আবুল কাসেম আশরাফ

বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বে আজ চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। সমাজ জীবনে নেমে এসেছে নৈরাজ্য। সত্য-সুন্দর, নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে মানুষ হয়ে উঠেছে অসহিষ্ণু। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে দেখা যাচ্ছে নানা বিপর্যয়। এর হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই প্রকৃত মানুষ তৈরি করতে হবে। সৃষ্টি করতে হবে আলোকিত মানুষ।একমাত্র ভালো মানু‌ষেরা পারে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করতে। তাই সবক্ষেত্রে আদর্শবান মানুষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

এখন প্রশ্ন হলো, ভালো মানুষ কারা ? তাদের বৈশিষ্ট্যই বা কি ? মানবিক উন্নত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, নৈতিকতার বিশেষণে ভূষিত ও উত্তম চারিত্রিক গুণে গুণান্বিত মানুষকেই ভালো মানুষ বলা যায়। এই গুণমান মানুষেরাই সমাজের মূলভিত্তি। যাদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সততা এবং কর্ম মানুষকে সত্যিকারের মানুষ হতে অনুপ্রাণিত করে। তারাই আদর্শবান ও ভালো মানুষ।

আলোকিত মানুষ হতে হলে অবশ্যই ভালো মানুষ হতে হবে। ভালো মানুষেরা অন্তর থেকেই ভালো, তারা ভালো শুনে, অপরকে আনন্দ দেয় আর সবাইকে আপন করে নেয়। অন্তর থেকে কেউ ভালো মানুষ না হলে তার পক্ষে আলোকিত মানুষ হওয়া সম্ভব নয়।সহজবোধ্যভাবে বলা যায়,ভালো মানুষের মধ্যে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সততা, পরোপকারিতা, বিনয়ী এবং সত্য সন্ধানের ইচ্ছাশক্তি থাকে প্রবলভাবে।

আমাদের বর্তমান সমাজ যে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে তার থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সমাজের ভালো মানুষগুলিকে সামনে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম অস্থির সময় পার করছে। ভিন্ন সংস্কৃতির আগ্রাসনের দোলাচলে ভাসছে, প্রতিনিয়তই বিভ্রান্ত হচ্ছে। ভালো-মন্দ বিচার করতে গিয়ে সংকটে পড়ছে।সঠিক পথ বেছে নিতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের দিকনির্দেশক হতে পারেন একমাত্র ভালো মানুষেরা।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্ম লগ্নে আরবের অবস্থা কতটা খারাপ ছিল তা আমাদের সকলেরই জানা। সেই সময় সভ্যতা বলতে কোন কিছুই ছিল না;ছিল না মানুষের মুল্যবোধ বলতে কোন কিছুই। এমন এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারে নিমজ্জিত সমাজকে মুহাম্মদ (সাঃ) তার নীতি- আদর্শ এবং কোরআনের আলো দ্বারা সবচেয়ে বেশি আলোকিত করেছিলেন।তিনি যে আদর্শ রেখে গেছেন আমরা যদি তা ধারণ করে চলি,তাহলে সমাজে কোন ধরনের অন্যায়-অবিচার থাকবেনা।

আমরা এ পৃথিবীতে সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ জীব হয়ে জন্মেছি। ভুল-ত্রুটি নিয়েই আমাদের জীবন চলা। ভালো-মন্দ মিলিয়েই আমাদের বেঁচে থাকা। পৃথিবীর বিরাট জনসংখ্যার সব মানুষই আলোর সন্ধান পায় না। যারা পান তারাই হয়ে ওঠেন সচেতন, বিবেকবান, নৈতিকতাসম্পন্ন, চারিত্রিক সৌন্দের্যে বলীয়ান। যারা ভালো, আদর্শবান, শ্রেষ্ঠ মানুষ তাদের জীবনের সৌন্দর্যের আলোতেই আলোকিত হয় পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সহ গোটা বিশ্ব।

বর্তমানে গোটা পৃথিবী জুড়েই চলছে আধিপাত্যের যুদ্ধ, বৈষম্য,ভৌগোলিক দখলদারিত্বের শক্তি প্রদর্শন ইত্যাদি। মুক্তির পথ দিনে দিনে রুদ্ধ হয়ে আসছে।অপ-সংস্কৃতির দৌরাত্মে সমাজের বন্ধন ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। রক্তের বন্ধন দিনে দিনে শীতলতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিবেকবান মানুষের পরিবর্তে রক্তচোষা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধনী-দরিদ্র্যের মধ্যে বৈষম্যের মাত্রা সীমানা অতিক্রম করছে।এইসব চিত্র দেখে মনে হয়, মানুষের কাছে মানুষের মূল্যই সবচেয়ে কম। মানবিক নূন্যতম মর্যাদা আজ মানুষের নেই। ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হচ্ছে অসহিষ্ণুতা ও সামাজিক অস্থিরতা। যা আমাদের গোটা সমাজের সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করছে। মানবতা বিপন্ন হচ্ছে ।
মানুষে মানুষে বিশ্বাসের জায়গাটা আজ এতটাই সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে যে, কেউ কারো কাছে নিরাপদ নয়। কোনটি আদর্শ আর কোনটি অনাদর্শ তা নির্ণয় করার মত যোগ্যতা বোধ হয় আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো জ্ঞানী ও গুণী মানুষের কদর কমে যাওয়ায় যারা জ্ঞান চর্চা করেন তারা আর সমাজে উম্মোচিত হতে চান না। এটা একটি সুষ্ঠু সমাজ গঠনের বিরাট প্রতিবন্ধকতা।

এটাতো বাস্তব,একটি সমাজ এভাবে বেশি দূর এগোতে পারে না। এখনই পরিবর্তনের সূচনা করতে হবে। এই অধঃপতনের হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন ভালো মানুষের সংস্পর্শ। তাই জাতি আজ সেইসব সৌভাগ্যবান ভালো মানুষের খোঁজে অন্তহীন অপেক্ষার প্রহর গুনছে।

 


সহকারী শিক্ষক,খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ,খরুলিয়া, সদর, কক্সবাজার।