মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
দেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, বিচারপ্রার্থী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সব ধরনের সেবা ও সুবিচার নিশ্চিত করতে কক্সবাজারে "বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট" করা হচ্ছে। এ ইনষ্ঠিটিউটকে এমনভাবে গড়ে তোলা হবে, যাতে সারাদেশের নাগরিকেরা সহজে এর সুফল ভোগ করতে পারে।
শুক্রবার (১৭ মে) বিকেলে কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছরা ইউনিয়নের শীলখালীতে "বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট" নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শনকালে তিনি একথা বলেন। নামমাত্র অর্থে স্বল্প সময়ে জমিটি সুপ্রীম কোর্টের নামে বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভূমি উন্নয়ন সহ সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর সফল বাস্তবায়নের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন।
পরিদর্শনকালে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, আপীল বিভাগের বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলাম, আপীল বিভাগের সদ্য সাবেক বিচারপতি বোরহানউদ্দিন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নাঈমা হায়দার, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ হাবিবুল গণি, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জে.বি.এম হাসান, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদ, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ ইকবাল কবির, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস.এম কুদ্দুস জামান, সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোঃ গোলাম রব্বানী, কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুনসী মোঃ মশিয়ার রহমান, আপীল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, প্রধান বিচারপতির রিসার্চ এন্ড রেফারেন্স অফিসার মুহাম্মদ সরওয়ার আলম ও প্রধান বিচারপতির একান্ত সচিব হাসান মোঃ আরিফুর রহমান, কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহজাহান, সিনিয়র সহকারী জজ আবদুল মান্নান মারুফ, টেকনাফের ইউএনও প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সস্ত্রীক শুক্রবার (১৭ মে) বেলা একটার দিকে সড়কপথে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পৌঁছেন। রাতে তিনি কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধিদলের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। এসময় আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং প্রবাল উপহার দেন।
একইদিন রাতে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট বাস্তবায়ন কমিটির এক সভা কমিটির সভাপতি প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিটির সদস্য সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, আপীল বিভাগের বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলাম, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নাঈমা হায়দার, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জে.বি.এম হাসান, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদ, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ ইকবাল কবির, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস.এম কুদ্দুস জামান, সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও কমিটির সাচিবিক সহায়তা প্রদানকারী কর্মকর্তা মোঃ গোলাম রব্বানী এবং কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ এবং সমন্বয়কারী কর্মকর্তা মুনসী আব্দুল মজিদ অংশ নেন। কমিটির সভায় বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে। রাতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের বাসভবনে প্রধান বিচারপতি সহ সকলের সম্মানে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজে যোগ দেন।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার, সাবেক সভাপতি ও জিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মমতাজ আহমদ, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুলতানুল আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ, সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট নুরুল মোস্তফা মানিক, নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট আমির হোসাইন, সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ, এপিপি অ্যাডভোকেট খালেক নেওয়াজ, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী, সমিতির আপ্যায়ন, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেফাউল করিম রানা, নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল খালেক, অ্যাডভোকেট জোবাইরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ফয়সাল মোশারফ ফয়েজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম জানিয়েছেন, শনিবার (১৮ মে) সকালে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার "ন্যায়কুঞ্জ" এর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করবেন। একইদিন সকালে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে কক্সবাজার জেলার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি অভিভাষণ প্রদান করবেন। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, কক্সবাজার সফরে আসা অন্যান্য বিচারপতিবৃন্দ, সুপ্রীম কোর্ট প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ২ দিনের সফর শেষে একইদিন বিকেল ৫ টা ১০ মিনিটে বিমানযোগে কক্সবাজার ত্যাগ করার কথা রয়েছে।
একসাথে প্রধান বিচারপতি সহ ১৩ জন বিচারপতি, রেজিস্ট্রার জেনারেল সহ ৫ জন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার একত্রে কোন মফস্বল জেলা সফর দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটা নতুন রেকর্ড বলে জানিয়েছেন বিশ্বস্ত সুত্র।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছরা ইউনিয়নের উত্তর শীলখালী সমুদ্র সৈকত ঘেষা মেরিন ড্রাইভ রোডের পাশে “বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট” স্থাপনের জন্য ৩ একর ৩৪ শতক অকৃষি খাসজমি মাত্র এক লক্ষ এক টাকা নামমাত্র সেলামী নিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল এর অনুকূলে দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। বন্দোবস্ত পাওয়া জমিতে নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীতে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একাধিক বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেখানে থাকবে, বিচার সংক্রান্ত গবেষণার অবারিত সুযোগ। থাকবে গবেষনাধর্মী বিচারিক তথ্য উপাত্ত। থাকবে প্রাচীনকালের বিচার ব্যবস্থার নিদর্শন ও ইতিহাস সমৃদ্ধ মিউজিয়াম। সমৃদ্ধ লাইব্রেরী। বিভিন্ন দেশের গবেষকদের গবেষণায় অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা। থাকবে, গবেষণায় নিয়োজিতদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা, রিসোর্ট ও রেস্ট হাউস। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বমানের একটি ইনস্টিটিউট হিসাবে গড়ে তোলার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন অত্যাধুনিক বিচারিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলোর কার্যক্রমের খোঁজ খবর নেওয়া নেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ কার্যক্রমের জন্য আধুনিক প্ল্যান, ডিজাইন করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামোও সৃজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সুত্র।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটটি নির্মিত হলে এটি হবে দেশের প্রথম এবং একমাত্র আইন, আদালত ও বিচার বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের রাজধানীর বাইরে এটি হবে প্রথম একটি আধুনিক স্থাপনা।