সিবিএন ডেস্ক:
সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে ৩৩ দিনের জিম্মি জীবন পার করে আসা এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিকের পরিবারে চলছে এখন উৎসবের আমেজ। তাদের খোঁজখবর নিতে বাসা-বাড়িতে ভিড় করছেন আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীরা। মঙ্গলবার (১৪ মে) নাবিকরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যান।
ওই জাহাজের চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খানের বাসা চট্টগ্রাম নগরীর কোতয়ালি থানাধীন নন্দন কানন এলাকায়। তাকে ফিরে পেয়ে দীর্ঘদিন পর আনন্দিত তার মা, স্ত্রী ও তিন মেয়ে। আতিক উল্লাহ খানের মা শাহনুর বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে দস্যুদের কবলে পড়ার পর থেকে আমি একটি রাতও ভালোভাবে ঘুমাতে পারিনি। কখন মুক্তি পাবে এ সংবাদ শোনার অপেক্ষায় ছিলাম। মুক্তি পাওয়ার পর আমাদের পরিবারে স্বস্তি ফিরেছে। ঈদের সময় আতিক দস্যুদের হাতে বন্দি ছিল। এবার আমাদের ঘরে ঈদের আনন্দ আসেনি। আমার ছেলে ফিরেছে। আত্মীয়-স্বজন তাকে দেখতে আসছে। আমাদের ঘরে ঈদের আনন্দ এসেছে।’
আতিক উল্লাহ খান বলেন, ‘ঈদের সময় আমরা দস্যুদের কবলে জিম্মি ছিলাম। শুধু দস্যুদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেছি। এতটুকুই ছিল আমাদের ঈদ। দেশের মাটিতে নামার পর স্বজনদের কাছে পেয়ে এখন অনেক বেশি ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে, আপনজনদের কাছে পাওয়ার পর জিম্মিদশার দুর্বিষহ দিনগুলোর স্মৃতি এবার ভুলতে পারবো।’
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের অয়েলার মো. শামসুদ্দিন আনোয়ারা উপজেলার মধ্যবন্দর সেন্টার এলাকার মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে। তাকে কাছে পেয়ে মহাখুশি তিন মেয়ে।
শামসুদ্দিনের স্ত্রী রিমা আক্তার বলেন, ‘দস্যুদের কবলে জিম্মিদশার ৩৩টি দিন আমাদের পরিবারে কীভাবে কেটেছে তা বলে বোঝানো যাবে না। আমাদের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিও শামসুদ্দিন। জলদস্যুদের কবল থেকে কখন মুক্তি পাবে এ প্রতীক্ষায় ছিলাম।’
শামসুদ্দিন বলেন, ‘জিম্মি দশার দিনগুলো কীভাবে কেটেছে তা বলে বোঝানো যাবে না। প্রতিটি দিন মনে হয়েছিল একেকটি বছর। আমাদের ওপর অনেক মানসিক ঝক্কি-ঝামেলা গেছে। দস্যুদের কবল থেকে ফিরে আসতে পারবো তা কখনও ভাবিনি। যেদিন দস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছিলাম তখন মনে হয়েছে, এ যেন দ্বিতীয় জীবন পেয়েছি। দেশে আসার পর প্রিয়জনদের কাছে পেয়ে অনেক বেশি ভালো লাগছে।’
ফিরে আসা ২৩ নাবিক হলেন- এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, এবি পদের মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসাইন, জয় মাহমুদ, ওএস পদের মো. নাজমুল হক, অয়েলার পদের আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশাররফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস পদের মোহাম্মদ নুর উদ্দিন ও ফিটার মোহাম্মদ সালেহ আহমদ।
মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকাল ৪টায় এমভি জাহান মণি-৩ নামে একটি লাইটার জাহাজ আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিককে কুতুবদিয়া উপকূল থেকে নিয়ে আসে। লাইটার জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল জেটিতে ভেড়ে। এরপর বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে নাবিকরা একে একে জাহাজ থেকে নেমে আসেন। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মালিক পক্ষ কেএসআরএম তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়। নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল জেটি চত্বরে আয়োজন করা হয় এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
এর আগে সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যা ৬টায় এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপকূলে নোঙর করে। গত ৩০ এপ্রিল ভোর ৪টার দিকে জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর থেকে ৫৬ হাজার মেট্রিক টন চুনাপাথর নিয়ে দেশের পথে রওনা দেয়।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি কেএসআরএম গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিং সূত্র জানিয়েছে, এমভি আবদুল্লাহ গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ১৯ মার্চ সেটির সংযুক্ত আরব আমিরাতের হারমিয়া বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি। প্রায় এক মাস পর গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় মুক্তিপণের বিনিময়ে জাহাজসহ ২৩ নাবিক মুক্তি পায়।