অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন:

বদিউল আলম মাস্টার (প্রাক কথন: জনাব বদিউল আলম মাস্টার আমার ফুফাত ভাই। একসময় ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীতে পদবি নিয়ে

কাজ করেছেন।তিনি ’৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক ছিলেন। এর আগে তিনি কক্সবাজার হাই স্কুলে স্কাউট

মাস্টার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি স্কুলে অন্যান্য সাবজেক্ট ও পড়াতেন। আমি অনেকদিন ধরে কক্সবাজার

স্টেডিয়ামের ইতিহাস খুঁজছিলাম। আমার আরেক স্বনামধন্য খেলোয়াড় আমার খালাত ভাই সুরত আলম গত বছর

দুয়েক আগে প্রয়াত হয়েছেন।জাতীয় খেলোয়াড় হিসেবে মারদেকায় খেলতে গিয়েছিলেন। তাঁর কাছে কয়েকবার খোঁজ

নিয়েছিলাম।পারিনি কিছুই ।এর পর আমার আরেক বড় ভাই প্রাবন্ধিক, জে জি স্কুলের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক

,গুণিজন জনাব নুরুল আজীজ ভাই আমাকে কিছু এ নিয়ে লেখা দেন। কারণ কক্সবাজার স্টেড়িয়ামের

সেইকালে ইতিহাস কারো কাছে এখন নাই। স্বাধীনতার পরেও তেমন কেউ লেখেননি। শুধু নির্বাচন নিয়ে,কমিটি

নিয়ে সবাই মত্ত ছিল। এখন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এসব তুলে ধরাই আমার এই উদ্যোগ।)—অধ্যাপক রায়হান

উদ্দিন , কলামিস্ট, সঙ্গীত প্রযোজক, সুরকার , গীতিকার, শিল্পী , সভাপতি সঙ্গীতায়তন কক্সবাজার, সিনিয়র

সঙ্গীত প্রশিক্ষক জেলা শিল্পকলা একাডেমী , ককসবাজার

সাগর পাড়ের রূপসি কন্যা কক্সবাজার শুধু রূপের দিকে নয় গুণের দিক দিয়েও কোন

দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই। ক্রীড়াঙ্গন ও অবহেলার ক্ষেত্র হয়নি কোনোদিন। বরং খেলাধুলায়

কক্সবাজার এক বিশেষ সম্মানের অধিকারী।

বিশেষ করে ফুটবল খেলায় কক্সবাজার একটা গৌরব দ্বীপ্ত ইতিহাস আছে—

“কক্সবাজার টাউন ফিল্ড”সেই ইতিহাসের সূতিকাগার। সেই টাউন ফিল্ড ছিল ফুটবল খেলার

কেন্দ্রবিন্দু।এর অবস্থান ছিল বিমান বন্দরে।অনেক খ্যাতনামা খেলোয়াড়দের পদচারণায়, মাঠটি

নিত্য সরগম থাকতো।আবার অনেকের ফুটবল খেলার হাতে খড়ি হয় এই মাঠেই।কলিকাতার

অপরাজিত ইস্টবেঙ্গল দলের কীর্তিমান খেলোয়াড় গদা(রশিদুজ্জমান) অমিত , চুন্নুবাবু, ও কুদ্দুছ এই

মাঠের অন্যতম আকর্ষণ ছিল।

১৯৩৩ সালে ককসবাজারে প্রথম একটি ফুটবল দল গঠিত হয়।তার নাম কক্সবাজার

টাউন ক্লাব।এই দলের দর্শক নন্দিত খেলোয়াড় ছিলেন পান্না বাবু। বেনী মাধব সেন,

তেজেন্দ্রবড়ুয়া, রায়বাহাদুর শরৎচন্দ্র পাল, প্রবোদ কুমার রক্ষিত।বিপিন বিহারী রক্ষিত, বিভুতি

সেন, মোহাম্মদ আলী উকিল, মনিন্দ্রলাল চৌধুরী, ইছমাইল , পল্টু বাবু, খুকু বাবু, ও সিরাজ

মিঞা প্রমুখ।পরবর্তীতে এই দলে যোগদান করেন ট্কেপাড়ার রফিক আহমদও হারবাং এর

এহতেশামুদ্দিন চৌধুরী

কক্সবাজার টা্উনফিল্ডকে কেন্দ্র করে ক্রীড়াঙ্গনে যে অভূতপূর্ব প্রাণ চাঞ্চল্য সৃস্টি হয়েছিল

