অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর ও দুয়ারীপাড়া এলাকা। সরকারদলীয় এক অঙ্গসংগঠনের নেতার ১ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে এই এলাকায়। সরকারি খালের পাশে গ্যারেজ করে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগে প্রতিদিন চার্জ করা হচ্ছে এসব রিকশা। শুধু রূপনগর ও দুয়ারীপাড়ায় নয়, বৃহত্তর মিরপুর এলাকার অলি-গলিতে এভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা। শুধু মেইন রোডে চলবে না এমন চুক্তিতেই এগুলো দেখেও দেখছে না ট্রাফিক পুলিশ। মিরপুর ছাড়াও উত্তরা, ধানমন্ডি, খিলক্ষেত, মুগদা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, আদাবর, চটবাড়ি বেড়িবাঁধ, কামরাঙ্গীরচর ও ডেমরায় এসবের চলাচল বেশি দেখা যায়। যাত্রাবাড়ী, গোড়ান, খিলক্ষেত, মান্ডা, সায়েদাবাদ, সবুজবাগ, খিলগাঁও, চিটাগাং রোড, শনির আখড়ায় রাস্তার পাশেই কয়েক হাজার গ্যারেজ থেকে অবৈধ বৈদ্যুতিক লাইন থেকে এসব ইলেকট্রিক রিকশার ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হচ্ছে প্রকাশ্যেই। শুধু রাজধানী ও এর আশপাশেই এ ধরনের ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যা কমপক্ষে ৩ লাখ। অবশ্য ঢাকায় কিছুটা আড়ালে-আবডালে চললেও সারা দেশে জেলা, উপজেলা ও গ্রামগঞ্জে এখন প্রধান বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ইলেকট্রিক রিকশা ও ইজিবাইক।
বাংলাদেশ ইজিবাইক আমদানি ও সরবরাহকারী ব্যবসায়ী সমিতির দেওয়া তথ্যানুযায়ী বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে এখন প্রায় ১৫ লাখের বেশি ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান চলাচল করছে। এসব যানবাহন চার্জ দিতে দৈনিক প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। সাধারণত একটি ইজিবাইকের জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৮০০ থেকে ১১০০ ওয়াট হিসেবে ৫ থেকে ৬ ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৭ টাকা ধরে ১০ লাখ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশায় প্রতিদিন সাড়ে ৩ কোটি টাকার বেশি বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
অটোরিকশার চার্জে ৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ : রাজশাহী মহানগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৩০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান ইজিবাইক চলে। এ ছাড়া প্রতিদিনই ৮-১০টি নতুন রিকশা-ভ্যান রাস্তায় নামছে। এসব ইজিবাইক ও রিকশা-ভ্যানের ব্যাটারি চার্জ এবং রাখার জন্য ৩ শতাধিক গ্যারেজ গড়ে উঠেছে। গ্যারেজে চার্জসহ একটি রিকশা রাখতে ১৩০ টাকা ও চার্জসহ একটি ইজিবাইক রাখতে ১৯০ টাকা দিতে হয়।
সাধারণত একটি ইজিবাইকের জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য গড়ে ৯০০ থেকে ১১০০ ওয়াট হিসেবে ৫ থেকে ৬ ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়। সে হিসাবে জেলার প্রায় ৩০ হাজার ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশা চার্জের জন্য জাতীয় গ্রিড থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩৩ মেগাওয়াট এবং মাসে ৯৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে।
রংপুরে আড়াই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ : রংপুরের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা প্রতিদিন আড়াই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করছে। চলমান লোডশেডিংয়ে অটোরিকশা চার্জ অনেকটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রংপুর সিটি করপোরেশন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও রিকশার লাইসেন্স দিয়েছে ৮ হাজার। এর মধ্যে অটোরিকশার ৫ হাজার এবং রিকশার ৩ হাজার। কিন্তু নগরীতে অটোরিকশা ও রিকশা চলছে ৩০ হাজারের বেশি। অবৈধ অটোরিকশা এবং অবৈধ চার্জে বিদ্যুতের ভোগান্তি বাড়ছে। রংপুরের অটোরিকশাগুলো চার্জ দিতে দিনে ২৪ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। সেই হিসাবে প্রতিদিন প্রায় আড়াই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অটোরিকশা চার্জ দিতে চলে যাচ্ছে। প্রতি মাসে ৭০ থেকে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার পেছনে।
ঘাটতি বিদ্যুতের অর্ধেকই যায় ইজিবাইকে : খুলনা সিটি করপোরেশন প্রায় ৮ হাজার ইজিবাইকের লাইসেন্স দিলেও বিভিন্ন সংস্থার হিসাবে এ সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। প্রতিবার একটি ইজিবাইকে চার্জ দিতে বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয় গড়ে ৬ থেকে ১০ ইউনিট। সে হিসাবে অবৈধ ১০ হাজার ইজিবাইকের চার্জ দিতে লাগে ৬০ হাজার ইউনিট বা ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। যা খুলনায় ঘাটতিকৃত বিদ্যুতের অর্ধেক। ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) আওতায় খুলনার ও ঢাকা বিভাগের ১৬ জেলায় অফপিকে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৪৫০-৪৭০ মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় ৪০০-৪১০ মেগাওয়াট। এক্ষেত্রে বিদ্যুতে ঘাটতি থাকে ৫০-৬০ মেগাওয়াট। একইভাবে পিকআওয়ারেও বিদ্যুতের ঘাটতি থাকে ৫০-৬০ মেগাওয়াট।
