রাজু দাশ ,চকরিয়া :
কক্সবাজারের চকরিয়ায় থেমে নেই অনলাইনে ক্রিকেট জুয়া খেলার আসর। অনলাইনে ওয়েবসাইট ‘বেট ৩৬৫’ বা ‘বেট এশিয়া ৩৬৫’-এ একাউন্টের মাধ্যমে চলচ্ছে এই জুয়ার আসর। কারো হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন থাকলেই খেলা যায়। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে জুয়ার রমরমা বাণিজ্য। জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে প্রতিনিয়ত পারিবারিক অশান্তিসহ ভুক্তভোগীরা সর্বস্বান্ত হচ্ছে। অনলাইনে জুয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আয়োজক চক্র।

সরেজমিনে দেখা যায়, চকরিয়া পৌরশহরে
কিছু এলাকা জুড়ে পাড়ায় পাড়ায় চায়ের দোকানের টিভিতে সম্প্রচারিত খেলাকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে জুয়ার বাজি ধরার মহাআসর। চায়ের দোকান গুলোতে একদল মানুষ মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে টেলিভিশনে খেলা দেখছেন। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সবাই খুবই মনোযোগ সহকারে খেলা দেখছেন। বাস্তবতাও তাই। কারণ সাধারণত ক্রিকেটের সঙ্গে যারা জড়িত তারা সব ক্রিকেট দল ও খেলোয়াড় সম্পর্কে বিস্তর তথ্য রাখেন। তবে এই জুয়াড়িরা পেশাদারদের চেয়েও বেশি তথ্য রাখেন। নবাগত ক্রিকেটারদের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের শত শত ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার যেন মুখস্ত তাদের।
এ ক্রিকেট জুয়ার ছড়াছড়ি সমাজের অভিজাত- শিক্ষিত শ্রেণী ছাড়িয়ে তরকারি বিক্রেতা, নাপিত, হোটেল কর্মচারী, ফল বিক্রেতা, বিভিন্ন পরিবহনের শ্রমিক (হেলপার ও কন্ডাক্টর) নির্মাণ শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার লোকেরা জড়িয়ে পড়ছে। বাদ পড়ছে না স্কুল ও কলেজগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও। একটি ওয়েবসাইট মাধ্যমে লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি হয়। আবার দোকানে বসে জুয়া খেলার বিষয়ে শর্তও আছে দোকানিদের। খেলা দেখলে একজন থেকে ২০ টাকা দিতে হবে দোকানদারকে। আবার কোনো কোনো দোকানে দোকানি নিজেই জুয়াড়ি।

দোকানে থাকা কিছু সংখ্যক ব্যক্তিরা বল প্রতি, ওভার, দল, খেলোয়াড়, রান সব বিষয়েই নগদে মৌখিক জুয়া চলে। এমনকি এক ওভারে কয়টি ডট বল হবে এ বিষয় নিয়েও চলে তুমুল জুয়া।

আবার মুখোমুখি বসে জুয়া খেলার পাশাপাশি দোকানে বসেই অনেকে বাজি ধরেন অনলাইনে। বেটিং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে চলে মোটা অঙ্কের লেনদেন। মোবাইল ফোনে ভিপিএন চালু করে এই জুয়ায় মেতে ওঠেন জুয়ারিরা। বেট৩৬৫, ওয়ানএক্স বেটসহ বিভিন্ন নামি ও বেনামি ওয়েবসাইটে চলে ক্রিকেট বেটিং। আর জুয়াড়িরাও তাদের কাজে বৈচিত্র্য এনেছে। মোবাইল ফোনে, ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংকেতিক ভাষায় এ জুয়া চালাচ্ছে।

ক্রিকেট জুয়াড়ির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুয়াড়িরা খেলা শুরুর আগে কয় উইকেটে কোন দল জিতবে, কোন খেলোয়াড়ের কত ওভার মেডেন হবে, কত ওভারে কত রান হবে, কোন খেলোয়াড় হাফ সেঞ্চুরি বা সেঞ্চুরি করবে এসব বিষয়ে বাজি ধরা হয়। অনেক সময় প্রতি বলে বলেও বাজি ধরা হয়। আর বাজির টাকা নগদে পরিশোধ করতে হয় সঙ্গে সঙ্গে। না পারলে মোবাইল ফোন, স্বর্ণের বিভিন্ন অলঙ্কার, গাড়ি বা টাকা না থাকলে সুদে ঋণ দেয়ারও ব্যবস্থা আছে। অনলাইনে ওয়েবসাইটে জুয়া খেলতে অনলাইনে ডলার বা কয়েন কিনতে হয়। সেই ডলার বা কয়েন বিক্রি করতেও খেলা শুরুর আগে থেকে এসব চায়ের দোকানে সক্রিয় থাকেন একদল ব্যবসায়ী।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার চায়ের দোকানে জুয়ারিদের এমন ভিড়ের কারনে তারা নিজেরাও বেশ অতিষ্ঠ। জুয়ারিদের ভিড়ে কোনো দোকানে বসে এক কাপ চা খাওয়ার পরিস্থিতিও থাকেনা। পাশাপাশি তাদের চিল্লাপাল্লাও অসহনীয়। এদের বেশিরভাগই বখাটে, মাদকাসক্ত শ্রেনীর। তাই তাদের সাথে বেশি জোর দিয়ে কথা বলা যায়না। এ জুয়া খেলার জন্য চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি থেকে শুরু করে পারিবারিক সহিংসতা এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরির করছে। জুয়ারিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয় লোকজন।