নিজস্ব প্রতিবেদক
হাসপাতালের বেডে বিয়ে হওয়া ক্যানসার আক্রান্ত ফাহমিদা কামাল (২৭) মারা গেছেন। সোমবার (২১ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা যান। হাসপাতালের শয্যায় বিয়ের ১১ দিন পর ক্যান্সারের কাছে হার মানলেন তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কর্মকর্তা ও তাদের আত্মীয় সাইফুদ্দিন সাকী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ফাহমিদা কামাল দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। ভারতেও চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকেরা আশা ছেড়ে দেওয়ায় ফাহমিদাকে দেশে নিয়ে আসা হয়। পরে দেশে এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে আজ সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ৯ মার্চ নগরীর মেডিকেল সেন্টারে মৃত্যুপথ যাত্রী ফাহমিদাকে ১ টাকা কাবিনে বিয়ে করেন মাহমুদুল হাসান।
ফাহমিদার চাচা ইউসুফ আলম বলেন, বিয়ের পর শুধু একদিন বাসায় আনা হয়। পরে ১৫ মার্চ ফের চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোববার দুপুরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ফাহমিদাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। আজ সকাল সাড়ে ৭টায় আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যায় ফাহমিদা।
ফাহমিদার মরদেহ চট্টগ্রামের দক্ষিণ বাকলিয়ায় নিজ বাড়িতে নেওয়া হয়েছে। বিকেলে বাদ আছর তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
ফাহমিদা কামাল ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন ও শিউলি আক্তারের মেজ সন্তান। তারা দুই বোন, এক ভাই। ফাহমিদা কামাল আইইউবি থেকে বিবিএ-এমবিএ শেষ করেছেন।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে ক্যান্সার বাসা বাঁধে ফাহমিদার শরীরে। এর বছর কয়েক আগে ফাহমিদা কামাল ও মাহমুদুল হাসানের ভালোবাসার সম্পর্ক শুরু হয়। গত ৯ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালের ৪০৫ নম্বর কেবিনে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
ফাহমিদার রেক্টাম ক্যান্সার ধরা পড়ার আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান। পরের বছরই দুই পরিবারের মধ্যে বিয়ের আনুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সব পরিকল্পনা যেন ভেস্তে যায় ক্যান্সার আক্রান্তের খবরে।
প্রথমে ঢাকার এভারকেয়ারে ভর্তি করানো হয় ফাহমিদাকে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি ফাহমিদার। আশা ছেড়ে দেন সেখানের চিকিৎসকরাও। এরপর কিছুদিন ফের এভারকেয়ারে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সর্বশেষ গত ৬ মার্চ তাকে চট্টগ্রামের মেডিকেল সেন্টার নামে একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এতো কিছুর মাঝেও ফাহমিদার প্রতি মাহমুদুল হাসানের ভালোবাসা একটুও ভাটা পড়েনি। বরং প্রতিদিন কেবিনের সামনে এসে বসে থাকতেন তিনি। পরে সবার মতামতের ভিত্তিতে বিয়ে হয় ফাহমিদা ও মাহমুদুলের।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।