#খাদ্যসহায়তা ১০০ পরিবারে
প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
কক্সবাজার শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে দরিয়ানগর এলাকা। সেখানকার পাহাড়ে ছোট্ট ঝুঁপড়িতে বসতি ১০ বছরের শিশু মর্জিনা আকতারের। সঙ্গে মা সনজিদা আকতার ও ভাই সাব্বির আহমদ। মর্জিনার বাবা পেশায় জেলে শ্রমিক। ট্রলারে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরে সংসার চালাতেন। চার বছর আগে ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ হন মর্জিনার বাবা নুর সালাম। সেই থেকে কোনো ঈদে নতুন জামা গায়ে ওঠেনি মর্জিনার।
গত শুক্রবার ( ২৯ এপ্রিল) বিকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর এলাকায় প্রথম আলো কক্সবাজার বন্ধুসভার উদ্যোগে ‘সহমর্মিতার ঈদ’ উপলক্ষে ৭৫ জন শিশু ও জলবায়ূ উদ্বাস্তু ১০০ পরিবারে বিতরণ করা হয় প্রায় দুই লাখ টাকার ঈদের নতুন জামা ও খাদ্যসামগ্রী।
অনুষ্টানে শিশু মর্জিনার হাতে ঈদের নতুন জামা পরিয়ে দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আমিন আল পারভেজ। নতুন জামা পেয়ে মহাখুশি ছোট্ট মেয়ে মর্জিনা, তখন মায়ের চোখে অশ্রু। মা সনজিদা খাতুন বললেন, দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ভোগছিলাম-ঈদের নতুন জামা কিনে দিতে পারবো কীনা। এখন দুশ্চিন্তা দূর করে দিল প্রথম আলো বন্ধুসভা। এবারের ঈদ ছেলে মেয়েদের আনন্দেই কাটবে।
নতুন জামা পেয়ে খুশি ৯ বছরের শিশু রোকেয়া আকতার। পাঁচ বছর আগে কঠিন রোগে বাবা নুরুল ইসলামের মৃত্যু হলে দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে বিপাকে পড়েন মা সখিনা খাতুন। সখিনা বলেন, নতুন জামা তাঁর চিন্তা দূর করেছে। মেয়ের আনন্দে তিনিও খুশি।
১০ বছর ধরে এলাকায় ভিক্ষা করে চলছেন বৃদ্ধা আলম সাই। ছেলেমেয়েরা বিয়ে করে আলাদা সংসার পাতেন, মায়ের সঙ্গে কেউ নেই। বন্ধুসভার ত্রাণসহায়তা পেয়ে আলম সাইয়ের চোখ টমটল। বললেন, এই সহায়তা না পেলে ঈদ করা হত না। ঈদের দিনেও মানুষের বাড়িবাড়ি গিয়ে হাত পাততে হত।
একই কথা বলেন এলাকার বৃদ্ধা তৈয়ূবা বেগম। আট বছর আগে সাগরে জলদস্যুদের হামলায় নিহত হন বৃদ্ধার স্বামী আনু মিয়া। একমাত্র ছেলে রমজান আলী বিয়ে করে অন্যত্র সংসার পাতেন। দরিয়ানগর পাহাড়ের ঝুঁপড়ি ঘরে একাকি থাকেন এই বৃদ্ধা । তৈয়ুবা বললেন, আমাদের পাশে কেউ নেই, প্রথম আলো পাশে না দাঁড়ালে ঈদের আনন্দ মাটি হত।
খাদ্য সহায়তায় ছিল পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি খুরমা, এক কেজি গুড়, চারটি নুডুলসের প্যাকেট, দুই প্যাকেট লাচ্চা সেমাই, তিন কেজি পেঁয়াজ ইত্যাদি।
দরিয়ানগর পযটক পল্লির মাঠে অনুষ্টিত ‘সহমর্মিতার ঈদ’ সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, প্রথম আলো বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ড কর্মকান্ড পরিচালনা করছে, যা প্রশাংসার দাবি রাখে। আজকে পাহাড়ি এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের হাতে ঈদের নতুন জামা কাপড় তুলে দিয়ে অসংখ্য শিশুর মুখে হাসি ফুটিয়েছে। জলবায়ূ উদ্বাস্তু ও উপকূলীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে ঈদের ত্রাণসামগ্রী তুলে দিয়ে লোকজনকে ঈদ উদযাপনের সুযোগ করে দিয়েছে- এটা সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
সভায় প্রথম আলো কক্সবাজার আঞ্চলিক অফিস প্রধান ও বন্ধুসভার প্রধান উপদেষ্টা সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস রানা বলেন, আজ ২৯ এপ্রিল উপকূলবাসীর জন্য বিশেষ শোকের দিন। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে কুতুবদিয়া, মহেশখালীসহ কক্সবাজার উপকূলের অন্তত ৮৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। বসতবাড়ি হারিয়ে কুতুবদিয়া মহেশখালীর অনেকে এই দরিয়ানগর পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বিশেষ দিনে প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা জলবায়ূউদ্বাস্তু অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত রাখা হবে। উদ্বাস্তুদের জন্য ত্রাণসহায়তার জন্য তিনি জেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বন্ধুসভার সভাপতি রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত এসভায় বক্তব্য দেন, দক্ষিণ কলাতলী চরপাড়া সমাজ কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর, প্রথম আলো বন্ধুসভার সহ-সভাপতি ফহিম কুদ্দুস প্রিয়, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাছুমা আকতার রুমি ও মোজাহিদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম সোহাগ প্রমুখ।
সমাজ কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রথম আলো বন্ধুসভার উদ্যোগে ৭৫ জন শিশু ঈদের নতুন জামা পেয়ে মহাখুশী। অতীতে দুর্গম পাহাড়ে এসে কোনো শিশুকে ঈদের নতুন জামা কাপড় কেউ দেয়নি। তাছাড়া যেসব পরিবারে ১ হাজার ৬০০ টাকা দামের খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছে, এসব সহায়তা না পেলে পরিবারগুলোতে ঈদ করা সম্ভব হত না।