জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আসলেই পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন এবং বিভিন্ন জেলার আঞ্চলিক সামাজিক সংগঠন এর শুভেচ্ছা ব্যানারে পুরো ক্যাম্পাস ঢেকে যায়। এই বছরও তার কোন ব্যতিক্রম হয়নি। করোনা মহামারীর কারণে গত বছর এসব সংগঠনের ব্যানারের সংখ্যা কম ছিল।এই বছর তুলনামূলক বেড়েছে।
গতকাল ৩ জুন শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ সেশনের অনার্স প্রথম বর্ষের ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের অধীন‌ গ ইউনিট এবং আজ ৪ জুন শনিবার সকালে কলা অনুষদের অধীনে খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।গত দুই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, দোয়েল চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, টিএসসি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর, কলাভবন মলচত্বর, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবন সহ পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল এবং একাডেমিক ভবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন ও বিভিন্ন জেলা ভিত্তিক সামাজিক সংগঠনের শুভেচ্ছা ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঢেকে গেছে। এতে সাময়িক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্য হানি হচ্ছে।
নরসিংদী , কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলার আঞ্চলিক সংগঠন গুলোর মধ্যে পাল্টাপাল্টি কমিটি থাকলেও পাল্টাপাল্টি ব্যানার নেই। আবার কোন কোন জেলার উপজেলা ভিত্তিক সামাজিক সংগঠন আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত জেলার চকরিয়া উপজেলার শিক্ষার্থীদের সংগঠন “ঢাবির চকোরী”কে তথ্য সহায়তা সেল থেকে মাস্ক বিতরণ করতে দেখা গেছে।

রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শুভেচ্ছা ব্যানার ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সেবা ছিল কম।
ছাত্রলীগের ১০-১৫ টি “শিক্ষার্থী সহায়তা ও তথ্যকেন্দ্র” সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে তাদের অধিকাংশ কেন্দ্রে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের জন্য ঘোষিত ১২ দফা কর্মসূচির বাস্তবায়ন ছিল না। ছিল না কোন মাস্ক, ছিল না কলম । কয়েকটি কেন্দ্রে সুপেয় পানি ছিল না। একটা কেন্দ্রে ছাত্রলীগের একজন স্বেচ্ছাসেবক কে পরীক্ষার্থীদের জন্য রাখা সুপেয় পানি পান করতে দেখা গেছে।
২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা “বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ” এর কোন ব্যানার দেখা না গেলেও কলাভবনের প্রধান গেটে তাদের একটি শিক্ষার্থী সহায়তা ও তথ্য কেন্দ্র দেখা গেছে।ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্রফ্রন্টসহ কয়েকটি বাম ছাত্র সংগঠনের ব্যানার ও তথ্য কেন্দ্র দেখা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শিক্ষার্থীদের সংগঠন তিতাস। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ সেশনের অনার্স প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে তারা কয়েকটি ব্যানার টাঙ্গিয়েছে। এইসব ব্যানারে সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের মোবাইল নাম্বার দেয়া আছে। যাতে যে কোনো শিক্ষার্থীর প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাই।
তিতাস এর সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ অনুষদের ফাইন্যান্স বিভাগের ছাত্র ইরফান খন্দকার সোহেল জানান,” এবছর পুরো দেশ থেকে ,বিশেষত সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে আগত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু কোমলমতি শিক্ষার্থী ভাই এবং বোনদের ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় সহায়তা দেওয়ার জন্যে তিতাস (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদ) সবসময় প্রস্তুত।
এরই ধারাবাহিকতায় এবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক, খ, গ, ঘ এবং চ বিভাগে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের তথ্য সংক্রান্ত সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষাসমূহের দিন ‘তিতাস’ এর পক্ষ হতে ‘ভর্তি সহায়তা কেন্দ্র’ স্থাপন করা হয়েছে।যে কোন শিক্ষার্থী আমাদের ব্যানারে প্রদত্ত নাম্বারে যোগাযোগ করে সর্বাত্মক সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের পর্যটন নগরী খ্যাত কক্সবাজার শিক্ষার্থীদের সংগঠন “কক্সবাজার স্টুডেন্ট’স ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়” এর সাধারণ সম্পাদক সায়মুন ইসলাম বাপ্পী বলেন,”কক্সবাজার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের দুর্যোগ -দুর্বিপাক মোকাবেলায় দায়বদ্ধ এই সংগঠন। স্বপ্ন পূরণের মোহনা হিসেবে অজয়- অক্ষয়- অবিচলভাবে থাকবে কক্সবাজার স্টুডেন্টস ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কক্সবাজারের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নির্বিঘ্নে ও নিশ্চিতে পরীক্ষা দিতে ও তার স্বপ্নের এন্টেনায় পোঁছাতে সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছে কক্সবাজার স্টুডেন্টস ফোরাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এবং রমজান মাস আসলেই এসব সংগঠনের দেখা মেলে। অন্যান্য সময়ে যেকোন প্রয়োজনে তাদেরকে পাশে পাওয়া যায় না। এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি , সমাজসেবক, সরকারী- বেসরকারী উচ্চ বেতনের চাকরিজীবী এবং স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে এসব সংগঠন চলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ আঞ্চলিক সামাজিক ছাত্র সংগঠন ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণ করে। নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কুড়িগ্রাম , কক্সবাজার সহ কোন কোন আঞ্চলিক সংগঠনের‌
পাল্টাপাল্টি কমিটি আছে। অধিকাংশ জেলা ভিত্তিক সামাজিক সংগঠনের কোন সুনির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র নেই। সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদক যেভাবে চালায়, সেভাবে চলে। কোন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নাই।