জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
গতকাল ১২ মার্চ শনিবার সকাল ৮ থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে দশটার দিকে শেষ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের উদ্যোগে শতবর্ষের মিলনমেলা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে -ছিটিয়ে থাকা সাবেক ঢাবিয়ানেরা । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গল্প ,আড্ডা এবং খুনসুটিতে মেতে উঠেছিলেন সবাই। ছিল আনন্দ-বেদনা এবং অভিযোগের তীর।
এসব নিয়েই শতবর্ষের মিলনমেলার টুকিটাকি সংবাদ।
সপরিবারে এসেছিলেন মাহবুব তালুকদার: — ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র, সাবেক আমলা ও বহুল আলোচিত সাবেক নির্বাচন কমিশনার ওয়ান ম্যান আর্মি খ্যাত মাহবুব তালুকদার নিজের স্ত্রী এবং মেয়েকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষের মিলনমেলায় এসেছিলেন। তিনি বলেন নাড়ির টানে অনুষ্ঠানে এসেছি। ভালো লাগছে। বেশি কিছু বলতে চাই না। বয়স হয়েছে ।কী বলতে কী বলে ফেলি তার ঠিক নাই।

সস্ত্রীক এসেছিলেন সাবেক জিএস খোকন:
১৯৯০-৯১ সেশনের ডাকসুর সাবেক জিএস এবং বিএনপির বর্তমান জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব , নরসিংদী সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খায়রুল কবির খোকন এবং তার স্ত্রী রোকেয়া হলের সাবেক ভিপি শিরিন সুলতানা একে অপরের হাত ধরে এসেছিলেন শতবর্ষের মিলন মেলায়।
খোকন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের প্রোগ্রামে আসতে পেরে আনন্দিত। আমাদের আবেগ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
সার্বজনীন প্রোগ্রামের দাবি সাবেক ছাত্রনেতার- সুপ্রিম কোর্টের বিএনপি সমর্থিত বিশিষ্ট আইনজীবী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ছাত্র সংসদের সাবেক এজিএস এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে করোনার কারণে আমরা পরস্পর থেকে দূরে ছিলাম। অনেকের সাথে অনলাইনে যোগাযোগ হতো। কিন্তু আজকে শতবর্ষের মিলনমেলার সুবাদে আমরা এক মোহনায় মিলিত হতে পেরেছি।দলমত নির্বিশেষে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এলামনাই এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হওয়া উচিত। দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সার্বজনীন প্রোগ্রাম হওয়া উচিত।
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের ঢল: শতবর্ষের প্রোগ্রামে মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। চ্যানেল আইয়ের মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক সাইফুল আলম, জিটিভির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা , নিউজ টুয়েন্টিফোর এর বার্তা প্রধান রাহুল রাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সাংবাদিক আসিফুর রহমান ত্বাসীনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের শতাধিক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এসেছিলেন শতবর্ষের মিলনমেলায়।

সেলফি তুলতে জটলা:
দীর্ঘদিন পর কাছের মানুষদের কে পাশে পেয়ে সেলফি তুলতে জটলা পাকিয়েছে অনেকেই।

ডায়াসের সামনে ছবি তোলার ভিড়: অনুষ্ঠানে সচরাচর অতিথিরা ডায়াসে বক্তব্য রাখেন। কিন্তু শতবর্ষের প্রোগ্রামে দুপুরের বিরতিতে ডায়াসের সামনে ছবি তোলার ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকায় ফেসবুকে পোস্ট করতে পারে নি অনেকেই। তাই ক্ষোভ ছিল বেশি।

শেরে বাংলা দরদী সাবেক ঢাবিয়ান:
সাবেক জজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক ছাত্র গোপালগঞ্জ নিবাসী শরীফ লুতফুর রহমান অভিযোগ করেছেন, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ গুলো চালু করার ক্ষেত্রে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের অবদান অনস্বীকার্য।অথচ
শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের কোন ছবি ,নাম- গন্ধ নেই।
নি:সঙ্গ -একাকী এসেছিলেন অনেকেই : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ছাত্রী , সাবেক ছাত্রনেতা ডাক্তার মরহুম জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকুর স্ত্রী খুজিস্তা নুর ই নাহরিন মুন্নি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০০৪-০৫ সেশনের ছাত্র এবং ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ এরশাদ খানের মতো অনেকেই এসেছিলেন নি:সঙ্গ ও একা । এরশাদ খানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সমসাময়িক বন্ধু-বান্ধরা সবাই প্রতিষ্ঠিত।কেউ কেউ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সমমর্যাদা পদে চাকুরী করছেন। কিন্তু তিনি এখনো বেকার ।
শুধু মাত্র ছাত্রদলের গত কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ার কারণে কোথাও তার চাকরি হয় নি। তাই তিনি এখনো অবিবাহিত থেকে গেছেন।

দেখাদেখি হলেও কথা হয় নাই রাজনৈতিক নেতাদের:

শতবর্ষের প্রোগ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের দেখাদেখি হলেও তাদের মধ্যে কথা হয় নাই। কুশল বিনিময় পর্যন্ত হয় নাই।
অনুষ্ঠানে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খনিজ সম্পদ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সুভাষ সিংহ রায় , ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান এমপি , জাসদ একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন,ডাকসুর সাবেক এজিএস বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন আলম , বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মোশাররফ হোসেন সহ অগণিত রাজনৈতিক নেতা।এসব রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে দেখা হলেও কথা হয় নাই। এটা নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেছেন।