মুহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিক:
রামু লম্বরীপাড়ার সর্বপ্রথম নূরানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল কুরআন নুরানী একাডেমীর নবপ্রতিষ্ঠিত হিফজখানার তিনজন শিক্ষার্থীকে হিফজুল কুরআনের প্রথম সবক প্রদান উপলক্ষে এক দু’আ মাহফিল ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় সম্পন্ন হয়েছে। ২৪ মার্চ (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে ৯ টায় অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, রামু রাজারকুল আজিজুল উলুম মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ মোহছেন শরীফ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলার ইবাদতের জন্যই জ্বীন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই মু’মিনদের সব কাজই যেন আল্লাহর তা’আলার ইবাদত হিসেবে গণ্য হয় সেই লক্ষ্যে পরকালীন জীবনে জবাবদিহিতার অনু্ভূতি নিয়ে পুরো জীবনটাকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সাজাতে হবে। এমনই ঈমানী চেতনা ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার জন্য প্রয়োজন নবভী কর্মসূচির আলোকে কুরআনু্ল কারীমের বিশুদ্ধ তিলাওয়াতের যোগ্যতাসম্পন্ন, পরিশুদ্ধ আত্মার অধিকারী প্রজন্ম গড়ে তোলা। স্বচ্ছধারার নূরানী শিক্ষাকেন্দ্র ও হিফজখানাগুলো সেক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তাই কুরআন-সুন্নাহর এ শিক্ষাধারার একনিষ্ঠ সহযোগী হওয়া মু’মিনদের ঈমানী কর্তব্য।
তিনি আরও বলেন, কুরআনুল কারীম আল্লাহ তা’আলার কালাম, সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব।আল্লাহপাকের বিশেষ রহমতপ্রাপ্ত, বিরল প্রতিভার অধিকারীরাই আল্লাহপাকের ৩০ পারা কুরআনের আমানত বক্ষে ধারণ করার তাওফিক লাভ করেন।হিফজখানাগুলো এমনই হাফেজে কুরআন তৈরির অবারিত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। হিফজখানাসমূহে অবিরাম তিলাওয়াতে কুরআনের ফলশ্রতিতেই এখনো সমাজে রহমত, বরকত জারি রয়েছে। তাই হিফজুল কুরআনের এ প্রতিষ্ঠান এলাকাবাসীর জন্য আল্লাহর তা’আলার বড়ই নিয়ামত। এ নিয়ামতের যথাযথ শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
সম্মানিত অভিভাবকবৃন্দসহ দ্বীন অনুরাগী ব্যক্তিবর্গের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, দারুল কুরআন নূরানী একাডেমী, হিফজখানা ও এতিমখানার প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর।
এলাকার প্রবীণ আলেমদ্বীন মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পবিত্র এ অায়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন, খরুলিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মাওলানা মুহাম্মদ হাসান। তিনি বলেন, শিশু সন্তানদের কুরআনুল কারীমের সহীহ তিলাওয়াত ও ইসলামের বুনিয়াদী তা’লীম দেয়ার ক্ষেত্রে পাড়া-মহল্লা, শহরে-নগরে গড়ে উঠা নূরানী মাদ্রাসা ও হিফজখানাগুলোর অবদান অনস্বীকার্য। তাই আলোকিত সমাজ ও আদর্শ জাতি গঠনে কুরআন-সুন্নাহর এ শিক্ষাধারার ক্রমবিকাশে মু’মিন-মুসলমানদের একনিষ্ঠভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
শিক্ষা পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ দিদারুল আলমের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, এলাকার মুরুব্বী হাজী মকবুল হোসাইন, শিক্ষানুরাগী নুরুল আমিন, অভিভাবক নজরুল ইসলাম, কলিম উল্লাহ, সাংবাদিক মুহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিক, মোহাম্মদ হোসাইন, মুজিবুল হক, মোহাম্মদ হাসান, আলোর দিশারী যুব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেলিম উল্লাহ, নূরানী বিভাগের শিক্ষক মাওলানা হাফেজ রফিকুল ইসলাম, হিফজ বিভাগের শিক্ষক মাওলানা হাফেজ মাহদী হাসান, মাস্টার এরশাদুল হক, অভিভাবক জাহেদ হোসাইন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত রমযানুল মোবারকের ২য় রামযানে আল্লাহর রহমতে এ প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে হিফজ বিভাগ উদ্বোধন করা হয়। মাত্র ৩ জন ছাত্র দিয়ে শুরু হওয়া এ হিফজখানায় আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে বিদগ্ধ ওলামায়েকেরাম ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সর্বপ্রথম পাঁচজন শিক্ষার্থীকে গত ২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে হিফজুল কুরআনের সবক প্রদান করা হয়। পরে অল্পসময়ের ব্যবধানে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সকালে আরও চারজন ছাত্রকে হিফজুল কুরআনের প্রথম সবক দেয়া হয়। অগ্রগতির এই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ, ২০ শা’বান) সকালে আরও তিনজন ছাত্র হিফজুল কুরআনুল কারীম শুরু করলো আলহামদুলিল্লাহ।
এ প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা কার্যত্রম পরিচালনায় ধারাবাহিকতায় এ শিক্ষাবর্ষে ৫ম শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। এতিম-মিসকিন শিক্ষার্থীদেরকেও যথাসাধ্য আনুকূল্য দিচ্ছে এ দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র। দ্বীনি শিক্ষার বিপ্লব ছড়িয়ে দেয়ার অভিপ্রায়ে এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা ইসলাম অনুরাগীদের ঈমানী কর্তব্য।
আল্লাহর দরবারে বিশেষ মুনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।