মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

# সেন্টমার্টিনে ভোট গ্রহণ স্থগিত
# রামুতে ৬৪ কেন্দ্রে ভোটার ১৮৬৯৫১
# উখিয়ায় ৬২ কেন্দ্রে ভোটার ১৫১৫৬৪
# টেকনাফে ৬০ কেন্দ্রে ভোটার ১৮০৪২০

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে আজ বুধবার কক্সবাজারের রামু, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবাহাওয়ার কারণে টেকনাফের সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে কর্মকর্তারা ভোট গ্রহণের জন্য সেন্টমার্টিন যেতে নাপারায় সেখানে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছে ৩ হাজার ৭১৩ জন।

এদিকে, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য প্রশাসন প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে কাজ করছে। পর্যাপ্ত আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ভোট কেন্দ্র গুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল থেকে ভ্রাম্যমাণ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা উপজেলা তিনটির সর্বত্র টহল দিচ্ছেন। তিনটি উপজেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ৮ প্লাটুন সদস্য এবং সেন্টামর্টিনে কোস্ট গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে।

এছাড়া, প্রতিটি উপজেলা সদরে একাধিক স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখা হয়েছে। ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সহ ভোট গ্রহণের জন্য আনুষাঙ্গিক প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গতকালই কেন্দ্র গুলোতে পাঠানো হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ তিনটি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী রিটার্নিং অফিসার এবং তিনটি উপজেলার উপজেলা নির্বাচন অফিসারগণ নিজ নিজ উপজেলার সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এ তিনটি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অপরাধের বিচার করতে প্রত্যেক উপজেলায় একজন করে ৩ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্বপালনকারী প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাসম্পন্ন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ হলেন-উখিয়া উপজেলায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহম্মদ খোন্দকার, রামু উপজেলায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গা, টেকনাফ উপজেলায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা সাত্তার। গত ২৭ মে থেকে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত একটানা ৫ দিন দায়িত্বপ্রাপ্ত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ নিজ নিজ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করবেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটগণ নির্বাচনী অপরাধ সমুহ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার করবেন।এছাড়া তিনটি উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে একজন করে এবং টেকনাফ পৌরসভায় আরো ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।

এ তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী জানিয়েছেন, অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, ভীতিহীন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য প্রশাসন প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়েছে। ভোট গ্রহণকালে কেউ বা কোন পক্ষ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা কঠোরহস্তে দমন করা হবে। তিনি আরো বলেন, শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় কোন শিথিলতা দেখানোর সুযোগ নেই। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ৪ টি মোবাইল নম্বর দিয়ে আইনশৃংখলা সমন্বয় সেল খোলা হয়েছে। একইভাবে প্রতিটি উপজেলায় ইউএনও এর কার্যালয়ে আইনশৃংখলা সমন্বয় সেল সংক্রান্ত কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একজন করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রতিটি উপজেলায় সমন্বয়কারী হিসাবে সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করছেন। আজকের নির্বাচনের মাধ্যমে কক্সবাজারের ৯টি উপজেলার প্রত্যেকটিতে উপজেলা নির্বাচন শেষ হবে।

রামু উপজেলা :

রামু উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ৬৪টি ভোট কেন্দ্রে মোট ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ৯৫১ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে, পুরুষ ভোটার ৯৯ হাজার ১২৫ জন। মহিলা ভোটার ৮৭ হাজার ৮২৬ জন। ৬৪ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ (বুথ) রয়েছে ৩৪৮ টি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রামু উপজেলায় ভোটার ছিলো ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৭৫১ জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তুলনায় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার বেড়েছে ২ হাজার ২০০ জন। রামু উপজেলার ৬৪ টি ভোট কেন্দ্রে ৬৪ জন প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, আপদকালীন প্রয়োজনে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া আরো ৫ জন প্রিজাইডিং অফিসারকে উপজেলা সদরে স্টেনবাই রাখা হয়েছে।

৩৯১’৭১ বর্গ কিলোমিটারের রামু উপজেলায় ১১টি ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইউনিয়ন সমুহ হচ্ছে, কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া, খতেখাঁরকুল, কাউয়ারখোপ, চাকমারকুল, ঈদগড়, জোয়ারিয়ানালা, রশিদনগর, দক্ষিণ মিটাছড়ি, খুনিয়াপালং ও রাজারকুল ইউনিয়ন।

রামু উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন-সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো (মোটর সাইকেল), সোহেল সরওয়ার কাজল (আনারস), মোহাম্মদ ইউসুফ ইকবাল (মুকুট)। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন-সালাহ উদ্দিন (তালা), মো. আবদুল্লাহ সিকদার (চশমা), মোস্তাক আহমদ (টিউবওয়েল), কায়সার কামাল চৌধুরী শিমুল (মাইক) ও মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (উড়োজাহাজ)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন-আফসানা জেসমিন পপি (কলস) ও মুসরাত জাহান মুন্নি (প্রজাপতি)।

