খালেকুজ্জামানের জীবন
১। পরিচিতি ঃ (ক) জন্ম তারিখ ঃ ১৬ জানুয়ারি ১৯৫৩ ইংরেজী। (খ) পিতার নাম ঃ মরহুম ফরিদ আহম্মদ। জাতীয় সংসদ সদস্য ও ১৯৫৭ সালে গঠিত আই আই চুন্দ্রীগড় মন্ত্রীসভার কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রী। (গ) ঠিকানা ঃ (অস্থায়ী) বাড়ি-নং এস.ই-৯(এফ), সড়ক নং-১৪২, গুলশান, ঢাকা-১২১২। স্থায়ী ঃ জামান ভিলা, হাসপাতাল সড়ক, কক্সবাজার।
২। শিক্ষা জীবন ঃ (ক) উপÑস্নাতক পর্যায় ঃ ধানমন্ডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মোমেনশাহী ক্যাডেট কলেজ ও ঢাকা সরকারি কলেজ। এসএসসি এবং এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ।(খ) স্নাতক পর্যায় ঃ বিএ, এলএলবি ৩য় স্থান, এমবিএ (ঢা.বি) প্রথম স্থান।
৩। স্নাতকোত্তর ঃ (ক) তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ঃ ঢাকাস্থ আমেরিকার একটি বহুজাতিক কম্পিউটার কোম্পানী এনসিআর এর অধিনে পদ্ধতি বিশ্লেষক (ঝুংঃবস অহধষুংঃ) হিসাবে পেশাগত জীবন শুরু ১৯৭৯ সালে।(খ) কম্পিউটার বিজ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষা ঃ মিশরের কায়রো, সাইপ্রাসের নিকোশিয়া, পাকিস্তানের করাচী, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্রের ডেটন, আটলান্টা ও নিউইয়র্ক এ অবস্থিত এনসিআরের স্কুল থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন।
৪। পেশাগত কৃতি ঃ (ক) আমেরিকার উইচিটা ও ক্যানসাসে অবস্থিত এনসিআরের সফটওয়্যার উন্নয়ন কেন্দ্রে পেশাগত প্রশিক্ষণ অত্যন্ত সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন এবং লব্দ প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে এনসিআরের প্রোপ্রাইটরি অপারেটিং সিসটেম এন্ড কমপাইলারকে আন্তর্জাতিক ভাবে ব্যবহার উপযোগী করতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। (খ) বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাংক ও হোটেলে বৃহৎ ও ক্ষুদ্রায়তর কম্পিউটার স্থাপনে তিনি সহায়তা করেন। (গ) বাংলাদেশে অবস্থিত কুয়েত এয়ারওয়েজের কার্যালয়ে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে পরস্পরের উপর ক্রিয়াশীল মেন্যুচালিত সফটওয়্যার প্যাকেজ স্থাপন করে তিনি সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। (ঘ) ইন্টারেকটিভ ব্যাংকিং সফটওয়্যার বিষয়েও তাঁর দক্ষতা রয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থিত ২টি বিদেশী ব্যাংকে ইন্টারেকটিভ সফটওয়্যার স্থপনেও তিনি সহযোগিতা করেন। (ঙ) একজন তন্ত্র বিশ্লেষক হিসেবেও তিনি পদ্ধতির উপর এক জরিপ পরিচালনা করেন এবং ফাইজার, স্কুইব, পিডিবি, সাধারণ বীমা করপোরেশন, জীবন বীমা