সেই মাঠটি কিন্তু কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে।তবে তার কিছু স্মৃতি এখনো প্রবীণদের হৃদয়ে অম্লান।

2

খেলার জগতের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব জনাব মোহাম্মদ আলী উকিল ছাত্রাবস্থায় চট্টগ্রাম

সরকারি কলেজ ও কলিকাতা ইডেন কলেজের ফুটবল দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন।তাঁরই উদ্যোগে

টেকপাড়া বয়েজ ক্লাব নামে আরও একটি ফুটবল দল গঠিত হয়। অবশ্য ওই দলটি ছিল তাঁর

পারিবারিক ফুটবল দল।

১৯৩৯ সালে ২য় মহাযুদ্ধের সময় খেলাধুলা নিষ্প্রভ হয়ে উঠে। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত খেলা

ধুলায় তেমন তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি।

কক্সবাজার মহকুমা প্রশাসক জনাব বি এ এস ছলিম উল্লাহ ও বনবিভাগের কর্মকর্তা জনাব কিউ

এম গাউসের প্রচেস্টায় আবার খেলাধুলা শুরু হয়। অন্যদিকে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও

কলিকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং দলের কৃতি ফুটবলার জনাব এম এ রশিদ (ছোট রশিদ)এর

উৎসাহে ঝিমিয়ে পড়া ক্রীড়াঙ্গন স্পন্দনময় হয়ে উঠে। তখন স্বর্গীয় বাবু মনিন্দ্রলাল চৌধুরীর

বদান্যতায় আয়োজিত হয় “এ, কে, ঘোষ রানিং শীল্ড টুর্নামেন্ট” প্রতিযোগিতা। এসব

প্রতিযোগিতায় হারবাং এর আবদুল হামিদ খান, এহতেশামুদ্দিন চৌধুরী, টেকনাফের জালাল আহমেদ,

উখিয়ার সৈয়দ নুর, টেকপাড়ার রফিক, রামুর ফারুক(লালু)অমিয় বড়ুয়া এবং এস , ডি ও

একাদশের ভুপতি বড়ুয়ার ক্রীড়া নৈপুন্যতা দর্শকদের বিমুগ্ধ করে।

১৯৫৫৬-৫৭ সালে কক্সবাজার স্টেডিয়াম নির্মিত হয়। এর পিছনে যার অবদান

সকৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করতে হয় তিনি হলেন তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক জনাব এ,কে এম

জাকারিয়া, তাছাড়া স্থানীয় বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ ও সংঘটক স্বর্গীয় মনিন্দ্রলাল চৌধুরী, ও বাবু বিভুতি

সেনের শ্রম ও সহযোগিতা প্রশংসার স্বাক্ষর রাখেন। এদের সম্মিলিত উদ্যোগে জনসাধারণ থেকে ৫০

হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।পরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান স্টেডিয়াম

নির্মাণের সাহায্য স্বরূপ ২৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন।

স্টেডিয়াম নির্মাণের পর যথানিয়মে খেলাধুলা আরম্ভ করা হয় এবং কক্সবাজার মহকুমা ক্রীড়া

সমিতি গহঠিত হয়। মরহুম ফরিদ আহাম্মদ ছিলেন তার প্রথম সাধারন সম্পাদক।জনাব বদিউল

আলম মাস্টার ছিলেন তাঁর অন্যতম সহযোগী। মহকুমা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ জাকারিয়া

মরহুম ফরিদ আহমদের পৃস্টপোষকাতায় ও উৎসাহে বিভিন্ন স্কুলে খেলার মাঠ তৈরি করে খেলা

ধুলার আয়োজন করা হয়।

এই ব্যাপারে বিভিন্ন এলাকার ক্রীড়াবিদগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং তাঁদের উদ্যোগে

থানা কেন্দ্রিক ফুটবল খেলার তৎপরতা শুরু হয়।তাঁদের মধ্যে উথিয়ার সিরাজ মিয়া,

মহেশখালীূর আলী হোসেন বি, এ, চকরিয়ার নুরুল কবির চৌধুরী, শাহার বিলের নুর মোহাম্মদ ও

এলাহাবাদ চৌধুরী

পেকুয়ার কবির আহাম্মদ চৌধুরী, রামুর দীনেশ বড়ুয়া, ক্ষেমেশ বড়ুয়া, ওবাইদুল হক,,

জাকের আহাম্মদ চৌধুরী, জ্ঞানেন্দ্র বড়ুয়া ও মোস্তাক আহমেদ এবং হারবাং এর এহতেশামুদ্দিনের

