রশিদ আহমদ চৌধুরী
সম্ভাব্য সকল কৌশলী পদক্ষেপ নেয়া সত্বেও রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞ জনেরা মনে করছেন- বর্তমান রিজার্ভের মজুদ আশংকাজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে। প্রায় ২ বছর আগে থেকে শুরু হওয়া এ সংকট কোনভাবে কাটছে না।
আকু (এশিয়ান ক্লিয়ারিং হাউস) এর গত ২ মাস মার্চ, এপ্রিল/২০২৪ এর বিল পরিশোধের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ কমে ২৩.৭৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আইএমএফ এর হিসাব পদ্ধতি
বিপিএস-৬ অনুসারে রিজার্ভের পরিমান ১৮.৩২ বিলিয়ন ডলার। তাই প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে নেট দায়হীন অর্থ্যাত ব্যবহার যোগ্য রিজার্ভের পরিমান হচ্ছে ১৩ বিলিয়ন ডলার। আমদানী লক্ষ্যনীয় মাত্রায় নিয়ন্ত্রনের পরও প্রতি মাসে বিল পরিশোধের জন্য গড়ে ৫.০০ বিলিয়ন ডলার দরকার। ফলে
নীট রিজার্ভের পরিমান দিয়ে ৩ মাসের আমদানী বিল পরিশোধ করা যায় না।
সামষ্টিক অর্থ নীতির স্থিতিশীলতার জন্য রিজার্ভের ভালো স্থিতি থাকা জরুরী। এখন রিজার্ভ যে লেভেলে নেমে এসেছে তা যথেষ্ট শংকার কারন। এ রিজার্ভ দিয়ে ৩ মাসের আমদানী দায় মেটানো সম্ভব নয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতের রিজার্ভের পরিমান ১২ মাসের আমদানী বিল পরিশোধের সমান।
অথচ আমাদের দেশে ৩ মাসের আমদানী বিল পরিশোধের সমান রিজার্ভ নেই। আর এ কারনে শংকার জায়গা তৈরি হয়েছে। আমাদের দেশ আমদানী নির্ভর দেশ। এখানে খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে
তৈল,গ্যাস, শিল্পের কাচাঁমাল সহ মধ্যবর্তী পন্য সবকিছু বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানী হ্রাস করা হলে তা উৎপাদন, বন্টন, ভোগ ও কর্মসংস্থানসহ সব জায়গাতে অভিঘাত দেখা দেয়। যার ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে যায়। বাংলাদেশের অনুরোধে আই এম এফ রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলার হ্রাস করেছে।
২০২১ সালে রিজার্ভের পরিমান ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। এখন তা দাড়িয়েছে ২৩.৭৭ বিলিয়ন ডলার। ২ থেকে ২.৫ বছরের ব্যবধানে রিজার্ভের পরিমান অর্ধেকে নেমে এসেছে। ডলার বিনিময় হার নির্ধারনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক স্মার্ট পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে “ক্রলিং পেগ ” পদ্ধতি চালু করছে। এ পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট সীমায় ডলার রেট উঠানামা করবে। এবং তা হবে ধীরে ধীরে ।
যার ফলে ১১০ টাকা থেকে এক লাফে টাকা অবমূল্যজনিত হয়ে ১১৮ টাকায় ধার্য্য হয়। আশা করা হয়েছিল কার্ব মার্কেটে ১১৮ টাকার ১,২ টাকা বেশিতে ডলার কেনাবেচা হবে অথচ বাস্তবে দেখা গেলো তা ১২৫ টাকায় কেনা বেচা হচ্ছে। কার্ব মার্কেট বাংলাদেশের ব্যাংকের নির্দেশনায় বাইরে গিয়ে ডলার কেনা বেচা করছে।
সাধারনত রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়- রপ্তানি আয়, প্রবাসী রেমিটেন্স, এফডিআই, বৈদেশিক ঋন ও গ্রান্টে। আমাদের দেশে রপ্তানী খাতের শিল্পের কাচাঁমাল আমদানী বাবদ মূল এলসির ৪০-৪৫% ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে দেশের বাইলে চলে যায়। ডলার দাম বৃদ্ধি পেলেও রপ্তানীকারকের ঘরে আশানুরুপ ডলারের আগমন ঘটে না। এজন্য এখাত যতটুকু বর্ধিত অর্থের আগমন অনুমান করা হয়েছিল সে পরিমান দাড়ায়নি। “ক্রলিং পেগ ” ঘোষনার পরও ডলারের অফিসিয়াল রেট ও কার্ব মার্কেট রেটে
ব্যবধান না কমে বরং উল্টো আরও ব্যাপকভাবে বড় হয়েছে। প্রবাসী রেমিটেন্স আয়ে ও আশানুরুপ সাড়া ফেলেনি। ব্যাংক চ্যানেলে টাকা পাঠাতে প্রবাসীরা ভরসা পাচ্ছে না। কারন ঋন খেলাপী ও অর্থ
পাচারের কারনে ব্যাংকগুলোর লিকুইডিটি আশংকাজনক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। চেক উপস্থাপন করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা যাচ্ছে না। এক শাখা থেকে আরেক শাখায় আমানতকারীরা ঘুরাঘুরি করছে।
এফডিআই আশানুরুপ হয়নি। তাছাড়া ডলার সংকটের কারনে বিদেশী কোম্পানীর মুনাফার টাকা নিজ দেশে ফেরৎ নিতে পারছে না।যা নতুন এফডিআই আসার পথে বাধার কারন হয়েছে।
আমাদের দেশে অনেক ব্যক্তিখাতের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান বিদেশী লোকজন কাজ করে। তাদের বেতন ভাতা বাবদ বড়ো অংকের ডলার দেশের বাইরে চলে যায়। অথচ ওখানে দেশীয় লোকবল নিয়োগ করা হলে বৈদেশীক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। দেশবাসী জানে কারা দেশের বাইরে অর্থ পাচার করছে।
সরকার এ ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নিলে সে টাকা ফেরৎ আনা সম্ভব। রেভিনিউ বৃদ্ধি করে সরকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস করে, গুরুত্বহীন প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ না দিয়ে এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফলাফল পাবার আশা করা
যায়।
লেখক
রশিদ আহমদ চৌধুরী
আয়কর আইনজীবি