করপোরেশন, বিআইডাব্লিউটি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিনি বিশেষজ্ঞ পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। (চ) এনসিআরের একজন ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে তিনি অসংখ্য কম্পিউটার ট্রেনিং কোর্স পরিচালনা করেন এবং কম্পিউটার সম্পর্কিত মৌলিক বিষয়েও শিক্ষা দান করেন। (ছ)জাতীয় কম্পিউটার কাউন্সিল এবং সাধারণ বীমা করপোরেশনের তিনি কম্পিউটার পরামর্শক। এছাড়াও পাকিস্তানের করাচীতে এনসিআর এর জন্য কম্পিউটারাজড হিসাস চালু করেন।
জ) বাংলাদেশ টেলিভিশনে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সম্পর্কিত বুনিয়াদী শিক্ষার উপর তাঁর পরিবেশিত অনুষ্ঠানগুলো অত্যন্ত সমাদৃত হয়েছে। ঝ) কম্পিউটার সফটওয়্যার ও কম্পিউটার প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা সম্পর্কে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে তিনি বলিষ্ট ভুমিকা পালন করেন। শুধু তা নয়, বাংলাদেশ থেকে কম্পিউটার সফটওয়্যার রফতানিতে তাঁর অবদান প্রশংসার দাবী রাখে।
৫। আইন পেশায় কৃতিত্ব ঃ একজন আইনজীবী হিসেবে দেশের বিভিন্ন আদালতে মামলা পরিচালনা করে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। ক্রিমিনাল ল, কোম্পানী ল, অব কন্ট্রাক্ট এন্ড এজেন্সী, ইন্ডাষ্ট্রিয়াল এন্ড লেবার ল, ল অব ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স, ল্যান্ড ল, ল অফ আরবিট্রিশন, ল অফ রীট, ল অফ এ্যাডমিরালটি, ল অফ প্যাটান্ট, ডিজাইন এন্ড কপিরাইট আইন সম্পর্কে তাঁর যথেষ্ট অভিজ্ঞ রয়েছে।
৬। আইন সভার অভিজ্ঞতা ঃ সপ্তম জাতীয় সংসদের তিনি সদস্য ছিলেন। সংসদ সদস্য হিসাবেও তাঁর যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। সংসদে তাঁর গঠনমুলক ভুমিকা সকলের কাছে সমাদৃত হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষন ও বাজেটের উপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করে রাষ্ট্রপতির ভাষণকে বিমানবালার হাসি এবং বাজেটকে ছলনাময়ী সুন্দরী নারী হিসাবে আখ্যাতি করেন। তাঁর সাবলীল ও বুদ্ধিদীপ্ত ভাষণে ক্ষমতাসীন বিরোধী দলের সকল সদস্য প্রীত হন এবং ক্ষমতাসীন দলের সদস্যের অনুরোধ মাননীয় স্পীকার তাঁর বক্তৃতার সময় আরো বর্ধিত করেন। ইহা সংসদীয় ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
তিনি আইন, বিচার ও সংসদীয় সম্পর্কিত স্ট্যান্ডিং কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। সংসদের উত্থাপিত বিলগুলো যাচাই বাছায়েও তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে এবং জননিরাপত্তা আইন এর প্রতি তিনি নোট অব ডিসেন্ট জানান। এছাড়াও সংসদীয় দলের প্রতিনিধি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন।

