মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
# বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে কঠোরহস্তে দমন করা হবে : রিটার্নিং অফিসার
# চকরিয়ায় ১১৪ কেন্দ্রে ভোটার ৩৬১১০৩
# পেকুয়ায় ৪৪ কেন্দ্রে ভোটার ১৩৫৩০০
# ঈদগাঁও তে ৩৬ কেন্দ্রে ভোটার ৮৮৭৬০
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আজ কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া ও ঈদগাঁও উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য প্রশাসন প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে কাজ করছে। পর্যাপ্ত আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ভোট কেন্দ্র গুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল থেকে ভ্রাম্যমাণ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা উপজেলা তিনটির সর্বত্র টহল দিচ্ছেন। তিনটি উপজেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ৮ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়া, প্রতিটি উপজেলা সদরে একাধিক স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখা হয়েছে। ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সহ ভোট গ্রহণের জন্য আনুষাঙ্গিক প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গতকালই কেন্দ্র গুলোতে পাঠানো হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ তিনটি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ রিটার্নিং অফিসার এবং তিনটি উপজেলার ইউএনও-গণ নিজ নিজ উপজেলার সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ তিনটি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অপরাধের বিচার করতে প্রত্যেক উপজেলায় একজন করে ৩ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাসম্পন্ন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ হলেন-চকরিয়া উপজেলায় চকরিয়া চৌকি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাহিদ হোসাইন, পেকুয়া উপজেলায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম এবং ঈদগাঁও উপজেলায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদ। গত ১৯ মে থেকে আগামী ২৩ মে পর্যন্ত একটানা ৫ দিন দায়িত্বপ্রাপ্ত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ নিজ নিজ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ নির্বাচনী অপরাধ সমুহ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার করবেন।
এ তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, অবাধ, সুষ্ঠু, ভীতিহীন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য প্রশাসন প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়েছে। ভোট গ্রহণকালে কেউ বা কোন পক্ষ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে। তিনি আরো বলেন, শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় কোন শিথিলতা দেখানোর সুযোগ নেই। প্রতিটি উপজেলায় ইউএনও এর কার্যালয়ে আইনশৃংখলা সমন্বয় সেল সংক্রান্ত কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা :
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ১১৪ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ৩ লক্ষ ৬১ হাজার ১০৩ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে, পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৯৪ হাজার ৩৭ জন। মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৬৭ হাজার ৬৬ জন। ১১৪ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ (বুথ) রয়েছে ৭৬৬ টি। চকরিয়া উপজেলার ১১৪ টি ভোট কেন্দ্রে ১১৪ জন প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, আপদকালীন প্রয়োজনে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া আরো ১২ জন প্রিজাইডিং অফিসারকে উপজেলা সদরে স্টেনবাই রাখা হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চকরিয়া উপজেলায় ভোটার ছিলো ৩ লক্ষ ৫৩ হাজার ২৫২ জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তুলনায় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট বেড়েছে ৭ হাজার ৮৫১ জন। ৫০৩'৭৮ বর্গ কি:মি: আয়তনের পেকুয়া উপজেলায় ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভোটার সংখ্যার দিক থেকে কক্সবাজার জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে চকরিয়া উপজেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটার রয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন সহ মোট ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন-বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী (দোয়াত কলম), সাবেক এমপি জাফর আলম (ঘোড়া), আবদুল্লাহ আল হাসান সাকিব (আনারস) ও বদিউল আলম (মোটর সাইকেল)। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন- মকছুদুল হক ছুট্টো-(বই), মহসিন বাবুল (টিউবওয়েল), তপন কান্তি দাশ (টিয়া পাখি), বেলাল উদ্দিন শান্ত (তালা), নুরুল আমিন (চশমা), মুবিনুল ইসলাম (উড়োজাহাজ)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন-বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন হক জেসি চৌধুরী (কলস), সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়া বেগম শম্পা (ফুটবল) ও জাহানারা পারভীন (হাঁস)।