3

নাম স্মরণ করতে হয়। স্বর্গীয় যামিনী বাবু প্রধান শিক্ষক থাকাকালে কক্সবাজার হাই স্কুলে

খেলাধুলার আয়োজন উদ্যোগ গ্রহণ করেন।হাই স্কুলের ফুটবল দল একটি শক্তিশালী দল হিসেবে

সুনাম অর্জন করে।

মরহুম ফরিদ আহাম্মদ পুর্বৃ পাকিস্তান স্পোটর্স ফেড়ারেশনের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার

পর ককসবাজারের খেলাধুলার মানোন্নয়নে তিনি যে ভূমিকা পালন করেন তা অত্যন্ত

প্রশংসাযোগ্য।তিনি ঢাকা থেকে কোচ পাঠিয়ে কক্সবাজারের খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা

করেন।তাঁরই উদ্যোগে আয়োজিত হয় পাকিস্তান বিমান বাহিনী বনাম পাক মোগল দলের মধ্যে

প্রদর্শনী খেলা।পাকিস্তানের অপ্রতিদ্বন্দ্বী দল করাচির কেয়ামারি ও কক্সবাজার একাদশের প্রীতি ফুটবল

প্রতিযোগিতা।উক্ত খেলায় কক্সবাজার একাদশ কেয়ামারী দলকে ১-০ গোলে হারিয়ে গৌরবের

শিরোপা অর্জন করে।

এরপর কক্সবাজার একাদশ চট্টগ্রামে কোহিনুর শীল্ড টুর্নামেন্ট ও আন্তঃজেলা ফুটবল

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এবং কক্সবাজারের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখে। কক্সবাজার একাদশের

উদীয়মান খেলোয়াড় ছিলেন সুরত আলম, (আলম)একরামুল হুদা চৌধুরী, নুরুল হক, মোস্তাক

আহাম্মদ,আবদুল হাকিম, ছৈয়দ নুর, গোলাল, নুরুল আজীম চৌধুরী, আবদুল্লাহ, নজির

আহাম্মদ,পরিমল পাল, ছৈয়দনুর আবদুল রহমান, ক্ষেমেশ বড়ুয়া ও অমল বড়ুয়া।

১৯৫৮ সালে কক্সবাজার একাদশ আগাঁ খান গোল্ডকাপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন

এবং আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবকে ২-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তীর্ণ হন।

কক্সবাজার ক্রীড়া সমিতির কর্মকর্তা হিসেবে পরপর দায়িত্ব পালন করেন অ্যাডভোকেট ফিরোজ

আহাম্মদ চৌধুরী,অ্যাডভোকেট আবু আহাম্মদ ও অধ্যক্ষ স:আ:ম: শামশুল হুদা চৌধুরী। অ্যাডভোকেট

মোহাম্মদ আলী উকিল , বিভুতি সেন দীর্ঘদিন রেফারি দায়িত্ব পালন করেন।

পরবর্তীতে জনাব নজীর আহাম্মদ ও জনাব আবদুল্লাহ কন্ট্রাকটার কক্সবাজার ক্রীড়া

সমিতির সাধারন সম্পাদক হিসাবে দীর্ঘদিন খেলাধুলা পরিচালনা করেন।

পরে জনাব বদিউল আলম মাস্টার , নুরুল হুদা চৌধুরী পরপর কক্সবাজার জেলার

মহকুমা ক্রীড়া সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে খেলাধুলার মানোন্নয়নে সচেষ্ট ছিলেন।তখন

একমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রেফারি ছিলেন জনাব বদিউল আলম মাস্টার ও নুরুল হুদা চৌধুরি।তাঁরা

সুষ্ঠু খেলা পরিচালনায় প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন।এই সময়ে খেলোয়াড় হিসেবে সুনাম অর্জন করে

ঝুলন পাল, কাসেম, জালাল, জামাল, সুনীল দে , শাহবুদ্দিন, সুরত আলম(গোল কীপার) শফিকুর

রহমান চৌধুরী

4

কালির ছড়ার জমিদার হাফেজ আহাম্মদ চৌধুরী কক্সবাজার ক্রীড়া সমিতিকে একটি

গোল্ডকাপ প্রদান করেন। গোল্ডকাপ প্রতিযোগিতা পরপর দু’বছর অনুষ্ঠিত হয়।স্বাধীনতার পর

কক্সবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান জনাব এ,কে এম মোজাম্মেদ হক কক্সবাজার মহকুমা