রাজনীতির দার্শনিক এড. খালেকুজ্জামান

সময় এখনো মুখর দিয়ে যার স্লোগান!
– ইবনে আলতাফ
বহুদিন পর বাংলাদেশের মানুষ ফিরে পেয়েছে কথা বলার শক্তি। এতোদিন রুদ্ধ হওয়া কণ্ঠ মু্ক্িত পেয়ে যেন কোকিলের ন্যায় কোলাহলে মাতোয়ারা। প্রত্যেক্ষ স্বৈরাচার দূর হলেও ছদ্মবেশে রাজনৈতিক দলের ভেতর ব্যক্তি স্বৈরাচার এখনো জেঁকে আছে। তা থেকে পরিত্রাণ পেতে দরকার মরহুম এডভোকেট খালেকুজ্জামানের রাজনৈতিক নীতি নৈতিকতা।
মরহুম এ্যাডভোকেট খালেকুজ্জামান বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিষ্ময়ের নাম। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, শিক্ষা ও রুচিশীলতার সমন্বয়ে ভারসাম্যপূর্ণ এক মহীরুহ যেন।
তাঁর চোখজোড়া ছিল শিকারীর ন্যায় তীক্ষণ, গণমানুষের হ্নদয় দখলের প্রতি ছিল সে তীক্ষ্ণতার শেষ গন্তব্য। যিনি লেনাদেনা মেটাতেন ভালবাসার অমৃল্য মুদ্রায়। যার তামাম হ্নদয় ছিল গণমানুষের এক দস্তারখান। যেখানে বসে খেটে খাওয়া মানুষেরা ভোগ করত হ্নদয় ক্ষুধার উপাদেয় আহার। আর খালেকুজ্জামান বিনিময়ে ভোগ করত জনমনের বিরহভুনা।
দখল ও ভোগবাদের রাজনীতির বিপরীতে তিনি ছিলেন ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। সদর-রামুর প্রতিটি জনপদে এখনো জ্বলজ্বল করছে জোহরা নক্ষত্রের ন্যায় তাঁর পদচিহ্ন। অচেনা অজানা মানুষকে কিভাবে আপন হ্নদয়ের দস্তারখানায় বৈঠক দিতে হয়, সেই কৌশল সম্পর্কে তিনি ছিলেন সম্যক ওয়াকিবহাল।
বাহুবল ও কালো টাকার পাহাড় ব্যতীতও যে রাজনীতিতে অক্ষয় থাকা যায় তার প্রমাণ এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান। ২০০১ থেকে ২০২৪ এই দীর্ঘ অনুপস্থিতিতেও তিনি সদা বিম্বিত গণমানুষের হ্নদয় মুকূরে।
শহরের আরাম আয়েশ ও আলিশান চাকরীর মোহ ত্যাগ করে পা বাড়িয়েছিলেন রাজনীতির ন্যায় কণ্টকাকীর্ণ বন্ধুর পথে। তাইতো বারবার শিকার হতে হয়েছে জুলুম নির্যাতনের, আপন দলেরই দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা। কিন্তু তিনি ছিলেন সাহসে হিমালয়, ধৈর্যে আজন্ম অনড় পাহাড়। তাইতো এতটুকু বিচ্যুত করতে পারেনি তাকে গণমানুষের হ্নদয়চূড়া থেকে। যতোই আঘাত ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন ততোই প্রোথিত হয়েছেন জনপদ ও জনমনের গহীন হ্নদয়ে।
সংসদে পেছনের সারির সদস্য হয়েও তাঁর তেজস্বী বাগ্মিতা ও কালোপযোগী কথামালার জন্য হয়ে উঠেছিলেন অনন্য। উপমা, উদাহরণ ও কথার গভীরতার জন্য বাংলাদেশের মানুষ উন্মুখ হয়ে থাকত তার সংসদীয় ভাষণ শোনার জন্য।
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর এই মহাত্মন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন পরপারে। জানাযার মাঠে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছিল। কার আধিক্য বেশী? পাথারের জল নাকি খালেকুজ্জামানের ভালবাসার জন?
খালেকুজ্জামানের মৃত্যু পরবর্তী তৎপর হয়ে উঠেছিল আপন দলের সুবিধাভোগীরা। তাঁর সাজানো মাঠে ডামি খেলে হিরো হওয়ার জন্য। কিন্তু জনগণ তাদের ভালবাসার বানে ভাসিয়ে দিয়েছিল সেই লুটেরাদের। ভালবাসার সূতোয় টান দিয়ে নিয়ে আসলেন উত্তরাধিকার হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার সহিদুজ্জামানকে। এমপি নির্বাচিত হয়ে চেষ্টা করলেন গণমানুষের চাহিদা মেটাতে। তিনি গণদ্রব্য প্রতিষ্টানে এমন কিছু কাজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন যার দরুণ সেনাশাসিত সরকারও বাহবা দিতে কার্পণ্যতা করেননি।
সততার জন্য সহিদুজ্জামান পেয়েছিলেন স্বর্ণপদক। বর্তমান কালোটাকার রাজনীতি ও বাহুবল প্রদর্শনীর প্রতিযোগিতায় মরহুম এ্যাডভোকেট খালেকুজ্জামান- ইঞ্জিনিয়ার সহিদুজ্জামানের ন্যায় সৎ রাজনীতিকের বড়ই আকাল।
আল্লাহ মরহুম এ্যাডভোকেট খালেকুজ্জামানকে জান্নাত নসীব করুক।

“এই শহরের খালেক জামান”
– ইমরান হাসান জেসন

ককসোবাজার সেলাম তোমায় ট্যুরিস্ট নিয়ে ব্যস্ত খুব?
সু-স্বাগতম বিনয় মেখে ভালই কাটে রেশ তো খুব!
নো ওরি স্যার ইটস প্রিটি ফাইন থ্যাঙ্কিউ এন্ড ধন্যবাদ,
এই শহরে ট্যুরিস্ট মেলা! ট্যুরিস্ট পেলে অন্য বাদ!
লাঞ্চে পিজা ডিনারে থাই ব্যুফেও রেডি সাতটাতে!
পর্যটনের ককসোবাজার ধন্য ভিড়ের-বাট্টাতে!
হুইপও ছিল হাইপও ছিল সাধের সাগর কন্যাতে!
ভাইরালও হয় লিডিং নিউজ শহর ভাসে বন্যাতে!

এই শহরের ফুটপাতে,
অপ্সরিরা নোট হাতে!
এই শহরের রাস্তাতে,
নওজোয়ানে ড্রাগস হাতে!

এই তো শহর, এইটুকই ব্যস! অতেই খুশি তৃপ্তিতে?
কী ছিল না এই শহরে? কোন সে আলোর দ্বীপ্তিতে?