পেকুয়া উপজেলা :
পেকুয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ৪৪ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৩০০ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে, পুরুষ ভোটার ৭৩ হাজার ৯৯৪ জন। মহিলা ভোটার ৬১ হাজার ৩০৬ জন। ৪৪ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ (বুথ) রয়েছে ৩১৮ টি।
তারমধ্যে, স্থায়ী বুথ ২৯৭টি এবং অস্থায়ী বুথ ২১টি। এই উপজেলার ৪৪ টি ভোট কেন্দ্রে ৪৪ জন প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, আপদকালীন প্রয়োজনে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া আরো ৫ জন প্রিজাইডিং অফিসারকে উপজেলা সদরে স্টেনবাই রাখা হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পেকুয়া উপজেলায় ভোটার ছিলো ১ লক্ষ ৩৩ হাজার জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তুলনায় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট বেড়েছে ২ হাজার ৩০০ জন। ১৩৯'৬৮ বর্গ কি:মি: আয়তনের পেকুয়া উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলাকে বিভক্ত করে পেকুয়াকে পৃথক উপজেলায় রূপান্তরিত করা হয় ২০০২ সালের ২৩ এপ্রিল। তাই দেশের জন্য চলমান নির্বাচন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হলেও পেকুয়ার জন্য এটি হবে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।
পেকুয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন সহ মোট ১৩জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন-নিরাপদ পেকুয়া গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় আর পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে পেকুয়ার সর্বত্র চষে বেড়ানো, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ড. আশরাফুল ইসলাম সজীব (প্রতীক-দোয়াত কমল), রোমানা আকতার (প্রতীক-আনারস), বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত শাফায়েত আজিজ রাজু (প্রতীক-ঘোড়া), এস. এম গিয়াস উদ্দিন (প্রতীক-টেলিফোন) এবং আবুল কাশেম (প্রতীক-মোটর সাইকেল)। অবশ্য টেলিফোন প্রতীকের প্রার্থী গিয়াসউদ্দিন দোয়াতকলম প্রতীকের প্রাার্থী ড. আশরাফুল ইসলাম সজীবকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন- আজিজুল হক (প্রতীক-টিউবওয়েল), নাছির উদ্দিন বাদশাহ (প্রতীক-মাইক), মমতাজুল ইসলাম (প্রতীক-চশমা), মাহবুল করিম (প্রতীক-তালা) এবং শাহাব উদ্দিন জারদারী (প্রতীক-উড়োজাহাজ)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন- উম্মে কুলসুম মিনু (প্রতীক-ফুটবল), ইয়াসমিন সুলতানা (প্রতীক-কলস) এবং রাজিয়া সোলতানা (প্রতীক-প্রজাপতি)।
ঈদগাঁও উপজেলা :
ঈদগাঁও উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ৩৬ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ৮৮ হাজার ৭৬০ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে, পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ২৪৮ জন। মহিলা ভোটার ৪০ হাজার ৫১২ জন। ৩৬ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ (বুথ) রয়েছে ২৬৮ টি।
তারমধ্যে, স্থায়ী বুথ ২৫৯টি এবং অস্থায়ী বুথ ৯টি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঈদগাঁও উপজেলায় ভোটার ছিলো ৮৭ হাজার ৭৩৭ জন। এই উপজেলার ৩৬ টি ভোট কেন্দ্রে ৪৬ জন প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, আপদকালীন প্রয়োজনে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া আরো ৪ জন প্রিজাইডিং অফিসারকে উপজেলা সদরে স্টেনবাই রাখা হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তুলনায় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার বেড়েছে এক হাজার ২৩ জন। ১১৯'৬৬ বর্গ কিলোমিটারের ঈদগাঁও উপজেলায় ৫টি ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ঈদগাঁও কক্সবাজার জেলার নবম উপজেলা। বৃহত্তর কক্সবাজার সদর উপজেলাকে বিভক্ত করে ২০২১ সালের ২৬ জুলাই ঈদগাঁওকে পৃথক উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। তাই দেশের জন্য চলমান নির্বাচন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হলেও ঈদগাঁও এর জন্য এটি হবে প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।
ঈদগাঁও উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন সহ মোট ১৩জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন-আবু তালেব (প্রতীক-টেলিফোন), কুতুবউদ্দিন চৌধুরী (প্রতীক-দোয়াতকলম), নুরুল কবির (প্রতীক-ঘোড়া), সেলিম আকবর (প্রতীক-আনারস) এবং শামসুল আলম (প্রতীক-মটর সাইকেল)। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন- আহমদ করিম (প্রতীক-চশমা), বোরহান উদ্দিন মাহমুদ (প্রতীক-তালা) এবং আরিফ মিয়া (প্রতীক-টিউবওয়েল)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন-হামিদা তাহের (প্রতীক-হাঁস), রেহেনা আক্তার (প্রতীক-ফুটবল), কাওসার জাহান (প্রতীক-কলস), মেহেনুর আক্তার পাখি (প্রতীক-প্রজাপতি) এবং শাহেনা আক্তার লাকী (প্রতীক-পদ্মফুল)।