নুরুল কবির, বান্দরবান থেকে:
আর দুই’দিন পরই আসছে মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সাংগ্রাই। এরই মধ্যে পাহাড় জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আমেজ। সাংগ্রাই মা, ঞি ঞি ঞা ঞা, রিক্জে গে পা মে’-এসো মিলি সাংগ্রাই এর মৈত্রী পানি বর্ষণের উৎসবে-ঐতিহ্যবাহী এ মারমা গানের সুর মূর্ছনায় এখন উদ্বেলিত পাহাড়ি জনপদ বান্দরবান।
বর্ষবরণকে ঘিরে আদিবাসী পল্লীগুলোতে শুরু হয়েছে উৎসবের ধুম। নতুন জামা-কাপড় কেনা, পিঠা তৈরি, ঘর সাজানো, বৌদ্ধ বিহারে ধর্মীয় গুরুদের জন্যে খাবার নিয়ে যাওয়া সর্বোপরি মৈত্রী পানিবর্ষণের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস-সব মিলিয়ে পুরো জেলার সবক’টি সম্প্রদায়ের মানুষ এখন একাট্টা হয়েছে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে।
মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান সাংগ্রাই বা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এই বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে ইতোমধ্যে মারমা পল্লীগুলোতে চলছে উৎসবের আমেজ। আগামী ১৩, ১৪ ও ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান মালার মধ্যে রয়েছে বর্ণাঢ্য সাংগ্রাই র্যালী, মিনি ম্যারাথন দৌড়, বুদ্ধ¯œান ও মৈত্রী পানি বর্ষণ অনুষ্ঠান।
পার্বত্য এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে প্রতি বারের ন্যায় এবারও সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন পরিষদ আয়োজন করেছে এ মনোরম অনুষ্ঠানের।
আর দুই দিন পর ১৩ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে পাহাড়ি মারমাদের বর্ষবরণ উৎসব সাংগ্রাই বা বৈসাবি। উৎসবকে ঘিরে পোশাক কেনা-কাটা ও ঘরবাড়ি গোছানোসহ বান্দরবানের মারমাদের পল্লীগুলোতে চলছে প্রস্তুতি। বলতে গেলে চারিদিকে এখন সাজ সাজ রব। পুরো পার্বত্য বান্দরবানে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
১৩ এপ্রিল বান্দরবানে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাই উৎসবকে স্বাগত জানাবে। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৩ দিনব্যাপী উৎসব চলবে। উৎসবের মধ্যে রয়েছে সমবেত প্রার্থনা, জলকেলি (পানি খেলা), পিঠা তৈরি, ঘিলা খেলা, বৌদ্ধ মূর্তি স্নান, হাজার প্রদীপ প্রজ্বালন, বয়স্ক পূজা ও নিজস্ব ঐতিহ্যবাসী নৃত্য-গানসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মারমা নারী মেসাইংউ মার্মা বলেন, করোনা মহামারীর কারণে আমরা বিগত দুই বছর সাংগ্রাই উৎসবে আনন্দ করতে পারি নাই। এই বছর খুব আনন্দ করব। মৈত্রী পানি বর্ষণের মাধ্যমে পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করি আমরা। শীতল-ঠান্ডা পানির পরশে সবার মন যেন শীতল হয়ে ওঠে। পানির মাধ্যমে সব ময়লা যেভাবে দূর হয়ে যায়, সেভাবেই যেন আমাদের সবার মনের ময়লাও দূর হয়ে যায়।
বান্দরবান সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শৈটিং ওয়াই বলেন, এ বছর ‘১৩ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাংগ্রাই উৎসব পালন করতে যাচ্ছি। এ উপলক্ষে ১৩ তারিখ সকাল ৮টায় মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে এর সূচনা করা হবে। পরে ১৪ তারিখ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণে মিনি ম্যারাথন দৌড়, ১৫ এপ্রিল আলোক চিত্র প্রদর্শনী, মৈত্রী পানি বর্ষণ এবং খেলাধুলার মাধ্যমে আমাদের এ উৎসবের সমাপ্তি করা হবে। পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিকসহ সকলের সহযোগিতায় আমরা এবার এ উৎসব পালন করবো।’
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান তিনটি পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব বৈসাবি। উৎসবটি ত্রিপুরাদের কাছে বৈসু, মারমাদের কাছে সাংগ্রাই এবং চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের কাছে বিজু নামে পরিচিত। ত্রিপুরাদের বৈসু থেকে বৈ, মারমাদের সাংগ্রাই থেকে সা এবং চাকমাদের বিজু থেকে বি। এই তিনটি উৎসবের প্রথম অক্ষর নিয়ে পুরো পার্বত্য অঞ্চলে এটি ‘বৈসাবি’ উৎসব নামে পালন করা হয়।
এসব অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊশৈসিং এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।