সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
কক্সবাজার শহরে আদালত পাড়া থেকে তুলে নিয়ে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫জনসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা রজু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) দুপুরে ওই নারী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলায় প্রধান আসামী করা হয় ওই নারীর বর্তমান স্বামী ফিরোজ আহমদকে।অপরাপর আসামীরা হলেন, রাসেল উদ্দিন, নুরুল ইসলাম ও মো. শরীফ। এদের মধ্যে মো. শরীফ ঈদগাঁও উপজেলা আ’লীগ নেতা ও ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। রাসেল উদ্দিন, নুরুল ইসলাম শহরের বাসিন্দা ও আপন সহোদর। কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ওই নারীর লিখিত এজাহারটি মঙ্গলবার দুপুরে মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। থানার মামলা নং-৫৬,জিআর নং-১৭৭। ভুক্তভোগী নারীর শারীরিক পরীক্ষার জন্য তাঁকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও আওলিয়াবাদ এলাকার বাসিন্দা ওই নারী তার দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখ করেন, ফিরোজ ও শরীফের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার দুপুরে তিনি কক্সবাজার আদালত এলাকায় এক আইনজীবীর কার্যালয় থেকে বের হলে আসামিরা তাঁকে ঘিরে ফেলেন। একপর্যায়ে ফিরোজ ও শরীফসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন এসে তাঁর হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেন। ফিরোজ ওই নারীর স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেন।
এরপর কক্সবাজার ল্যাবরেটরি স্কুলসংলগ্ন (বাহারছড়া) এলাকায় ফিরোজের আত্মীয় ফজল কাদেরের বাসায় নিয়ে ওই তরুণীকে আটকে রেখে ফিরোজ ও শরীফ তাঁকে ধর্ষণ করেন। পরে একইভাবে নুরুল ইসলামও তাঁকে ধর্ষণ করে তাঁর মুঠোফোন ও টাকা নিয়ে চলে যান। কিছুক্ষণ পর রাসেল উদ্দিন ওই কক্ষে এসে নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন। ধর্ষণের বিষয়টি কাউকে জানালে অথবা বাড়াবাড়ি করলে মানব পাচার মামলায় চালান করে দেওয়ার হুমকি দেন রাসেল। একপর্যায়ে রাসেলও ওই নারীকে ধর্ষণ করেন।
দলবদ্ধ ধর্ষণের কারণে একপর্যায়ে ওই তরুণী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর রাসেল ও শরীফ ওই নারীকে টেনেহিঁচড়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসেন। এ দৃশ্য দেখে রাস্তায় থাকা এক ব্যক্তি তাৎক্ষণিক জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল দিলে আসামিরা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে ওই নারীকে উদ্ধার করে।
ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন,এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধরতে পুলিশ অভিযান শুরু করবে। এদিকে কথিত ধর্ষণের এ ঘটনায় স্বামীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনা নিয়ে পুরো জেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে বর্তমান স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ‘ঝগড়া’র ঘটনাকে পরদিন দেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ’ ঘটনা বলে প্রচার করা হয়েছে। ‘ধর্ষণে’র এই ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মূলতঃ ওই নারী প্রতিপক্ষ একটি গ্রুপের স্বার্থ হাসিলের জন্য ‘স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া’কে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে চারজন যুবককে ফাঁসানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। ওই নারীর স্বামী ফিরোজ আহমদ নিজেই এমন দাবি করেছেন। তিনি মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেনি।
স্বামী ফিরোজ আহমদ দাবি করেন, মামলায় দেয়া এজাহারে যে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের ‘ধর্ষণ মামলার আসামি’ করেছে তাদের মধ্যে তিনজনের ঘটনার সাথে কোন সম্পর্কই নাই। বরং আসামি তালিকায় থাকা ইসলামপুর ইউনিয়নের নাপিতখালী এলাকার মোহাম্মদ শরীফ ঈদগাঁও উপজেলা আ’লীগ নেতা এবং আগামি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী। তার ইমেজ নষ্ট করার জন্য পরিকল্পিত ভাবে তাকে আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, নাম উল্লেখ থাকা অপর দুই আসামি আপন দুই ভাই রাসেল উদ্দিন ও নুরুল ইসলামও এই ঘটনার সাথে কোন ভাবেই সম্পৃক্ত নয়। ওই দিন ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেনি। তিনি স্ত্রীর সাজানো ধর্ষণ ঘটনায় বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান জানান। তার স্ত্রী মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করে
সম্মানহানি, হয়রানী ও বিশেষ মহলের মিশন বাস্তবায়নে কাজ করছে বলে দাবী করেন ফিরোজ। এঘটনায় ঈদগাঁও উপজেলা আ’লীগের আহবায়ক আবু তালেব, যুগ্ন আহবায়ক হুমায়ুন কবির চৌধুরী হিমু, যুগ্ন আহবায়ক মুহিদুল্লাহ মুহিদ এবং অপর যুগ্ন আহবায়ক ও জালালাবাদের ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ, ঈদগাঁও ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি সোহেল জাহান চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক তারেক আজিজ. জালালাবাদ ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি সেলিম মোর্শেদ ফরাজী, সাধারন সম্পাদক মমতাজুল ইসলাম খান, ইসলামপুর ইউনিয়ন আ’লীগ সাধারন সম্পাদক মোঃ শাহজাহান চৌধুরী এবং ইসলামাবাদ ইউনিয়ন সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এমইউপি এক বিবৃতিতে এ ঘটনার সুষ্ঠুু তদন্তের দাবী জানান এবং আ’লীগের কোন নিরপরাধ নেতাকর্মী যাতে হয়রানির শিকার না হন সেজন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলার সুষ্টু তদন্ত চায় ঈদগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগ
