জানে হৃদয়:
দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ, সবুজ ছায়াঘেরা নিসর্গ,চারপাশে ছড়িয়ে থাকা নদ নদীর কোলে শুয়ে থাকা অপার সৌন্দর্যের সুষমমন্ডিত জনপদের নাম ভারুয়াখালী।কক্সবাজার সদরের বর্তমান ২নম্বর এই ভারুয়াখালী ইউনিয়নে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লবণ শিল্পের উন্নয়নের জন্য তার জীবদ্দশায় ১৯৭৫খৃস্টাব্দে আগমন করেছিলেন।সম্প্রতি এ ইউনিয়ন নিয়ে’ ভারুয়াখালী ইতিহাস’শিরোনামে প্রকাশিত গ্রন্থটি এক অনবদ্য সৃষ্টি।এটিই ভারুয়াখালীর ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে লেখা প্রথম গ্রন্থ।নিঃসন্দেহে শেফা উদ্দিনের দীর্ঘ বছরের কষ্টসাধ্য পরিশ্রমের ফসল এই গ্রন্থটি।
প্রায় ১৭৮পৃষ্ঠাও ২৬টি অধ্যায়ের আলোচ্য গ্রন্থটির মাধ্যমে ভারুয়াখালীর ইউনিয়নের ইতিহাস ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমাজনীতি,স্বাধীনতা আন্দোলন, স্মরণীয় বরণীয়দের কথা,শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, আইন, বিচার, সাংবাদিকতা, প্রশাসন, সমাজসেবা সহ সমাজের সর্বস্তরের সবকিছু নির্মোহভাবে তুলে ধরার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে।
ইতিহাস রচনা করতে হয় নির্মোহ এবং
নিরপেক্ষভাবে। অনেক স্বনামধন্য অনেক ইতিহাসবিদদের রচিত বিভিন্ন ইতিহাস পড়ে দেখেছি- ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়, অনুরোধে, উপরোধে শেষ পর্যন্ত নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ ইতিহাস উপহার দিতে পারেন নাই।বিশেষ করে রাজনৈতিক ভাবে দ্বিধাবিভক্ত বর্তমান বাস্তবাতায় এই কাজ সুসম্পন্ন করা আরো দুরুহ এবং কঠিন থেকে কঠিনতর। উপরন্তু আছে ধর্মিয় এবং সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতিত্ব। সবকিছু উপেক্ষা করে ‘ভারুয়াখালীর ইতিহাস’ গ্রন্থের প্রণেতা শেফা উদ্দিন সাহসী ভুমিকা দেখিয়ে চমৎকার এবং বহুবিদ তথ্য সমৃদ্ধ একটি ইতিহাস গ্রন্থ উপহার দিতে চেষ্টা করেছেন।
শেফা উদ্দিন লেখার পেছনে ছুটে চলছেন নিরন্তর। এ চলার পথে কোন ক্লান্তি নেই প্রবন্ধ ওআঞ্চলিক ইতিহাস তার লেখালেখির প্রধান উপজীব্য বিষয়।লেখালেখির অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে ইতিহাস রচনা অনেকটা জটিল সব লেখনীর জন্য মানুষের কাছে পৌঁছাতে হয়না।কবিতা গল্প উপন্যাস আমাদের যাপিত জীবনের গন্ধ রস ও অভিজ্ঞতা থেকে ঘরে বসেই লেখা সম্ভব। কিন্ত ড্রয়িং রুমে বসে ইতিহাস লেখা যায়না,ইতিহাস লেখতে হলে ক্ষেত্র অনুসন্ধান জরুরী।আর এ জন্য দৌড়াতে হয়।প্রয়োজন হয় পুর্বোক্ত অনেক বইয়ের আশ্রয়- প্রশ্রয়।এ কঠিন কাজটি শেফা উদ্দিন খুব দক্ষতার সাথে সম্পাদনা করেছেন।
বইটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক নিমেষে পড়ে ফেলার আবেদন রাখে। ভাষাগত উপস্থাপনাও বেশ কিছু বানান ভুল দৃষ্টিগোচর হয়েছে।এছাড়াও বইটির দৃষ্টিকটু কিছু বিষয়-‘বই একটি পণ্য এবং প্রচ্ছদ হলো এর মোড়ক। এটা যত আকর্ষণীয় হবে পাঠক ততই বইটি পড়তে আগ্রহী হবে।গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি বইয়ের আরো দৃষ্টি নন্দন প্রচ্ছদ হতে পারতো!বইটিতে লেখকের ভারুয়াখালীর প্রথম লবন চাষের দাবি তথ্যনির্ভর বলে মনে হয়নি। বইটিতে তথ্যসূত্রের অনুপস্থিতি লক্ষনীয়। যা বুদ্ধাপাঠক মাত্রই আশাহত হবেন। বইয়ের একটি অধ্যায়ে গুনিও সফল ব্যক্তিদের তালিকা ওসংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরেছেন।অধ্যায়টি নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন।তাদের দাবি অনেক যোগ্য ব্যক্তিরা এ তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছেন এবং অযোগ্য অনেকেই ঢুকে গেছেন।হ্যা অভিযোগটি আমলে নেওয়ার মতোই। আমার বক্তব্য হচ্ছে,কোনো গ্রন্থই সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত হয় না, ‘ভারুয়াখালীর ইতিহাস’ গ্রন্থটি যে নয়,এ তো স্বাভাবিক। যা-ই হোক,বিভিন্ন মহলের পরামর্শ নিয়ে দ্বিতীয় সংস্করণে প্রশংসাযোগ্য একটি তালিকা হবে আশা করছি।এছাড়া বইটি একটি সুখপাঠ্য। ইতিহাসের মতো নীরস বিষয়কে সাবলীল উপস্থাপনে লেখকের প্রয়াস নিঃসন্দেহে সার্থক। হয়েছে।শুধু ভারুয়াখালীর ইউনিয়নের মানুষের জন্যে নয়,দেশ-বিদেশে বসবাসকারী যে কোন ইতিহাস পিপাসু এবং গবেষকদের গ্রন্থটি সংগ্রহে রাখার মত।
হাজার বছর পর হলেও এই বইটি এই ইউনিয়নের মানুষকে অতীতের সন্ধান দিবে এবং লেখককে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। ভারুয়াখালীর অতীতের সোনালী ইতিহাসগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে কিছুটা হলেও সামাজিক দায়বদ্ধতা পূরণ করেছেন লেখক। বর্তমান ও আগামী প্রজন্ম এই বইয়ের মাধ্যমে অনেক উপকৃত হবে।এমন কি এই গ্রন্থটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের এবং ভবিষ্যৎ গবেষকদের জন্য সহায়তা কিংবা পথ পদর্শক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। দীপ্তময় পথচলায় লেখকের প্রতি দোয়া ও আন্তরিক ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি। ভারুয়াখালীর ইতিহাস’ বইটির পাঠক প্রিয়তা কামনা করছি।
লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক ,কক্সবাজার ।