জালাল আহমদ, ঢাবি প্রতিনিধি:
বর্তমানে দেশে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যাকসেসরিজ এবং লাইটিং পণ্যের ব্যবহারে জনগণের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি আছে।তাই সরকার কে নিরাপদ ও মানসম্মত বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ব্যবহারে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
আজ শনিবার (১৮ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি বাংলাদেশের ‘ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যাকসেসরিজ এবং লাইটিং পণ্য’-এর ওপর মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশের (এমডব্লিউবি) দেশব্যাপী পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য-উপাত্ত ধরা পড়ে।
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন মার্কেটিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও এমডব্লিউবির সহপ্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান এবং অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হোসাইন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ বি এম শহীদুল ইসলাম ও বিভাগটির অধ্যাপক রাজিয়া বেগম।
সারাদেশে ১৮ বছর থেকে ৬৫ বছর বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এই গবেষণা চালানো হয়।অধিকাংশ মানুষ সস্তা দামে জিনিস কিনতে চায়। তারপর দেখে জিনিসের ওয়ারেন্টি এবং সর্বশেষ দেখে বিল ।
এমডব্লিউবির প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণার আওতায় আনা পণ্যগুলো ছিল- সুইচ, সকেট, হোল্ডার, মাল্টি-প্ল্যাগ, সার্কিট ব্রেকার, মিটার এবং বিভিন্ন হালকা পণ্য যেমন : এলইডি লাক্স, এলইডি টিউব, এলইডি প্যানেল, ব্র্যাকেট এলইডি, জিএলএস, এনার্জি এফিশিয়েন্সি বাল্ব, ইমার্জেন্সি লাইটিং অপশনস ইত্যাদি।বাজারের ৪৭ শতাংশই বেনামি ব্র্যান্ডের দখলে রয়েছে, যেগুলো স্থানীয়ভাবে তৈরি করা বা নিম্নমানের নকল অথবা কর ফাঁকি দিয়ে অনুমোদনহীনভাবে আমদানিকৃত। বাজারের বাকি ৫৩ শতাংশ পণ্য বিভিন্ন অনুমোদিত ব্র্যান্ড বা কোম্পানি তৈরি করে। এই ব্র্যান্ডেড পণ্যের মধ্যে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যাকসেসরিজের প্রায় ৯৪ শতাংশ ও লাইটিং পণ্যের ৮৯ দশমিক ০১ শতাংশ বাজারই দেশি কোম্পানির দখলে রয়েছে এবং দিন দিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গবেষণায় দেখা যায়, দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে সুপারস্টার গ্রুপ উভয় প্রকার পণ্যের ক্ষেত্রে বাজারে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। গবেষণা অনুসারে, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যাকসেসরিজ ব্র্যান্ডেড পণ্যের মার্কেট শেয়ারে সুপার স্টার ২৯ শতাংশ, ওয়ালটন ১৭ শতাংশ, ক্লিক ১৭ শতাংশ, এনার্জি প্যাক ৯ শতাংশ, ওসাকা ৪ শতাংশ এবং ব্লিঙ্ক, এমইপি ও লাক্সারি প্রত্যেকে ৩ শতাংশ করে বাজার দখল করে আছে। অন্যদিকে ব্র্যান্ডেড লাইটিং পণ্যের মার্কেট শেয়ারে সুপার স্টার ২৫.৫৯ শতাংশ, ক্লিক ১৩ শতাংশ, ওয়ালটন ১২ শতাংশ, ট্রান্সটেক ১০ শতাংশ, এনার্জি প্যাক ৮ শতাংশ এবং ফিলিপস ৭ শতাংশ বাজার দখল করে আছে। এই শিল্পের অগ্রগতির পেছনে মূলত গত ২৫ বছরে ব্যাপক বিদ্যুতায়ন, অব্যাহত জিডিপি প্রবৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান আয়, দ্রুত ও পরিকল্পিত নগরায়ণ, গ্রামীণ উন্নয়ন এবং সরকারের গৃহীত সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ামক হিসাবে কাজ করেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, এটি একটি বড় এবং অপার সম্ভাবনাময় শিল্প। বর্তমানে দেশজুড়ে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার খুচরা বিক্রেতা এবং ২৫০০ উদ্যোক্তাসহ মোট ৫ লাখেরও বেশি মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। দুই ক্যাটাগরির পণ্যের সম্মিলিত বাজার আকার ৬,০০০+- ৫০০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যাকসেসরিজ পণ্যের বাজার ৩,৩০০+- ২৭৫ কোটি এবং লাইটিং পণ্যের বাজার ২,৭০০+- ২২৫ কোটি টাকা। আশাব্যাঞ্জক তথ্য হলো- উভয় পণ্যের বাজার গত দুই দশক ধরে অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যাকসেসরিজ ও লাইটিং পণ্যের গড় প্রবৃদ্ধির হার যথাক্রমে ১০%+- ২% এবং ১৩%+- ২%। যদি আগামী দিনগুলোতে এই প্রবৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকে তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই খাতটি একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বড় খাত হিসাবে আবির্ভূত হবে।
গবেষণা বলছে, এই বাজারের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- মোট মার্কেট শেয়ারের প্রায় অর্ধেক নন ব্র্যান্ডেড অর্থাৎ নিম্নমানের নকল ও অনুমোদনবিহীন পণ্য দখল করে আছে। যেহেতু দেশীয় কোম্পানিগুলোর প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেশি, তাই আগামী দিনগুলোতে দেশীয় কোম্পানিগুলো বাজারে আরও বেশি আধিপত্য বিস্তার করবে।
সার্বিক বিষয়ে সুপারিশ হিসেবে গবেষণায় বলা হয়, দুর্দান্ত সম্ভাবনাময় এই শিল্পের প্রবৃদ্ধির জন্য গ্রে-মার্কেটের কার্যক্রম হ্রাসে সরকারের তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারের বিদ্যমান ট্যাক্স পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন করতে হবে যাতে কোম্পানিগুলো কম ব্যয়ে পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করতে পারে। পাশাপাশি এ সমস্ত শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ গড়ে তোলার জন্য সরকার এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে নিরাপদ ও মানসম্মত বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
খবর পড়ুন
নাফনদী থেকে বাংলাদেশি ২ চাকমাকে অপহরণের অভিযোগ
লামায় মোটর সাইকেল দূর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যু