আব্দুস সালাম,টেকনাফ:
মিয়ানমার অভ্যন্তরে দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর চলমান যুদ্ধে থমকে ছিল নাফ নদীর উভয় পাড়ের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের কোথাও গত চার দিন ধরে মর্টার শেল, গ্রেনেড-বোমা বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে না। গত চার দিন ধরে শান্ত রয়েছে মিয়ানমার সীমান্ত। নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ এলাকা থেকে ভেসে আসেনি মর্টার শেল ও গ্রেনেড-বোমার বিস্ফোরণের শব্দ। এতে নাফ নদীর এপারে টেকনাফ সীমান্তের মানুষের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিমপাড়ার আব্দুস শুক্কুর বলেন, গত তিন রাত সেন্টমার্টিনের মানুষ মর্টার শেলের বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাননি, ভালোভাবে ঘুমাতে পেরেছেন। অথচ বৃহস্পতি ও শুক্রবার পুরো দ্বীপেই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, গত চার দিন ওপার থেকে বিস্ফোরণের শব্দ আসেনি। তবে যেকোনো সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে আবার সংঘাত শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা দুই মাস ধরে রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সে দেশের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াই চলছে। ইতিমধ্যে মংডু টাউনশিপের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশের রাচিডং টাউনশিপসহ ১২টি থানা আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে এর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে টিকতে না পারে কয়েক দিন আগে তিনজন সেনাসদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগে ১১ মার্চ আশ্রয় নেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ১৭৭ জন সদস্য। তাঁরা সবাই নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) হেফাজতে রয়েছেন। কয়েক মাস আগে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন ৩৩০ জন সেনা ও বিজিপি সদস্য। গত ১৫ ফেব্রæয়ারি তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়।
এদিকে পরিস্থিতি শান্ত থাকায় টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি হচ্ছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিথওয়ে (আকিয়াব) বন্দর থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি পণ্যবোঝাই কার্গো ট্রলার ও জাহাজ আসা-যাওয়া শুরু করেছে। সোমবার ও মঙ্গলবার  বিকেলে সিথওয়ে থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই কয়েকটি ট্রলার বন্দরে ভিড়েছে। শ্রমিকরা ট্রলার থেকে কাঠ ও হিমায়িত মাছ, নারকেল, আচার, মুগ ডাল, শুঁটকি, শুকনো সুপারি খালাস করছেন শ্রমিকেরা।
মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানিকারক ওমর ফারকি বলেন, রাখাইন রাজ্যে টানা দুই মাসের সংঘাতে টেকনাফ স্থলবন্দরে ৮০ শতাংশ পণ্য আমদানি কমেছে। আগে দৈনিক ১৫ থেকে ২০টি পণ্যবোঝাই ট্রলার-জাহাজ এলেও এখন আসছে সপ্তাহে সাত-আটটি। সংঘাত বাড়লে স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি বন্ধের আশঙ্কা রয়েছে।
টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক বিভাগের কাস্টমস সুপার বি এম আবদুল্লাহ আল মাসুম গণমাধ্যমকে বলেন, গত ১২ দিনে সিথওয়ে থেকে পণ্য বোঝাই ১২ থেকে ১৪টি কার্গো ট্রলার বন্দরে ভিড়েছে। রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। রাজস্ব আয় কমে গেছে। গত জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মিয়ানমারে পণ্য রফতানি বন্ধ রয়েছে।
উল্লেখ্য, টানা দেড় মাসের বেশি সময় ধরে রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সে দেশের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াই চলছে। ইতোমধ্যে মংডু টাউনশিপের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশের রাচিডং টাউনশিপসহ ১২টি থানা আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে টিকতে না পারে কয়েক দিন আগে তিনজন সেনাসদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগে ১১ মার্চ আশ্রয় নেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ১৭৭ জন সদস্য। তাঁরা সবাই নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) হেফাজতে রয়েছেন। কয়েক মাস আগে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন ৩৩০ জন সেনা ও বিজিপি সদস্য। গত ১৫ ফেব্রæয়ারি তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়।