ক্রীড়া সংস্থাকে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ দান করেন।এই খেলা ৭৩-৭৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত

গোল্ডকাপ প্রতিযোগিতায় দেশের খ্যাতনামা ক্লাবগুলি অংশ গ্রহণ করেন। পরে ২ টি গোল্ড

কাপ-ই তাঁরা ফেরত নিয়ে যান। ফলে গোল্ডকাপ খেলা আর অনুষ্ঠিত হয়নি।

এই সময়ে ইদগাঁও হাই স্কুল মাঠে ও ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ইদগাঁও মাঠকে

মহকুমার ২য় স্টেডিয়াম হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়। এ ব্যাপারে ইদগাঁও হাইস্কুলের প্রধান

শিক্ষক মরহুম সুলতানুল আলম চৌধুরী, নুরুল আজীম চৌধুরীর অবদান প্রশংসনীয়।

স্বাধীনতার পূর্বে তৎকালীন বনবিভাগীয় কর্মকর্তা জনাব আবদুল আলিম ফরেস্ট্ ক্লাব গঠন

করেন। একই সময়ে সড়ক ও জনপথ ক্লাব, ওয়াপদা ক্লাব ও ই পি এফ ডি সি রিক্রিয়েশন ক্লাব

গঠন হলে খেলাধুলার সঞ্চারিত হয় এক অভূতপূর্ব প্রাণ চাঞ্চল্য।এসব ক্লাব বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়

অংশ নিতেন। এই সময় অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার মোহামেডান স্পোর্টিং বনাম ভিক্টোরিয়া ক্লাবের

মধ্যে ফা্ইনাল খেলা।উক্ত খেলা দর্শকদের বিপুলভাবে আলোড়িত করে।

১৯৮১ সালে জনাব বদিউল আলম মাস্টার কক্সবাজার মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ

সম্পাদকের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। এখানে কাবাড়ি, ভলিবর, সাঁতার, বেডমিন্টন ও লন টেনিস

প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এই স্টেডিয়ামে প্রদর্শনী মহিলা হ্যান্ডবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় মহিলা হ্যান্ডবল দল অংশ গ্রহন করেন।

আর্থিক দৈনতার কারণে বাহারছড়া তরুণ মুসলিম টেকপাড়া বয়েজ ক্লাব , যুব সংঘ অফিস

একাদশ, পৌর সভা একাদশ, সি এন্ড বি ক্লাব, ফরেস্ট ক্লাব, ঈগল স্পোর্টিং ক্লাব ও টাউন ক্লাব

বিলুপ্ত হয়ে যায়।

১৯৮২-৮৩ সালে জনাব কফসির উদ্দিনকে ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্ব

দেওয়া হয়। খেলাধুলার আয়োজন হলেও আশানুরূপ সাড়া জাগাতে সক্ষম হননি।

কক্সবাজার জেলায় উন্নীত হওয়ার পর জেলা প্রশাসক হিসেবে জনাব খন্দকার ফজলুর

রহমান দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। তাঁর প্রশংসনীয় প্রচেস্টায় ক্রীড়াঙ্গনে ফিরে আসে নব উদ্দীপনা,

মরা গাঙ্গে যেন জোয়ার লেগেছে।কক্সবাজার মহকুমা ক্রীড়া সংস্থাতে তিনি নতুন করে গঠন করে

অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দিনকে সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পণ করেন ।শুধু তা নয় তিনি, বিভিন্ন

উপজেলা ফুটবল দল গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।তিনি প্রতিটি উপজেলা দলকে পাঁচ হাজার

টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। ইতোমধ্যেই কক্সবাজার শহরে দুটি শক্তিশালী ফুটবল দল

গঠিত হয়।জনাব নজরুল ইসলাম চৌধুরীর পৃষ্টপোষকতায় আবাহনী ক্রিড়াচক্র ও কক্সবাজার

পৌরসভার চেয়ারম্যান জনাব নুরুল আবছার, জনাব মনজুরুল হক ও অ্যাডভোকেট ইউছুপ

5

মোহাম্মদ শামশুল হুদা চৌধুরী ও অন্যান্য নবীন খেলোয়ারগণ সম্মিলিতভাবে ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন দল

গঠন করেন।উভয়দলের খেলোয়াড়গনকে প্রশিক্ষণ দান করা হয়।নবীন খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে গঠিত

উক্ত দল দুইটি অল্পদিনের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়।একতা ক্লাব, সৈকত যুব