এই শহরে আচার ছিল রসম ভরা কৃষ্টিতে,
এই শহরে স্বস্তি ছিল প্রখর রোদ আর বৃষ্টিতে।
এই শহরের মানুষগুলোর শ্রদ্ধা-মায়ার ভক্তিতে,
কেউ তো ছিল জ্বলতো শহর যেই আলোকের শক্তিতে!

সত্যি ছিল অমন মানুষ সরব ছিল সংসদে!
জেল্লা নিয়ে তুলতো আওয়াজ পাওনা যেটা অংশ দে!
কণ্ঠ এমন, যার কথাকে ওজন মেপে শুনতো সব!
কী বলেছে ক্যান বলেছে স্পিকারও গুণতো সব!
রসবোধেরও শিল্প আছে সে উচ্চতা জানত কে?
কে হাসেনি? হেসেই বোঝে- সত্য এবং ভ্রান্ত কে?

শিক্ষা ছিল ডিগ্রী ছিল- আয়েশ জীবন ছাড়ল কে?
কেউ পারেনির সংজ্ঞা ভেঙ্গে হৃদয় জিতে পারলো কে?
গাঁও মানেনি ক্ষেত মানেনি ক্রোশের যোজন হাঁটতো কে?
কলজে কেটে বাটতো কে? আর চাষার মত খাটতো কে?
কে মানেনি দেহের ঘড়ি? ঘাম ঝরালো নিত্য কে?
কে দমালো দুর্নীতি আর কে ভাঙ্গে দুর্বৃত্তকে?
কে ভাবেনি ঘরের কথা? সব বিলিয়ে ক্ষান্ত কে?
বিলীন হয়ে রাজ্যপাটের মন্ত্র গোপন জানত কে?
হিংস্র থাবায় খুন ঝরিয়ে ঐক্যের আওয়াজ তুলল কে?
ভিন্নমতের হক্ব-অধিকার ফিরিয়ে দিতে জ্বলল কে?

এই শহরের শিশির কণায় কে দেখেছে বিশ্বকে-
কে দেখেনি সেই মানুষের ধূলোয় লুটার দৃশ্যকে?
এই শহরের যোগবিয়োগের কেউ কি মেলায় অঙ্ককে?
না মেলানোর কংস কে? আর যোগ মেলানোর শঙ্খ কে?

কে থাকাতে কী হয়েছে? কে হলে আজ হইত কী?
‘নেশার শহর ককসোবাজার’ এই অপবাদ রইত কি?
এই শহরে শান্তি কোথায়? এই শহরে কৃষ্টি কই?
এই শহরে তাহার মত উদার হবার দৃষ্টি কই?

এই শহরের আকাশ জানে ঐ আকাশের উচ্চ কে?
এই শহরের শ্লোগান- ‘সে চাই, নয় কলাগাছ গুচ্ছকে’!
এই শহরের ধূলোয় মাখা রক্ত-ঘামের ঘ্রাণটা কার?
এই শহরে কে নায়ক আর ভন্ড সাজের ভানটা কার?

এই শহরের মানুষ জানে একটা লোকের মূল্য-দাম,
এই শহরের খালেক জামান ঐ সাগরের তূল্য নাম।
এই শহরের খালেক মানে এই শহরের স্বপ্নলোক,
স্বপ্ন বিভোর এই শহরের সব ঘরে এক খালেক হোক।

এই শহরে খালেক নামেই সূর্য উঠে, অস্ত যায়!
খালেক নামেই জোছনা হেসে চন্দ্র ডোবার মস্ত দায়!
এই শহরে ফুলও ফোটে খালেক জামান ঘ্রাণে,
খালেক জামান মানে- এই শহরটা ঠিক জানে।

