রশীদ আহমেদ চৌধুরী
আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের বাজেটে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার ব্যয়ের বিপরীতে ৫ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মূল্যস্ফীতির সার্বিক সূচক নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রত্যয়ে বাজেটের আকার বেশী বৃদ্ধি না করার পক্ষে মত দিয়েছেন নীতি নিধার্রক মহল। এ জন্য গত বাজেটের তুলনায় এ বাজেটের আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে মাত্র ৪.৭৩% শতাংশ। ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, ঘাটতির পরিমান বেশী হলে অর্থবছরের শেষে বাজেটে অনেক কাটসাট করতে হয়। যার ফলে বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। ৯৫ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক ঋন,অবশিষ্ট ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরিন উৎস থেকে সংগ্রহ করে ঘাটতি মেটানোর কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। সার্বিক মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬.৫% ও জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬.৭৫% শতাংশ। উচ্চমূল্যস্ফীতি, রিজার্ভের পরিমান হ্রাস, ডলার সংকট, আর্থিক খাতের শৃঙ্খলার অভাব ও অর্থ পাচার ইত্যাদির কারনে অর্থনীতিচ্যালেঞ্জের মুখে আছে।
বিগত অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হয়নি। যার ফলে সরকারী বেসরকারী বিনিয়োগ স্থবির হয়ে গেছে। কর্মসংস্থান সংকোচিত হওয়ার ফলে বেকারত্ব বেড়েছে যার প্রভাব পড়েছে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারে। শেষ প্রান্তিকে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। সুদসহ বৈদেশিক ঋনের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলার সংকট জটিলতা বাড়িয়েছে। রিজার্ভের পরিমান ১৫ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে এসেছে । কার্ব মার্কেট ও সরকারী রেটে গ্যাপ বড়ো হওয়ায় রেমিটেন্স প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে । বহুজাতিক কোম্পানী গুলি তাদের লভ্যাংশের টাকা উত্তোলন করতে পারছে না। বিদেশী বিমান সংস্থাগুলি একই কারনে মুনাফার ডলার নিজ দেশে নিতে না পারার কারনে টিকেট বিক্রিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
গত সপ্তাহে আইএমএফ এর চাপে টাকার অবমূল্যায়ন ৭.০০ টাকা করে নতুন রেট ধার্য করা হয়েছে ১১৭ টাকা। “স্মার্ট রেট” থেকে সরে এসে “ক্রলিং বেগ” রেট চালু করা হয়েছে।সুদের হার ৯/৬ থেকে সরে এসে বাজার ভিত্তিক সুদেহার প্রর্বতণ করা হয়েছে। যার ফলে আমদানি খরচ বৃদ্ধি পেয়ে মূল্যস্ফীতি আরেক দফা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ১২০ টাকার উপরে কেনা বেচা হচ্ছে। প্রনোদনা প্রথা রহিত করা হয়েছে। বৈদেশিক রেমিটেন্সের উপর করারোপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। উল্লেখিত কারনে সামগ্রিক অর্থ ব্যবস্থা বহুবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
অভ্যন্তরীন সম্পদ সংগ্রহ বিশেষ করে কর ও কর বর্হিভূত উৎস থেকে কাংখিত রেভিনিউ আহরণ করা গেলে এ সব সমস্যার কিছুটা সমাধা হতে পারে।
কর জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি করতে হবে। বাংলাদেশ কর জিডিপির অনুপাত ৯ শতাংশ, বিশে^র অনেক দেশের তুলনায় যা কম। কর জিডিপি ভারতে ১৯.৬৭%, নেপালে ২১.৫০%, পাকিস্তানে ১৪.৮৮%, ও শ্রীলঙ্কায় ১২.৭৪% শতাংশ । দেশে ১৭ কোটি লোকের মধ্যে ১ কোটি ১৬ লাখ লোক কর দেওয়ার সামর্থ্য রাখে । অথচ রিটার্ন জমা দেন মাত্র ২৫ লাখ লোক, টিনধারি লোকের সংখ্যা ৮০ লাখ। দেশের লোকের কর বিমূখতার অন্যতম কারন হচ্ছে , হয়রানীর ভয়, উচ্চকরহার, জটিল হিসাবপদ্ধতি, তথ্যের অপ্রতুলতা, কর ফাঁিকর প্রবনতা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব,সনাতন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি , দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ইত্যাদি।
রাজস্ব আহরনে উপরোক্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করে উচ্চমূল্যস্ফীতি হ্রাস ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে করহার হ্রাস করে কর নেটের আওতা বৃদ্ধি করতে হবে। রাজস্ব আহরনে চলমান ব্যবস্থাকে আমুল পরিবর্তন করতে হবে। রাজস্ব বোর্ডের প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। রাজস্ব খাতে উদ্বৃত্ত আয় নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়ন বাজেটে ঋন নির্ভরতা হ্রাস করতে হবে। কর ফাকিঁরোধ, ট্যাক্স হলিডে ও কর রেয়াত সীমিত করতে হবে।কর ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল পদ্ধতি প্রর্বতন। সকল মন্ত্রনালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
লেখক:
রশীদ আহমেদ চৌধুরী, আয়কর আইনজীবী