মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি:
গত ঈদুল আযহার আগের রাতের (৯ জুলাই) ঘটনা। এটি চুরির আদলে, একটি ডাকাতির ঘটনার প্রতিশোধও বটে। এরপর ঘটনার বিবরণ দিয়ে থানায় অভিযোগ দেন আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের সিরাজ কার্বারী পাড়ার বাসিন্দা দিনমজুর আহমদ উল্লাহ। ঘটনার রাত থেকে শুরু করে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ৭দিন পার। কিন্তু অভিযোগভূক্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। অবশেষে শুক্রবার (১৫ জুলাই) রাতে গরু চুরি করে জবাই করার ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে আটক করতে সক্ষম হন আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম। পরে তিনি আটক ৬ গরু চোরকে শুক্রবার দিনগত রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশের কাছে হস্তান্তরও করেন। আটকরা হলো-সিরাজ কারবারী পাড়া, আলী মেম্বার পাড়া ও কাসেম মেম্বার পাড়ার বাসিন্দা আবুল কাসেমের ছেলে মো. সুমন (৩৫),মৃত রশিদ আহমদের ছেলে মাহাবুব আলম (২৫), মো. জমির হোসেনের ছেলে মো. ইউনুছ (২৬), মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. জিহাদ (২৫), সাদ্দাম হোসেন (২৫) ও জাহেদ মেস্ত্রী (৩০)।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত ৭ জুলাই রাতে আলীকদম উপজেলার হেলাল সওদাগরের ৪টি গরু উপজেলা সদর থেকে চিনারী বাজার এলাকায় নেওয়অর প্রাক্কালে অস্ত্রধারী ৬-৭ জন লোক গতিরোধ করে ২টি গরু ও ২ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। গরুর শ্রমিক জনৈক আবু সৈয়দ ফজরের নামাজের পর আহমদ উল্লাহকে গরু ছিনতাইয়ের বিষয়টি জানিয়ে উদ্ধারে সহযোগিতা চান। কয়েকজন চেষ্টা চালিয়ে এদিন সকালে চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের বলির ঘোনার ছিপা থেকে গরু ২টি উদ্ধার করেন। এ ঘটনার জের ধরে গরু চোর সিন্ডিকেটের সদস্য ইউনুচ সময়-সুযোগে দেখিয়ে নেওয়ার হুমকি দেন গরু উদ্ধারে সহায়তাকারী আহমদ উল্লাহকে।
আলীকদম থানায় প্রদত্ত অভিযোগে আহমদ উল্লাহ বলেন, এ ঘটনার জের ধরে মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে একটি চোরের সিন্ডিকেট প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে তার বাড়ি থেকে একটি গাভী চুরি করে চোরের দল। ওইদিন রাতেই সংঘবদ্ধ চোরেরদ ল গাভীটি অংহ্লাচিং হেডম্যানের পুরাতন অব্যবহৃত বাড়ির আঙ্গিনায় নিয়ে জবাই করে দেয়। ঈদুল আযহার দিন এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন আহমদ উল্লাহ। এতে ৬ জনের নামোল্লেখ করা হয়।
এদিকে, আলীকদম বাস টার্মিনাল এলাকার মিজান ড্রাইভারের গাড়ি থেকে একটি ব্যাটারী চুরি হয় গত পরশু রাতে। এ ঘটনার জের ধরে চোর সিন্ডিকেটের সদস্য ‘সুমন’কে সন্দেহ করা হয়। শুক্রবার দিনগত রাতে তাকেসহ আরো কয়েকজনেকে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে ডাকা হয়। এরপর গরু চুরি ও জবাইয়ের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানা যায় সন্ধিগ্ধ চোর সুমন ও সাদ্দামের মুখ থেকেই।
চোর সিন্ডিকেটের প্রধান মাহাবুবের পিতার নাম মৃত রশিদ আহমদ। তাদের বাড়ি চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের কাশেম মেম্বার পাড়ায়। তার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন আশেপাশের এলাকায় দোকান পাটে চুরিসহ নানান অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংগঠিত হয়ে আসছিল। গত শুক্রবার রাতে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়ির আঙ্গিনায় বৈঠক চলাকালে উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকেই জানা যায়, চোর সিন্ডিকেটের প্রধান মাহাবুব। তার চোখেমুখে বেশ গাম্ভীর্য দেখাচ্ছিল। সে বৈঠক চলাকালে চোরের কাতারে না বসে অন্যান্য মান্যগণ্য লোকজনের ভীড়ের মধ্যে চেয়ার পেতে বসেছিল! তার সম্মুখেই অনেকে অভিযোগ করেন, সিন্ডিকেট প্রধান মাহাবুবের কাছে রয়েছে দেশীয় অস্ত্র, ধারালো চুরিসহ একাধিক চুরির সরঞ্জাম। গত কয়েকদিনের তদন্তে সিন্ডিকেট প্রধান মাহাবুবের কাছে অস্ত্র-শস্ত্র থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এমন তথ্য জানিয়েছেন আলীকদম থানার নবাগত সাব ইনস্পেক্টর আল আমিন। তিনি এ ঘটনাটি তদন্ত করছিলেন। এ সময় তিনি জানান, ‘আহমদ উল্লাহর অভিযোগ পাওয়ার পর গোপনে তদন্ত নামে পুলিশ। তারা চোরদের আটকের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত যোগাড় করছিলেন। অনেক তথ্যও পায় পুলিশ। থানার অফিসার ইনচার্জ ছুটি থেকে কর্মস্থলে আসলে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হতো!’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আলীকদম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম বলেন, গরু চুরি করে জবাই করার ঘটনায় স্বাক্ষী প্রমাণে প্রমাণ হলে সিন্ডিকেটের ৬ সদস্যকে আটকের পর থানায় সোপর্দ করা হয়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।