এই শহরের দেয়াল জুড়ে খালেক জামান আঁকা,
এক ‘খালেকুজ্জামান’ ছাড়া এই শহরই ফাঁকা।

বৈষম্যের বিপরীতে ভালোবাসার খালেকুজ্জামান
– ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান
সাধারণ মানুষের মধ্যে গণজাগরণ, ভালোবাসা আবেগের চূড়ান্ত স্ফূরণ ঘটে ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০০১। কক্সবাজারের অলিগলি, রাজপথ প্রকম্পিত করে ধানের শীষ আর খালেকুজ্জামান। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ আওয়ামী লীগের শাসনামল- দীর্ঘ ২০ বছর পর আবারও ক্ষমতায় আরোহন। জনগণ আওয়ামী লীগের শাসনে হত্যা, মামলা, দখল আর অত্যাচারে ম্রিয়মাণ আর তখনই খালেকুজ্জামান সংসদের ভিতরে বাইরে এক প্রতিবাদী নক্ষত্র। দলের ভিতরে ও সরকারের সমস্ত চাপের মুখে নিজস্ব স্বকীয়তায় জনগণকে সম্পৃক্ত করে ভালবাসায় আমজনতাকে বৈষম্য বিরোধী অনবদ্য ধারায় উজ্জীবিত করেছিলেন। সাধারণ মানুষের দুঃখ বেদনা ক্ষোভ আশা ভরসাকে ধারণ করে তাদেরই একছত্র ভালোবাসার নেতা হয়ে উঠেছিলেন খালেকুজ্জামান। নির্বাচন যত কাছে আসছিল তত বেশি খালেকুজ্জামানের জনপ্রিয়তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। যদি বিশ্লেষণে যাই- মানুষের যে চাহিদা, স্বপ্ন ছিল সেটা পূরণ করার জন্য বিএনপি দলীয় রাজনীতি ধারণ করে মানুষের ভেতর এক জাগরণ সৃষ্টি করা খুব সহজ বিষয় নয়। কারণ, সেটা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা এবং তার বাস্তবায়ন একটি দূরহ কাজ। বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তি খালেকুজ্জামান ভালোবাসার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে জনগণকে এক মোহনীয় সুরে আবৃত করেছেন।
২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছিল তত বেশি জনগণের মাঝে ভালোবাসার ঢেউ প্রবাহিত হয়েছিল। তখনো অস্ত্রের ঝনঝনানি, কালো টাকার আগ্রাসন, কালো মেঘের অশনি সংকেত। ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০০১ ঈদগাহ হাই স্কুল মাঠে নির্বাচনী জনসভায় ছিল রাস্তায় রাস্তায় মিছিল, মানুষ আর মানুষ। মুখে ধানের শীষ ও খালেকুজ্জামান ধ্বনিতে মুখরিত জনপদ। ঈদগাহ হাইস্কুল মাঠে জনতার ঢল। সেই জনসভায় খালেকুজ্জামানের আবেগী উচ্চারণ- “আমি খালেকুজ্জামান যদি ১০ বার মৃত্যুবরণ করে জন্মগ্রহণ করি তাহলে আপনাদের ভালোবাসার ঋণ শোধ করতে পারবোনা।”
নিশ্চয়ই ভালোবাসার রাজনীতি কালো টাকার চেয়ে বেশী শক্তিশালী। তার রাজনৈতিক দর্শন ভালোবাসার শক্ত খুঁটির উপর দ-ায়মান। শত বৈষম্য, অত্যাচার, নিপীড়নের বিপরীতে অন্যতম শক্তি ভালোবাসা। ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০০১, রামুর জনসভা – নির্বাচনের আর ৩ দিন বাকি। কক্সবাজারের জনগণ তাদের রায় ঠিক করে ফেলেছে, খালেকুজ্জামানকে ভোট দিয়ে তাদের ভালোবাসা আশা ভরসার আস্থায় অধিষ্ঠিত করবে। সেদিনের দৃশ্য ভুলবার নয়, জনতার স্রোতে তোলপাড় রামু। সভাস্থল (খালেকুজ্জামান চত্বর) ছাপিয়ে জনারণ্য আশেপাশের পুরো এলাকা ছড়িয়ে পড়েছে। সড়কজুড়ে মিছিল আর মানুষের ঢেউ, এমতাবস্থায় জনসভার স্থানে পৌঁছানো বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। খালেকুজ্জামান স্বভাবজাত ভঙ্গিমায় মানুষকে আলিঙ্গন করে কাছে টেনে নিতো, তাই তাঁর এই শোভাযাত্রা অত্যন্ত ধীরগতি সম্পন্ন। সাগর থেকে মুক্তা আহরণের মত তিনি মানুষের ভালোবাসা কুড়িয়ে কুড়িয়ে এগোচ্ছিলেন। মঞ্চে পৌঁছানোর আগে বুকের ব্যথা নিয়ে তিনি পড়ে গেলেন। কক্সবাজারবাসী তাদের ভালোবাসার মানিককে এভাবে পড়ে যেতে দেখে হতবিহবল, বাকরুদ্ধ। জনতার স্রোত ঠেলে হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ডাকে কক্সবাজারের ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। তাঁর রাজনৈতিক যাত্রাপথ সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ। সকল স্তরের, সকল ধর্মের ও সব মত পথকে এক করে সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন।

আজকে ২৩ বছর পর জনগণের মাঝে খালেকুজ্জামানের সব বৈষম্যে বিরোধী, সম্প্রীতি ও ভালোবাসা জ্বাজল্যমান হয়ে উঠুক।

লেখক ঃ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান, সাবেক সংসদ সদস্য, কক্সবাজার-০৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও)