ধতিগত একাডেমিক, প্রেরণামূলক এবং উৎপাদনশীলতার সংস্কৃতিতে পরিণত করতে হবে।
এই সেমিনার বা পাবলিক ইভেন্টগুলি কোন প্রকার স্টাডি /গবেষণা, দিকনির্দেশনা, মনোযোগ আকর্ষণ ছাড়া এবং কোন প্রকার সমস্যা উত্থাপন ও সমাধানের পরামর্শ ছাড়াই নিছক খাওয়া-দাওয়া এবং টকশো ইভেন্ট হওয়া উচিত নয়।
সিভিল সোসাইটি হল যুক্তিযুক্ত সমালোচনামূলক/সংকটপূর্ণ ইস্যুগুলোতে সোচ্চার হওয়া, কোনো প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সির পক্ষে পক্ষপাতমূলক কাজ করা বা দোসর হওয়া নয়। যে কোনো সংস্থা বিশেষ করে দাতা এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলিকে অবশ্যই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে যখন তাদের মৌলিক দায়িত্ব রয়েছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য নাগরিক সমাজ গড়ে তোলা।
কিছু এনজিও/সিএসও রয়েছে যারা কক্সবাজার বা ঢাকা উভয় স্থানেই সেমিনার বা ওয়েবিনারের মতো পাবলিক ইভেন্টের আয়োজন করে, তবে কোন ৪/৫ তারকা হোটেলে নয় বরং সুনির্দিষ্ট সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য যাতে সমাধান হয়।তারা সুযোগ সন্ধানী বা সুবিধাবাদী নয়
তারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া এবং সরকারী ও বেসরকারি উচ্চ-পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের দাবিকে সংগঠিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে। ইভেন্টের অন্তত দুই দিন আগে তারা সম্ভাব্য সকল অংশগ্রহণকারীদের কাছে প্রেজেন্টেশন স্লাইড এবং অবস্থান পত্রের ই-কপি পাঠায় এবং ইভেন্টে সমস্ত অংশগ্রহণকারীদের পুনরায় হার্ড কপি বিতরন করে। সকলের জ্ঞাতার্থে আগে থেকেই তারা সেগুলো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। ইভেন্টের পর সন্ধ্যার মধ্যেই তারা সম্ভাব্য সব গণমাধ্যমে বাংলা ও ইংরেজিতে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। সাধারণত,এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিগুলি স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের মিডিয়াগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে।
ইভেন্ট চলাকালীন তারা ভিডিও রেকর্ড করে,তারপর গুরুত্বপূর্ণ বক্তাদের বক্তব্যের দুই মিনিটের শর্টভিডিও তৈরি করে যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, অর্থাৎ ফেসবুক এবং X /টুইটারে বহুল প্রচারের জন্য পোস্ট করে।
ভোগবাদীতা এবং খাওয়া-দাওয়ায় সংস্কৃতির বিপরীতে এই সমস্ত পদ্ধতিগত এবং উৎপাদনশীলতার সংস্কৃতির জন্য, আপনার কোনও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই, কেবল আপনার সাধারণ জ্ঞান প্রয়োগ করুন, আপনার নিজের বিবেকের কাছে জবাবদিহিতা অনুভব করুন, করদাতারা যারা সহায়তা তহবিলের যোগান দিচ্ছেন এবং যারা জীবন দান করছেন যাদের জন্য এই অর্থ এসেছে তাদের প্রতি আপনার মূল্যবোধকে জাগ্রত করুন।
আমাদের/আপনাদের সবাইকে চিন্তা করতে হবে জনসাধারণের কাছে আমাদের এনজিও/সিএসও-দের গ্রহণযোগ্যতা এবং এই ব্যাপারে তাদের কী উপলব্ধি, তাদের কাছে আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার মাত্রা কতটুকু।
রেজাউল করিম চৌধুরী
নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ফাউন্ডেশন।