জালাল আহমদ, আদালত প্রতিবেদক:

সরকার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থাকা বিএনপি এবং জামায়াত সহ কয়েকটি বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় হাজিরা দিতে নিয়মিত উপস্থিতির কারণে আদালত চত্বর হয়ে উঠেছে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামি সহ কয়েকটি বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের মিলনমেলার ভেন্যু।হাজিরা, জামিন শুনানি,সাক্ষী গ্রহণ, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিএনপি এবং জামায়াতের আইনজীবীরা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল । আদালতের বিচারক ও আইনজীবীর মতোই আদালতের ‘সঙ্গী’ হিসেবে তাঁকে নিয়মিত উপস্থিত হতে হয় আদালত চত্বরে। মাত্র দুই দিন আগেই কারাগার থেকে বের হয়েছেন তিনি। কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও মামলার গ্লানি থেকে মুক্তি পায় নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজপথ কাঁপানো এই ছাত্রনেতা।আজ ১৫ মে বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতির দেখা মেলে পুরান ঢাকার আদালত চত্বরে ‌।ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি এবং বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সারাদেশে সর্বোচ্চ ছয় শতাধিক মামলার আসামি হিসেবে ‘রেকর্ড’ করেছিলেন তিনি। কারাগারে ফাঁসির আসামির জন্য নির্ধারিত ‘কনডম’ সেলে রাখা হলেও দমে যায়নি উত্তরবঙ্গের রংপুরের সন্তান হাবিব উন নবী খান সোহেল।

মোট তিনটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।

কোন মামলায় আড়াই বছর, কোন মামলায় দেড় বছর সাজা দেওয়া তাঁকে। মোট কতটি মামলা আছে সেই বিষয়েও অবগত নন তিনি। তবে সাজা প্রাপ্ত এবং ওয়ারেন্টভুক্ত ৪৫০ টি বেশি মামলায় জামিন পেয়ে গত ১৩ই মে সোমবার রাতে জামিনে মুক্তি পান সোহেল। গতকাল সারাদিন বাসায় দলীয় নেতা কর্মীদের ভালোবাসাই সিক্ত ছিলেন। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই আদালতে গেলেন মামলার হাজিরা দিতে।

হাজিরা শেষে আদালত প্রাঙ্গণে দাঁড়াতেই মুহূর্তের মধ্যে এই বিএনপি নেতা কে ঘিরে নেতাকর্মীদের ভিড় ।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুমিনুল হক জিসান তার রাজনৈতিক মামলায় ‘কেস পার্টনার’ ঢাবির অমর একুশে হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল্লাহ আর রিয়াদ সহ ৮/১০ জন নেতাকর্মী এসেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাজনৈতিক মামলায় হাজিরা দিতে। হাজিরার পর আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপি নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল কে পেয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

হাবিব উন নবী খান সোহেল চলে যাওয়ার পর আদালত চত্বরে দেখা যায় ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান কে। তিনিও তাঁর রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের নিয়ে আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিলেন।

উখিয়া কেন্দ্রিয় সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লি: এর কমিটি গঠিত

শুধু মাত্র সোহেল,রাজিব কিংবা জিসান নয়, দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পর্যন্ত সবাই কে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হয়। মামলার হাজিরা দিতে গিয়ে আদালত চত্বর এলাকায় পরস্পরের দেখা মেলে। ফলে আদালত চত্বর হয়ে উঠেছে বিএনপি এবং জামায়াত নেতাকর্মীদের মিলনমেলার ভেন্যু।

রাজনৈতিক মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীর মামলা পরিচালনার জন্য কোন ফি নেন না বিএনপি এবং জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা। তবে মামলার আনুষঙ্গিক খরচ সংশ্লিষ্ট বিএনপির নেতাকর্মীরা বহন করেন। জামায়াতের ক্ষেত্রে মামলার সমস্ত খরচ বহন করে সংগঠন।

জামায়াতের নেতাকর্মীদের মামলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম জানান,” প্রতিদিন নেতাকর্মীদের নিয়মিত হাজিরা, মামলার শুনানি এবং যুক্তিতর্ক উপস্থাপন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। আমাদের একাধিক টিম আছে।একই দিনে একাধিক মামলার হাজিরা এবং শুনানির ক্ষেত্রে সকালে আদালত কে আবেদনের মাধ্যমে জানিয়ে রাখি। পরে ধারাবাহিকভাবে মামলা পরিচালনা করি”।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি)’র আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান,”গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে রাজপথে থাকার কারণে বিএনপি সহ বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ,মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করেছে সরকার। বিএনপির নেতাকর্মীরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে নিম্ন আদালতে স্যারেন্ডার(আত্মসমর্পণ) করছে। জেলখানা যাচ্ছে। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর জেলখানা থেকে বের হয়ে মামলায় হাজিরা দিচ্ছে। আদালত প্রাঙ্গণে সমাজের বিভিন্ন স্তরের শ্রেণীপেশার মানুষের সাথে দেখা হচ্ছে। ফলে আমাদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি বাড়ছে ‌। এতে আদালত চত্বর নেতাকর্মীদের মিলনমেলার ভেন্যুতে পরিণত হয়েছে”।

খবর পড়ুন

টেকনাফে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ৩ প্রার্থীকে জরিমানা

শাহপরীরদ্বীপে ৫০ হাজার ইয়াবাসহ আটক-৩