মোঃ ওসমান গনি (ইলি) :
মাদক এখন ফ্যাশনের মতো হয়ে গেছে! কে কীভাবে মাদক বিক্রি করবে তা নিয়ে চলছে নতুন নতুন কলাকৌশল । কক্সবাজার জেলার যে কোনো পরিবার এবং সমাজের জন্য মাদকাসক্ত ব্যক্তি হুমকি স্বরূপ। টাকা না পেলে তারা ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করে। মাদকের ভয়াল দশা এবং প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২৬ জুনকে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

পরের বছর থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এক এক বছর এক এক স্লোগান সামনে রেখে পালিত হয়। গত বছর বাংলাদেশে করোনার কারণে দেশব্যাপী অত্যন্ত সীমিত পরিসরে দিবসটি পালন করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তবে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাদকবিরোধী প্রচার কার্যক্রম চালানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল।

মাদকের সর্বব্যাপী বিস্তার ঠেকিয়ে তরুণ প্রজন্মকে এর অভিশাপ থেকে রক্ষায় বাংলাদেশে ২০১৮ সালের ৪ মে দেশজুড়ে বিশেষ অভিযান শুরু করে র‍্যাব। এরপর পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থাও মাদকবিরোধী অভিযান চালায়। অভিযানে এখন পর্যন্ত কয়েকশ ব্যক্তি মাদক কারবারে জড়িত থাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায়।

গ্রেফতার হয় কয়েক হাজার, তবু মাদক নির্মূল করা যায়নি। কারবার চলছেই। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারিও মাদককে রুখতে পারেনি। মাদকের ব্যবহার আদিকাল থেকেই ছিল। কিন্তু সেটি আধুনিককালের মাদকের মতো নয়। তখনকার মানুষেরা গাছগাছালি থেকে নেশাদ্রব্য তৈরি করে ব্যবহার করত। কিন্তু এ ধরনের মাদকের ব্যবহার ছিল অত্যন্ত সীমিত আকারে।

বর্তমানে মাদকাসক্ত ও পাচারে জড়িয়ে ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছেন শত শত তরুণ। এই মাদক সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে মিয়ানমার থেকে অবাধে মাদক, ইয়াবা পাচারের কারণে কক্সবাজার জেলা যেন মাদকের হাব হয়ে উঠেছে। ফলে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে শত শত তরুণ। অল্প বয়সে মাদকে জড়িয়ে পড়া এমন দুই তরুণ রিফাত উদ্দিন রায়হান ও নেজাম (ছদ্মনাম)। মাদকাসক্ত হয়ে নিজেদের জীবনকে বিপদগ্রস্ত করে অনেকটাই হতাশায় পড়েছেন তারা। তারা দুই বন্ধু চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করতে গেলে সেখানে জড়িয়ে পরেন মাদক সেবনে। সবকিছু হারিয়ে কক্সবাজার এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন দুজনই। তারা বলেন, নিজেদের পরিবার ছাড়া কেউ কথা বলেন না। সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে হয়েছে বহুদিন। পরিবার পরিজন সকলের কাছে নিগৃহীত হতে হয়েছে । সবশেষে কক্সবাজারে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র রিহাব সেন্টারে এসে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন তারা। এমনই মরণঘাতী মাদকের গল্প বলছেন এ দুই তরুণ।

বুধবার আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবসে তরুণদের মাদক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এমন গল্পই তুলে ধরেছেন তারা।

গত মঙ্গলবার শহরের ইসলামাবাদ পশ্চিম লালর পাড়া এলাকায় গিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে ।

কক্সবাজার শহরের ১৭ টি পয়েন্টে, ইয়াবা, গাঁজা চোলাই মদসহ অন্যান্য মাদক বিক্রির সিন্ডিকেট রয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

পর্যটন শহর কক্সবাজারে মাদকের আগ্রাসন বেড়েই চলছে। কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না মাদক পাচার, সেবন ও ব্যবসা। হুমকির মুখে তরুণ প্রজন্মের অনেকে শঙ্কায় অভিভাবক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। প্রশাসনের আটক অভিযানের পরেও থেমে নেই মাদক কারবার। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, আগের চেয়ে কমে এসেছে মাদক মামলা। সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার মাধ্যমে কিছুটা হ্রাস পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে আদালতে বিচার প্রক্রিয়ায় মাদক মামলায় দণ্ড প্রাপ্ত হয়েছে অনেকেই। আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস ঘিরে নানা আলোচনায় রয়েছে কক্সবাজার শহরের বড় বাজার, রাখাইন পল্লী, টেকপাড়া, বাহারছড়া, পেশকার পাড়া,বাসটার্মিনাল, কলাতলি, পাহাড়তলী, লাইট হাউজ, গোলদিঘি,সহ নানা স্পট।

কক্সবাজার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পরিদর্শক জীবন বড়ুয়া জানায়, গেলো বছরে ৯ লাখ পিস ইয়াবা, ২৪ কেজি গাজা, ৮৬৫ লিটার,চোলাই মদ, ৪ কেজি ৭৬ গ্রাম হিরোইন, ২ কেজি আইস জব্দ করা হয়েছে। সর্বমোট ২২২টি মাদক মামলায় নিয়মিত ১৭২টি ও মোবাইল কোর্টে ৫০টি মামলা রুজু করে ২৭৫ জনকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সম্প্রতি পুলিশের কোন অভিযান চোখে না পড়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আবারও সক্রিয় হয়েছে গা ঢাকা দেওয়া এবং জেল ফেরত আত্মসমর্পণকারী মাদক ব্যবসায়ীরা। এমনই দাবি করে কক্সবাজারের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা জানায় কক্সবাজারকে মাদকের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি সমাধানে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলার আহ্বান সকলের।

স্পেশাল পি,পি নারী ও শিশু দমন ট্রাইবুনাল অ্যাডভোকেট একরামুল হুদা বলেন যারা মাদকের সাথে জড়িত আছেন তাদেরকে নির্মল করতে এলাকার সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদক কারবারিদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা হিসাবে রয়েছেন সমাজের নেতৃত্ব দেওয়ার কিছু লোক। তাদের কারণে সমাজ ধ্বংসের দিকে। আসুন সবাই মাদকে না বলুন সুস্থ জীবন গড়ুন।

অ্যাডভোকেট সরোয়ার বলেন মাদকের কারণে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে কক্সবাজারের বদনাম। মাদকগুলো কোথায় থেকে আসছে কেউ বলতে চায় না। পাশের দেশ মিয়ানমার থেকে সহজেই মাদক আসে কক্সবাজারে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা বা শহরে চলে যায়। এ সমস্যা সমাধানে সম্মিলিত প্রতিবাদ করা জরুরি বলে মনে করেন অ্যাডভোকেট সরোয়ার।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল বলেন, দিবস আসলেই সবাই নড়েচড়ে বসেন এরপর আর কোন খবর থাকে না। সীমান্তে এতোগুলো মাদক জব্দ করে প্রশাসন কিন্তু কোন কারবারি ধরা পড়ে না। এমন বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণ মানুষ শঙ্কিত কারণ নতুন প্রজন্মের কাছে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে সহজে। এটি রোধ করা সময়ের দাবি।