কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক সমুদ্রউপকূলে গড়ে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ শুটঁকি মাছ উৎপাদনের ৭০০টির বেশি মহাল-কারখানা। মহালে শ্রমিকের কাজ করেন ঘূর্ণিঝড়-জ্বলোচ্ছাস ও প্রাকৃতিক দৃযোগে বাস্তুচ্যুত হয়ে সেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেওয়া-জলবায়ূ উদ্বাস্তুদের অন্তত ৪৫ হাজার মানুষ।
শনিবার দুপুরে সেখানকার সুবিধাবঞ্চিত অতিদরিদ্র ১০০ জন শিশুকে ঈদের নতুন জামা তুলে দেয় প্রথম আলো বন্ধুসভা কক্সবাজারের সদস্যরা। স্থানীয় পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়াতে ‘ স্বপ্নজা ‘ স্কুলে শিশুদের হাতে বন্ধুসভার নতুন জামা তুলে দেন-পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিল এস এম আকতার কামাল ও প্রথম আলো কক্সবাজার আঞ্চলিক অফিস প্রধান ও বন্ধুসভার প্রধান উপদেষ্ঠা আব্দুল কুদ্দুস রানা।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রতিবছর দেশজুড়ে ‘ সহমর্মিতার ঈদ’ কর্মসূচি পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম আলো কক্সবাজার বন্ধুসভা ১০০ শিশুর মধ্যে নতুন জামা বিতরণ করে। এসময় শিশুদের মা-বাবারাও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্টানের শুরুতে উপস্থিত শিশুদের কাছে কাউন্সিলর আকতার কামাল জানতে চান- তোমারা কেউ ঈদের নতুন জামা কাপড় কিনেছো? শিশুরা সবাই তখন না না বলে চিৎকার দেয়। কয়েকজন শিশু বলে-তাদের বাবা জেলে- ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরেন। এখন হাতে টাকা নেই, তাই নতুন জামা কিনে দিতে পারছেন না।
আকতার কামাল বলেন, প্রথম আলো বন্ধুসভা এটা এনজিও না। প্রথম আলো দেশের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা। সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি প্রথম আলো সমাজের জন্য ভালো অনেক কিছু করে থাকে। আজকে তোমাদের জন্য ঈদের নতুন জামা নিয়ে এসেছে। তোমাদের বাবা মা নতুন জামা কিনে দিতে পারে নাই, কিন্তু প্রথম আলো বন্ধুসভা তোমাদের মনে রেখেছে।
নতুন জামা পেয়ে মহাখুশী নয়ন মণি। সে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। নতুন জামা বুকে জড়িয়ে হাসতে হাসতে নয়ন মণি বলে, ঈদের দিন নতুন জামা পরে সে সমুদ্রসৈকত ঘুরতে যাবে।
নয়ন মণির মা বেবী আকতার বলেন, গত ঈদেও তিনি মেয়েকে জামা কিনে দিতে পারেন নি। তাঁর স্বামী কাউসার পেশায় জেলে। ঘূর্ণিঝড়ে বসতবাড়ি হারিয়ে এক যুগ আগে তাঁরা মহেশখালীর মাতারবাড়ি থেকে এখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন।
নতুন জামা পেয়ে খুশি শিশু সাইমুম (১০) জানান, ঈদের দিন নতুন জামায় সে সৈকতে ঘোড়ার পিঠে চড়বে। তা মা সাবেকুন্নাহার জানান, তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে সাইমুন সবার ছোট। বন্ধুসভার নতুন জামা না পেলে সাইমুনের ঈদ আনন্দ মাটি হতো। সাবেকুন্নাহারের বাড়ি ছিল সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়াতে। ঘূর্ণিঝড়ে বসতবাড়ি সমুদ্রে বিলীন হলে এখানে নাজিরারটেক উপকূলে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন।
শুঁটকি পল্লির শিক্ষাবঞ্চিত হতদরিদ্র শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়াতে স্বপ্নজাল স্কুলটি গড়ে তোলেন মো. শাকির আলম নামে একজন কলেজ শিক্ষার্থী। ২০১৮ সালে প্রতিষ্টিত স্বপ্নজালে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ জন। আরও কয়েকজন কলেজ শিক্ষার্থী বিনাবেতনে শিশুদের পড়ান।
উপকূলের শিশুদের অভাব-সমস্যা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠার চিত্র তুলে ধরে স্বপ্নজালের পরিচালক শাকির আলম বলেন, জেলে পল্লীতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা দুই বছর আগেও শুঁটকি মহালে শ্রমিকের কাজ করতো। কারণ এই উপকূলে শিশুদের পড়াশোনার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও নেই। কাউন্সিলর আকতার কামাল স্বপ্নজালের শিশুদের পড়ালেখার বেঞ্চ ও বৈদ্যুতিক সংকট নিরসনের আশ্বাস দেন।
প্রথম আলো কক্সবাজার আঞ্চলিক কাযালয়ের প্রধান সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস রানা বলেন, বন্ধুসভার মাধ্যমে প্রথম আলো এসএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা, বিতর্ক উৎসব, গণিত উৎসব, বইমেলা, ফিজিক্স অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞানমেলা, প্রিয়শিক্ষক সংবর্ধনাসহ সামাজের জন্য মঙ্গলজনক কাজ গুলে করে থাকে। এরমধ্যে প্রতিবছর ঈদুল ফিতরের সময় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে নতুন জামা এবং দুর্গম এলাকার অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে ঈদসামগ্রী বিতরণ করে আসছে।
বন্ধুসভা কক্সবাজার জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম নাঈমের সঞ্চালনায় ঈদের নতুন জামা বিতরণ অনুষ্টানে বক্তব্য দেন, পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়া ম্যাজিক বোর্ড-স্কুলের পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা জিমরান মোহাম্মদ সায়েক, কক্সবাজার জেলা বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার, রেশমি সুলতানা, কক্সবাজার সিটি কলেজ বন্ধুসভার সভাপতি মো. আসিফ শাওয়াল, বন্ধুসভা কক্সবাজার সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি শফিকুল মোস্তফা আহিল প্রমুখ।