গোষ্ঠী, আজাদ ইয়ং স্টার, ডুলহাজারা ক্রীড়া সংঘ, মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদ, উখিয়া রাইজিং

ক্লাবও মহেশখালী উপজেলা ক্রীড়া সমিতির আবির্ভবাব ঘটে।উক্ত দলগুলো ঐ বছর লীগ খেলায়

অংশ গ্রহণ করে।জেলা প্রশাসকের সক্রিয় সহযোগিতায় আয়োজিত হয় শেরে বাংলা ফুটবল

টুর্নামেন্টের কর্ণৃফুলি জোনের খেলা।এতে চট্টগ্রাম বিভাগের সাতটি জেলা দল অংশ গ্রহণ করেন এবং

ফেনী একাদশ চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করে। আর কক্সবাজার একাদশ রানার্সআপ হয়।বর্তৃমানে

ক্রীড়া নৈপুন্যতায় যারা জনপ্রিয়তা অর্জৃন করে তারা হচ্ছে মোহাম্মদ আলী, খুরশীদ , রফিক

মঈন, টাইটেল, প্রশান্ত, অমলেন্দু, হাবিব, জসিম , আবসার, কাঞ্চন, নিকাশ ও রুহুল কাদের।

স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে উপআঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসক মেজর আবুল ফরিদ ও

জেলা প্রশাসক জনাব খন্দকার ফজলুর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় টেনিস সাধিত

হয়।

১৯৪৮ সালে মার্চৃ মাসে লন টেনিস প্রতিযোগিতা ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

হয়।বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সাতটি ও উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক প্রতিযোগী অংশ গ্রহণ

করে।আলম ফরাজীর নেতৃত্বে ১৫দিন ব্যাপী ভলিবল কোচিং এর ব্যবস্থা করা হয়।একই সালে মে

মাসে ঐতিহ্যবাহী জেলা প্রশাসকের বলী খেলা অনুষ্ঠিত হয়।ফিফা ব্যাজধারী জনাব মনির হোসেন,

ও জনাব জেড আলম এবং বাংলাদেশ রেফারি এসোসিয়েসনের সাধারণ সম্পাদক জনাব হাবিবুল

রহমানের নেতৃত্বে ২১ দিনব্যাপী রেফারি প্রশিক্ষণের কোর্সের আয়োজন করা হয়। এতে সাতটি

উপজেলার ৩০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে।

কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থা কর্তৃক এই বছর কিছু উন্নয়মুলক কাজ সম্পূর্ণ করা

হয়।তারমধ্যে লালদিঘীতে এক লাখ বিশ হাজার টাকা ব্যয়ে সুইমিং ট্যাংক নির্মাণ,ফুটবল মাঠ

উন্নয়ন, গ্যালারি ও প্যাভিলিয়ন মেরামত ও প্লেয়ার্স হোস্টেল বিদ্যুতায়ন ও সংস্কার ইত্যাদি।

আরো গৌরবের বিষয় যে, ককসবাজারের কয়েকজন কৃতি ফুটবলার স্বাধীনতার আগে ও

পরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন দলের পক্ষে নিয়মিত খেলতেন। ইপিআর দলের ছগির, ভিক্টোরিয়া

ক্লাবে জালাল, ঝুলন ও আলম, ওয়াপদা দলে সুনীল মোহামেডান স্পোর্টিং দলে মোস্তাক,

চট্টগ্রামের বিভিন্ন দলে হাবিবুল্লাহ, ইসমাইল, মনসুর, খোকা বড়ুয়া, মকবুল ও অমলেন্দু কৃতিত্বের

সাথে খেলেছেন। তন্মধ্যে মোস্তাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ভারত সফর করেন এবং সুনীল জাতীয়

দলের পক্ষে মারদেকায় ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন। সুনীল ভারতে অনুষ্ঠিত কোচ

প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ গ্রহণ করেন।

6.

তাই এইসব প্রথিতযশা খেলোয়াড়দের গৌরব ও মহিমায় কক্সবাজার ক্রীড়াঙ্গন বাংলাদেশের

মধ্যে এক বিশেষ সম্মানের আসনে সমাসীন।আগামী দিন ও কক্সবাজার ক্রীড়াঙ্গন এই ধরনের

খ্যাতিমান খেলোয়াড়দের জন্ম দিতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। তবে তা নির্ভর করবে স্থানীয়

ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠকদের আন্তরিক ইচ্ছা ও আগ্রহের উপর।