এম.এ আজিজ রাসেল:
করোনার জন্য দুই বছর উদযাপিত হয়নি রাখাইন সম্প্রদায়ের সাংগ্রেং জলকেলি উৎসব। তাই করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এবার মহাসমারোহে জেলায় শুরু হয়েছে মৈত্রিময় জলকেলি উৎসব। রোববার (১৭ এপ্রিল) দুপুর ১টায় টেকপাড়ার আছিমং পেশকার পাড়ায় কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আয়োজনে বেলুন উড়িয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিভীষণ কান্তি দাশ। কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মং এ খেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, চট্টগ্রাম কর্মচারি কল্যাণ বোর্ডের সভাপতি খিন ওয়ান নু ও রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কক্সবাজারের সভাপতি মং ছেন হা¬।
উদ্বোধনের পরে রাখাইন পল্লীর ২০টি প্যান্ডেলে সানন্দে শুরু হয় জলকেলি উৎসব। ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত এই জলকেলি উৎসব চলবে।

কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মং এ খেন বলেন, নতুন বছরকে বরণ করা জন্য রাখাইন সম্প্রদায় প্রতিবছর নববর্ষ পালন করে থাকে। রাখাইন ভাষায় এ উৎসব বলা হয় মাহা সাংগ্রেং পোয়ে। এর বাংলা আভিধানিক অর্থ মৈত্রিময় জলকেলি উৎসব। এবার ১৩৮৩ মগীসনকে বিদায় জানিয়ে বরণ করা হচ্ছে ১৩৮৪ মগীসনকে।

শহরছাড়াও মহেশখালী, টেকনাফ সদর, হ্নীলা চৌধুরী পাড়া, রামু, পানিরছড়া, চকরিয়ার মানিক পুরসহ রাখাইন অধ্যুষিত এলাকায় সপ্তাহজুড়ে নববর্ষ পালনে নানা অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে শহরের টেকপাড়া, হাঙর পাড়া, বার্মিজ স্কুল এলাকা, চাউল বাজার, পূর্ব—পশ্চিম মাছ বাজার, আরডিএফ প্রাঙ্গন, ক্যাং পাড়া ও বৈদ্যঘোনাস্থ থংরো পাড়ায় তৈরি করা হয়েছে জলকেলির ২০টি নান্দিক প্যান্ডেল। রঙিন ফুল আর নানা কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্যান্ডেলের চারপাশ। সবার মাঝে এখন বর্ষ বরণের আমেজ। রাখাইন এলাকার প্রতিটি বাড়ি সেজেছে নতুন সাজে। ছোট শিশু থেকে শুরু করে বড়রাও ব্যস্ত নতুন কাপড়ে নিজেকে রঙিন করে তুলেছে। উৎসবের মূল লক্ষ্য অতীতের সকল ব্যথা—বেদনা, গ্লানি ভুলে ভ্রাতৃত্ববোধের মাধ্যমে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাখাইন তরুণ—তরুণীরা নতুন ও আকর্ষণীয় পোশাক পরিধান করে সেজেগুঁজে রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং রাখাইন পল্লীতে তৈরি করা জলকেলি উৎসবের প্যান্ডেলে একে অপরকে পানি নিক্ষেপ করে আনন্দ প্রকাশ করছে। এসময় বাদ্য বাজিয়ে নাচ—গানসহ চলে আনন্দঘন অনুষ্ঠান। সাথে ঢাক—ঢোল আর কাঁসার তালে—তালে নেচে উঠে রাখাইন আবাল—বৃদ্ধ—বনিতা। জলকেলি উৎসব অবলোকনে অন্যান্য ধর্মালম্বীর পাশাপাশি পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড় দেখা গেছে।
সাবেক সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ—সভাপতি অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন বলেন জানান, আধিকাল থেকে রাখাইন নববর্ষ উপলক্ষে সামাজিক ভাবে সাংগ্রেং পোয়ে উৎসব পালন হয়ে আসছি। এবারও ব্যতিক্রম ঘটনি। আনন্দ—উল্লাসে নতুন বছরকে বরণ করে নিচ্ছে সবাই। এর মাধ্যমে আমরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর মধ্য দিয়ে পুরনো দিনের সব ব্যথা, বেদনা, হিংসা বিদ্বেষ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। এটি আমাদের কাছে খুবই পবিত্র ও উৎসবের দিন।’

গত ১৩ এপ্রিল বুদ্ধ স্নানের মাধ্যমে সামাজিক এ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, রাখাইনদের জলকেলি উৎসব উপলক্ষে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও মাঠে রয়েছে।