জালাল আহমদ :
বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকা কক্সবাজার এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামে নির্ধারিত সময়ের ১৫ ঘন্টা আগেই হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড় “হামুন” আঘাত হানার ফলে মানুষের ঘর,বাড়ি, দোকান, গাছপালা এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় হামুন সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৪৮ কিলোমিটার বেগে তাণ্ডব চালিয়েছে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায়।ফলে পেকুয়ার মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বুধবার মধ্যরাত একটার দিকে ঝড়টি বাংলাদেশের পুরোপুরি উপকূূল অতিক্রম করে স্থলে উঠে আসে। এরপর স্থলভাগের ওপর দিয়ে যেতে যেতে বৃষ্টি ঝড়িয়ে আরও দুর্বল হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপের আকারে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ওপর দিয়ে বয়ে যেতে থাকে।
তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই তথ্যের সাথে বাস্তবতার মিল নেই। কক্সবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মতে , ঘূর্ণিঝড় হামুন মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে আটটা থেকে নয়টার দিকে প্রবাহিত হয়। হামুন তীব্র বেগে প্রবাহিত হয়েছে এবং সাথে প্রচুর বৃষ্টি ছিল।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মানুষের ঘর, বাড়ি, দোকান, গাছপালা এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মানুষের ঘর -বাড়ি ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। খোলা আকাশের নিচে মানুষ বসবাস করছেন।রাস্তায় পড়া থাকা গাছপালা সাধারণ মানুষ পরিস্কার করে চলাচলের ব্যবস্থা করছেন।
ঘূর্ণিঝড় হামুন প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা জানান, “ঘূর্ণিঝড় হামুন আজ ২৫ অক্টোবর (২০২৩) বুধবার দুপুরে আঘাত হানার কথা ছিল। আমরা
সেটার উপর ভিত্তি করে গত সোমবার রাতে চার নাম্বার সংকেত শোনার থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের
সিপিপি’র(সাইক্লোন প্রিপারডনেস প্রোগ্রাম/ ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবক) সদস্যরা দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন।তারা মাইকিং করেছেন।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার সকালে সব গুলো সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করা হয়েছে এবং দুপুর সাড়ে বারোটায় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং হয়েছে । সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি। আমি নিজেই মগনামা ,উজানটিয়া এবং রাজাখালী ইউনিয়নে গিয়েছি।
হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গতকাল সন্ধ্যা নাগাদ আমরা জানতে পারি ঘূর্ণিঝড়টি দিক পরিবর্তিত হয়ে কক্সবাজারের দিক আসছে। আমি নিজেই তখন মগনামায় স্পটে ছিলাম।সিপিবি সদস্যরা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তিনি জানান, একটা পেকুয়া উপজেলাবাসীর জন্য সুখবর যে এখানে কেউই নিহত হয়নি।ঘূর্ণিঝড়ের স্থায়িত্ব ছিল সর্বোচ্চ আঝ ঘন্টা। ফলে কিছু ঘর বাড়ি উড়ে গেছে।কিছু কিছু ঘর চ্যাপ্টা হয়ে বসে গেছে। প্রায় ৬০০ ঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত।
বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য পেকুয়া উপজেলা পল্লী বিদ্যুতের এজিএম কাজ করছে বলে জানান তিনি।
পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু তাহের জানান, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,৬০০ ঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত এবং ৮০০ ঘর বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আমাদের ডিসি অফিস থেকে চাল ডাল ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরো কিছু বরাদ্দ চাওয়া হবে।
কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের সিকদার পাড়ায় সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ এর বাড়ি।ভারতে নির্বাসিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যের বাসা এবং বাগান দেখাশোনা করেন তাঁরই নিকট আত্মীয় এবং স্থানীয় সাংবাদিক ছফুওয়ানুল করিম। তিনি জানান, সরকারী প্রচার ও প্রচারণার অভাবে মানুষ ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে আগাম তথ্য পান নি।ফলে মানুষ সতর্ক হয় নি।
তিনি আরো জানান, হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড় হামুন আঘাত হানার ফলে সাহেবের (সালাহউদ্দিন আহমেদ এর) বাগান বাড়ির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁর অনুপস্থিতিতে অত্যন্ত যত্নের সাথে এই বাগান বাড়িটি গড়ে তুলেছিলাম। এখন তছনছ হয়ে গেছে পুরো বাগান।
শিল খালী ইউনিয়নের সবুজ পাড়ার বাসিন্দা ঢাকার সরকারী তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবু সালেহ জানান , এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ফলে আমাদের বাড়ির চালা উঠে যায়। ঘরের মাটির দেয়াল বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে। রাস্তা ঘাট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।