শাহীন মাহমুদ রাসেল :

কক্সবাজারের রামুর চাকমারকুল দারুল উলুম মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের মো. হারুনুর রশিদ আরমান (১২) নামে এক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ রয়েছে। সে সদরের ঝিলংজার পূর্ব খরুলিয়ার ডেইঙ্গা পাড়ার শফিউল হকের ৫ম সন্তান বলে জানা যায়। এঘটনায় নিখোঁজ আরমানের অভিভাবকরা কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নিখোঁজ ডায়েরী করলেও তাদের ধারণা তাকে কোনো চক্র অপহরণ করে থাকতে পারে।

জানা যায়- একই মাদ্রাসায় পড়ুয়া অপর এক শিক্ষার্থী ইমাম হোসেন (১৪) প্রকাশ শাহাদাত প্রকাশ শাহজাত প্রকাশ সাজ্জাতের সাথে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যাবার পরিকল্পনা করে। সে মতে তারা চলতি বছরের গত ৫ আগস্ট সন্ধায় মাদ্রাসায় যাবার কথা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু পালিয়ে যাবার ১৫ দিনে মাথায় ইমাম হোসেন ফিরে আসে নিজ বাড়ীতে। অন্যদিকে আরমান সেই থেকে নিখোঁজ রয়েছে।

আরও জানা যায়- ইমাম হোসেন ঘরে ফিরে এসে পুরোনা মাদ্রাসা ও নাম পরিবর্তন করে নতুন একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। ইমাম হোসেনকে এর আগের মাদ্রাসায় শাহাদাত ওরফে শাহাজাদ নামে ডাকা হতো। ওই মাদ্রাসার হারুন জদীদ নামে এক শিক্ষক তার নাম পরিবর্তন করে এই নাম রেখেছিলেন। কিন্তু ঘটনার পর নতুন মাদ্রাসায় গিয়ে জন্মসনদে থাকা ‘ইমাম হোসেন’ নামটি ব্যবহার করছে। সেই সাথে ইমাম হোসেন বাড়ী ফিরেই তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও সীমটি নষ্ট করে ফেলেছে বলে প্রতিবেদকের কাছে দাবী করেছে। তার এই কাজে সহযোগীতা করেছে পানেরছড়া মসজিদের ইমাম মান্নান।

এব্যাপারে জানতে ইমাম হোসেনের পিতা মো. হোছাইন ও ভাই রিদুয়ানের সাথে যোগাযোগ করা হলে হারুন নিখোঁজের ঘটনায় তাদের কোনো ধরণের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবী করেন। কিন্তু নিখোঁজের দিন এক সঙ্গে বের হওয়া এবং ফিরে এসে মোবাইল ও সীম নষ্ট করে ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তোর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।

এদিকে সন্দিগ্ধ ছাত্র ইমাম হোছাইন জানায়- ঘটনার দিন তারা দুজনে একসঙ্গে পালানোর কথা ছিলো ঠিক। কিন্তু শেষ সময়ে একসঙ্গে পালাতে পারেনি। সে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেও তার বন্ধু নিখোঁজ আরমান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দিকে চলে যেতে চেয়েছিলো এমনটি দাবী করে। ফলে ওইদিন থেকে আরমান কোথায় আছে সেটা সেও বলতে পারছে না বলে মুখ খোলেনি। এছাড়া সে আরও জানিয়েছে- চাকমারকুল মাদ্রাসায় ৪/৫ মাস আগে একটি চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আরমানকে চোর সন্দেহে কয়েকজন হুজুর বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেই জিজ্ঞাসাবাদের কারণে বিরক্ত হয়ে কিংবা কোনো হুজুরের রোষাণালে পড়ে থাকতে পারে কীনা সেটিও খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছে ইমাম হোসেন। এমনকি এই ব্যাপারটি চাকমারকুল মাদ্রাসার মুতামিম (প্রধান শিক্ষক) সিরাজুল ইসলাম সিকদার ও হেফজ বিভাগের প্রধান মুসলিম উদ্দিন অবগত আছেন বলেও দাবী করেছে সে।

এবিষয়ে জানতে চাকমারকুল মাদ্রাসাটির হেফজ বিভাগের প্রধান মুসলিম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে সঠিক তথ্য না দিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যাপক ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিপত্তির কথা উল্লেখ করে বলেন মাদ্রাসার মুহতামিম চেয়ারম্যানের ছোটো ভাই। সুতরাং তার কথার বাইরে কোনো বক্তব্য দেওয়ার এখতিয়ার কারওই নেই।

এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তথ্য দিতে গড়িমসি করতে থাকেন। বিস্তারিত তথ্য জানাতে তার আরও দুই দিন সময় লাগবে বলে দাবী করেন। এমনকি ছোটো খাটো কোনো প্রশ্নের উত্তরও তিনি এখন দিতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেন।

তবে তদন্তের দায়িত্ব প্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এস.আই বিভাষ চন্দ্র সাহা বলছেন- ঘটনার বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। পাশাপাশি এটি নিখোঁজ নাকি অপহরণ সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতাও কামনা করেছেন।