জাগোনিউজ: ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা কখনো করিনি, করবোও না।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্র রাজনীতি থেকেই তো রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। সেটাও মাথায় রাখতে হবে। কাজেই নিজেদের নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলতে গেলে সেভাবেই কাজ করতে হবে। তোমরা সেভাবে নিজেদের গড়ে তোলবা আদর্শবান কর্মী হিসেবে। খেয়াল রাখবা কোনো লোভের বশবর্তী হয়ে পা পিছলে পড়ে যেও না।
‘নিজেকে শক্ত করে সততার পথে থেকে এগিয়ে যাবে, সংগঠনকে শক্তিশালী করবে, জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে কাজ করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করবে। সেভাবেই নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।’
তিনি বলেন, ছাত্রলীগকে সব সময় আমি এটাই বলবো যে ছাত্রলীগকে কিন্তু সব সময় আদর্শ নিয়েই গড়ে তুলতে হবে। ক্ষমতার লোভ-লালসা এগুলোর ঊর্ধ্বে উঠে নিজেদের আদর্শবান কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। জাতির পিতার আদর্শটা যদি একবার ধারণ করা যায় তবে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া কঠিন কাজ নয়।
ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে শিক্ষার ওপর জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের মূলমন্ত্রই হচ্ছে শিক্ষা। প্রতিটি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এই শিক্ষা সেই শিক্ষা নয় যে কোনো মতে পয়সা বানানোর শিক্ষা নয়, শিক্ষাটা অন্তর থেকে অনুধাবন করতে হবে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য।
‘ছাত্রলীগের আরেকটি মূলমন্ত্র হচ্ছে শান্তি… কাজেই ছাত্রলীগকে সেটা মনে রাখতে হবে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি এসব কিছু থেকে দূরে থাকতে হবে। কখনো যেন কোনো ছাত্র বা যুব সমাজ এই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, করোনা একটা শিক্ষা দিয়ে গেছে মানুষকে, যে ধনসম্পদ কোনো কিছু কাজে লাগে না। অর্থ সম্পদ কোনো কিছু কাজে লাগে না। মানুষকে যেমন হঠাৎ করে মরতে হয় আবার সম্পদ বানালেও যে সেগুলো কোনো কাজেই লাগে না করোনা কিন্তু সেই শিক্ষা দিয়ে গেছে সবাইকে। কাজেই অহেতুক অর্থের পেছনে না ছুটে মানুষের জন্য কাজ করা একজন রাজনৈতিক নেতার কাজ। সেটাই মাথায় রাখতে হবে।
উন্নত জাতি গঠনে শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা জাতিকে যদি দারিদ্র্যমুক্ত করতে হয় শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, শিক্ষায় যে অর্থ ব্যয় সেটা হচ্ছে বিনিয়োগ। সেই অর্থ কাজে লাগে। শিক্ষিত জাতি ছাড়া কখনো একটা উন্নত জাতি হওয়া সম্ভব নয়। শিক্ষার ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি এবং শিক্ষা বহুমুখী করা সেই ব্যবস্থাটাও আমরা নিয়েছি।
অশিক্ষিত নেতৃত্ব একটি দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি কারও নাম বলবো না একটু বলতে চাই শুধু- অল্প শিক্ষিত বা স্বশিক্ষিত বা অশিক্ষিত নেতৃত্ব একটা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। আজ সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি।’
শিক্ষিত তরুণদের চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানিয়ে টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন, একজন শিক্ষিত ছেলে-পেলে বেকার থাকতে পারে না। সেই সঙ্গে আমাদের যুব সমাজ, তরুণ প্রজন্ম তাদের আমরা বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিচ্ছি যে নিজে চাকরির পেছনে ঘুরে না বেরিয়ে নিজেদের উদ্যোক্তা হতে হবে। চাকরি দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তার জন্য যা যা সুযোগ আমরা তা সৃষ্টি করে দিয়েছি।
ছাত্রলীগ সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা আমি ছাত্রলীগকে বলবো সংগঠনটা গড়তে হবে। কারণ এই সংগঠনেই থাকে শক্তি। আমি ’৮১ সালে এসে হাতে নিয়েছিলাম যে প্রত্যেকটা সহযোগী সংগঠনকে গড়ে তোলা। নিজের দলকে আগে গড়ে তোলা। ক্ষমতায় যাওয়া তখনই যখন আমি মনে করবো যে হ্যাঁ আমি আমার দেশের মানুষের জন্য কাজ করার শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় যেতে পারছি তখনই।
‘তার আগে যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা কখনো করিনি, করবোও না। আমার লক্ষ্যই ছিল আমার ক্ষমতায় যাওয়া দেশের মানুষের জন্য কাজ করবো। সেভাবেই ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হয়েছি এবং কাজও করেছি।’
একটি মহল দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা তো দেশের মানুষের ভাগ্যের কথা চিন্তা করে না। কাজেই তারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকে। কিন্তু নীতি-আদর্শ নিয়ে চললে আর সৎপথে চললে পরে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা যায়। সেটা প্রমাণ করেছি আমরা।’
‘আমাদের দেশের কিছু মানুষ সেই দেশ সৃষ্টির পর থেকে আমি দেখি সব সময় কোনো একটা প্রভু খুঁজে নিয়ে তাদের পদলেহন করতে ব্যস্ত থাকে। তাদের কোনো আত্মমর্যাদাবোধ নেই, তাদের নিজের প্রতি কোনো আত্মবিশ্বাস নেই। এদের দিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণ হয় না।’
কৃষিবিদ মিলনায়তন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য প্রমুখ।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।