নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
দেশী-বিদেশী পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত সীমিতকরণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে ট্যুর অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক)।
রবিবার (১২ জুন) ‘পর্যটন বাঁচান, সেন্টমার্টিন বাঁচান’ দাবিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রেরণ করেন টুয়াক নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, পর্যটক গমন সীমিতকরণ কোনো প্রতিকার নয়, বরং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষণে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে আরও পর্যটকবান্ধব করে দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থানীয় অধিবাসীদের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব।
এতে বলা হয়, সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য তথা পরিবেশ রক্ষায় পর্যটক সীমিতকরণই একমাত্র সমাধান নয়। অনেক বিজ্ঞানসম্মত উপায়ও আছে, যার মাধ্যমে সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য ও ঐতিহ্য রক্ষা সম্ভব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন সেন্ট মার্টিনের অসহায় মানুষগুলো এবং পর্যটনসংশ্লিষ্ট তরুণ উদ্যোক্তাদের উপার্জনের এই মাধ্যমকে সীমিতকরণের উদ্যোগের ফলে যে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে, সেটাই বরং পরিবেশের জন্য চরম হুমকি।
দেশে সমুদ্র ভ্রমণের সুযোগ সংকুচিত হলে পর্যটকরা বিদেশমুখী হবে এবং আমাদের কষ্টার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে চলে যাবে। ফলে এই সিদ্ধান্ত চরম আত্মঘাতী। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান টুয়াক নেতারা।
টুয়াকের সভাপতি এম. রেজাউল করিম রেজার নেতৃত্বে স্মারকলিপি প্রদানকালে সাধারণ সম্পাদক আজমল হুদা, অফিস সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম সুমন, টুয়াক সদস্য সিদ্দিকুর রহমান এবং এস.এম বাবর উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে গণমাধ্যমের নিকট টুয়াক সভাপতি এম. রেজাউল করিম রেজা বলেন, দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও এর আশেপাশের এলাকা সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভ্রমণ স্থান। তারা এই স্থানগুলোয় অবস্থান করে জীব-বৈচিত্র ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন। বিশেষ করে কক্সবাজার সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের ট্যুর প্ল্যানে অন্যতম আকর্ষণ সেন্টমার্টিন। মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের একমাত্র উপার্জনের উৎস ট্যুরিজম। একে ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটকবাহী নৌযান, হোটেল-মোটেল সেবা এবং ট্যুর গাইড সেবায় বিপুল সংখ্যক তরুণদের কর্মসংস্থান। সম্প্রতি দ্বীপটিতে অতিরিক্ত পর্যটক গমন পরিবেশের জন্য হুমকি বিবেচনা করে সেখানে পর্যটন সীমিতকরণের সরকারি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। যাতায়াত সীমিতকরণের উদ্যোগটি এই করোনা মহামারির পরে আরেক বড় বিপর্যয়কর ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে তারা মনে করছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার আরো অন্তত ৪ হাজার মানুষ দ্বীপটিতে বাস করছে। এ দ্বীপের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের আয়-রোজগারের একমাত্র খাত পর্যটন। ৫ মাস পর্যটনের আয় দিয়ে বাকি ৭ মাস তারা জীবিকা নির্বাহ করে। এ ছাড়া এ দ্বীপের পর্যটনকে ঘিরে টেকনাফ, কক্সবাজারসহ দেশের প্রায় ৫ লাখ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। ফলে বিকল্প ব্যবস্থা না করে সেন্ট-মার্টিনে ভ্রমণ সীমিত করা বাংলাদেশের পর্যটন খাতে নিশ্চিত বিরূপ প্রভাব ফেলবে।