উখিয়া উপজেলা :

উখিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ৬২টি ভোট কেন্দ্রে মোট ১ লক্ষ ৫১ হাজার ৫৬৪ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে, পুরুষ ভোটার ৭৮ হাজার ৫৫০ জন। মহিলা ভোটার ৭৩ হাজার ১৪ জন। ৬২ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ (বুথ) রয়েছে ৩৫৫ টি। তারমধ্যে, স্থায়ী বুথ ৩৪৪ টি এবং অস্থায়ী বুথ ১১ টি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উখিয়া উপজেলায় ভোটার ছিলো ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৩১২ জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার বেড়েছে ২ হাজার ২৫২ জন। উখিয়া উপজেলার ৬২ টি ভোট কেন্দ্রে ৬২ জন প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, আপদকালীন প্রয়োজনে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া আরো ৫ জন প্রিজাইডিং অফিসারকে উপজেলা সদরে স্টেনবাই রাখা হয়েছে।

২৬১’৮০ বর্গ কিলোমিটারের উখিয়া উপজেলায় ৫টি ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইউনিয়ন সমুহ হচ্ছে, রাজাপালং, জালিয়াপালং, পালংখালী, রত্মাপালং ও হলদিয়া পালং ইউনিয়ন।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, পুরুষ ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৫ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন-জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী (আনারস), আবুল মনসুর চৌধুরী (মোটর সাইকেল) ও জাফর আলম চৌধূরী (ঘোড়া)। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন-রাসেল চৌধুরী (তালা), জাহাঙ্গীর আলম (টিউবওয়েল), কামাল উদ্দিন মিন্টু (মাইক), গফুর চৌধুরী (চশমা) ও গফুর উল্লাহ (বই)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা হলেন-কামরুন্নেসা বেবী (কলস), সানজিদা আক্তার নূরী (প্রজাপতি) ও শাহীনা আক্তার (হাঁস)।

টেকনাফ উপজেলা :

টেকনাফ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ৬০টি ভোট কেন্দ্রে মোট ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৪২০ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে, পুরুষ ভোটার ৯১ হাজার ৮৮০ জন। মহিলা ভোটার ৮৮ হাজার ৫৩৮ জন। হিজড়া ভোটার রয়েছে ২ জন। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ছাড়া অন্য কোন উপজেলায় হিজড়া ভোটার নাই। ৬০ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ (বুথ) রয়েছে ৫০২ টি। তারমধ্যে, স্থায়ী বুথ ৪৪১ টি এবং অস্থায়ী বুথ ৬১ টি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টেকনাফ উপজেলায় ভোটার ছিলো ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ৬৫১ জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার বেড়েছে ২ হাজার ৭৬৯ জন। টেকনাফ উপজেলার ৬০ টি ভোট কেন্দ্রে ৬০ জন প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, আপদকালীন প্রয়োজনে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া আরো ৪ জন প্রিজাইডিং অফিসারকে উপজেলা সদরে স্টেনবাই রাখা হয়েছে। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবাহাওয়ার কারণে টেকনাফের সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে কর্মকর্তারা ভোট গ্রহণের জন্য সেন্টমার্টিন যেতে নাপারায় সেখানে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছে ৩ হাজার ৭১৩ জন। টেকনাফ উপজেলায় সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন ছাড়া বাকী ৫ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় আজ ভোট গ্রহণ করা হবে।

৩৮৮’৬৮ বর্গ কিলোমিটারের টেকনাফ উপজেলায় ৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইউনিয়ন সমুহ ও পৌরসভা হচ্ছে, হোয়াইক্ষ্যং, হ্নীলা, টেকনাফ সদর, সাবরাং, বাহারছরা ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন এবং টেকনাফ পৌরসভা।

টেকনাফ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, পুরুষ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারমধ্যে, চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী রয়েছেন। চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন-টেকনাফ উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আলম (প্রতীক-টেলিফোন) টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহমদ (প্রতীক-আনারস) ও জাফর আহমদ এর পুত্র দিদার মিয়া (প্রতীক-মোটর সাইকেল)। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন-সরওয়ার আলম (প্রতীক-টিউবওয়েল), সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী রফিক উদ্দিন (প্রতীক-মাইক) ও আবু সিদ্দিক (প্রতীক-চশমা)। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হচ্ছেন-গোলাপজান (প্রতীক-কলস), বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাহেরা আকতার মিলি (প্রতীক-পদ্মফুল) ও জেলা মহিলা দলের সহ-সভাপতি মর্জিনা আক্তার (প্রতীক-ফুটবল)।