আশরাফ বিন ইউছুপ, সিবিএন

কক্সবাজার শহরের বড়বাজার এলাকায় মা-মেয়ের যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠেছে মাদকের হাট; আর মাদকের টাকায় তারা এখন অনেক স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক।

অভিযোগ উঠেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে চলছে মা-মেয়ের মাদকের এই যৌথ হাট। তবে সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা এ ধরণের অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছেন।

মাঠ পর্যায়ে প্রাপ্ত তথ্য মতে, মাদকের এই যৌথ হাটের মালিক ঈদগাঁও উপজেলার নাপিতখালী দুদুমিয়া ঘোনার মৃত আলী আহমেদের মেয়ে রোকসানা আক্তার এবং তার মেয়ে রোমেনা আক্তার। তবে তারা দীর্ঘদিন ধরে বড়বাজার এলাকায় বসবাস করে মাদকের এ রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মা-মেয়ে মাদকের চালান সংগ্রহ করে ঈদগাঁওয়ের গ্রামের বাড়ীতে মজুদ রাখেন। পরে তা প্রতিদিনের চাহিদা অনুসারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চালান আকারে নিয়ে এসে চক্রের সদস্যদের হাতে তুলে দেন।

মা-মেয়ের যৌথ সিন্ডিকেটে কমিশন এজেন্টে কাজ করে কয়েকজন। তাদেরই একজন কক্সবাজার শহরের বড়বাজার রাখাইন পাড়ার বাসিন্দা বাদলা রাখাইনের মেয়ে পেরতি মগ। মূলত মা-মেয়ের সিন্ডিকেটের মাদকের চালান পেরতি মগ খুচরা আকারে বিক্রি করে থাকে।

শুরুর দিকে মা রোকসানা আক্তার নিজেই খুচরা আকারে মাদক বিক্রি করতো। পরে তার মেয়ে রোমেনা আক্তারও মাদক কেনাবেচায় জড়িয়ে পড়ে। এখন রোমেনা নিজেই একা মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে। আর মাদক বিক্রির টাকায় মা-মেয়ে এখন অনেক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মালিক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদকের টাকায় মা-মেয়ে যৌথভাবে ঈদগাঁওতে গ্রামে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ৩৩ শতকের বেশী জমি কিনেছেন। আর বড়বাজার এলাকায় জনৈক স্বর্ণ ব্যবসায়ি বাদনের দোকানে কোটি টাকার বেশী স্বর্ণালংকার কিনে জমা রেখেছেন।

এ নিয়ে সচেতন মহল বলছেন, এক সময় নুন আনতে পান্তা পুরানো সংসারে এখন লেগেছে বিত্ত ভৈবের ছোঁয়া। মাত্র ৮/১০ বছরে মা-মেয়ের বিপুল সম্পদের মালিক বনে যাওয়া নিয়ে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের। তাদের প্রশ্ন, কোন আলাদীনের চেরাগের ছোঁয়ায় এতো সম্পদের মালিক বনে যাওয়া?

সরেজমিন দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরের বড়বাজার এলাকার রাখাইন পাড়া, নারিকেল গাছতলা এবং পৌরসভা মার্কেটের পাশে তিনরাস্তার মোড়ের খাম্বারগোড়া এলাকায় প্রতিদিন দিনে-রাতে রোমেনা আক্তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা মাদক বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। এক প্রকার প্রকাশ্যেই চক্রটির লোকজন মাদক বিক্রি করে চললেও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের তেমনটা তৎপরতা চোখে পড়েনি। অভিযোগ রয়েছে, মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর সহ আইন শৃংখলা বাহিনীর কতিপয় অসাধু লোকজনের যোগসাজশে চক্রটির সদস্যরা মাদক বিক্রিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোমেনার মাদক বিক্রির সাথে বাঙ্গালীদের পাশাপাশি রাখাইন সম্প্রদায়ের কতিপয় লোকজনও জড়িয়ে পড়েছে। মূলত পেরতি মগ নামের রাখাইন সম্প্রদায়ের জনৈক নারী খুচরা পর্যায়ে মাদক বিক্রির কাজ নিয়ন্ত্রণ করেছে। চক্রটি প্রতিদিন অন্তত কমপক্ষে ২০০ পোটলা গাঁজা এবং ২০০ টি ইয়াবা বিক্রি করে থাকে। আর প্রতিদিন মাদকের হাটে খুচরা বিক্রির পরিমান অন্তত ৫০ হাজার টাকার বেশী।

এ নিয়ে অভিযুক্ত রোমেনা আক্তার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার না করে বলেন, ব্যবসা আগে করতাম কিন্ত এখন ছেড়ে দিয়েছি। আগে ব্যবসা করতাম আফগারিকে ( মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর ) মাসে ৫ হাজার টাকা করে মাসোহারা দিয়ে। কিন্তু এখন আর মাদক ব্যবসা করেন না।

রোকসানা আকতার বলেন, আগে ব্যবসা করতাম ঠিক, কিন্তু এখন ছেড়ে দিয়েছি।

মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ( এডি ) সিরাজুল মোস্তফা বলেন, মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগটি সত্য নয়।

মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কতিপয় সদস্যকে মাসোহারা দেয়ার বিষয়ের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রমাণ দিতে পারবেন? তারপরও গাঁজা ও ইয়াবা বিক্রির বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।