রাজবাড়ীতে ইজিবাইক গিলে খাচ্ছে বিদ্যুৎ : রাজবাড়ী জেলায় প্রায় ১০ হাজার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশা রয়েছে। যেগুলো চার্জের মাধ্যমে চলাচল করে। প্রতিদিন রাজবাড়ীতে ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এসব যানবাহনের চার্জের পেছনে ব্যয় হয়। রাত ৮টা থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময়েই প্রয়োজন হয় এই ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
রাজবাড়ী পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌ. মো. মফিজুর রহমান খান বলেন, আমাদের বর্তমানে ৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে ৩১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছি। ব্যাটারিচালিত যানবাহনে বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। অনেক বিদ্যুৎ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের চার্জে ব্যয় হচ্ছে।
নীলফামারীতে ২৫০০ অটোরিকশা : নীলফামারী সদর উপজেলায় প্রায় ২৫০০ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় দৈনিক চার্জে গড়ে ব্যবহার হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ ইউনিট বিদ্যুৎ। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের অপচয় বেড়েই চলেছে।
ব্যাটারি চার্জিংয়ে ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ : খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলায় প্রায় ৮ সহস্রাধিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে। তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি রেজিস্ট্রেশনবিহীন। এসব অটো প্রতিদিন গড়ে ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গিলছে। বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকার জানান, খাগড়াছড়ি জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৩০ মেগাওয়াট। বর্তমানে আমরা পাচ্ছি ২৪ মেগাওয়াট। ৬ মেগাওয়াট আমরা লোডশেডিং করছি এলাকাভিত্তিক। তিনি অটোরিকশা চার্জিং-এ ৪ মেগাওয়াটের কাছাকাছি বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে বলে এ প্রতিবেদককে জানান। তিনি বলেন, জেলা শহরের মধ্যে অটোরিকশা মালিকরা বৈদ্যুতিক মিটার স্থাপন করে তা ব্যবহার করছে অটোরিকশা চার্জিং-এ।
লালমনিরহাটে বিদ্যুৎ যাচ্ছে ১২ হাজার ইজিবাইকে : লালমনিরহাটে ১২ হাজারেরও বেশি অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলছে। যা দৈনিক চার্জে গড়ে ব্যবহার হচ্ছে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের অপচয়সহ পাশাপাশি লোডশেডিংও বেড়েই চলেছে। লোডশেডিংয়ের জন্য স্থানীয়রা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইককে দায়ী করছে। স্থানীয়রা এসব যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
যশোরে দাপিয়ে বেড়ােেচ্ছ ইজিবাইক : যশোর পৌর এলাকায় রেজিস্ট্রেশন নিয়েই চলছে সাড়ে ৩ হাজার ইজিবাইক। রেজিস্ট্রেশনবিহীন আরও প্রায় ৮ হাজার ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা শহরে চলাচল করছে।
যশোর বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, যদি যশোর শহরে ১২/১৩ হাজার ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে, তাহলে প্রতিদিন ৫০ হাজারের মতো ব্যাটারি চার্জ করার প্রয়োজন হয়।
চাঁদপুরে ইজিবাইকে ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ : চাঁদপুর পৌরসভাসহ গ্রামের যত্রতত্র চলছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। শুধু পৌরসভায় লাইসেন্সকৃত ২ হাজার ৬২৮টি ইজিবাইক চলছে। তালিকার বাইরে অবৈধ ইজিবাইক রয়েছে। যার ফলে বিদ্যুতের এই দুর্যোগকালে শহরে লোডশেডিংয়ের মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এই ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকগুলো প্রতিদিন ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করছে।
গাজীপুরে ১০ হাজার অটোরিকশা : গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ১০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে। এসব অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, মহাসড়কে ইজিবাইক এবং অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে জিএমপির অভিযানে ১৪ -১৯ জুলাই পর্যন্ত ইজিবাইক এবং অটোরিকশা আটক হয়েছে ১০৩৮টি।
টাঙ্গাইলে অবৈধ অটো চার্জার গ্যারেজ : টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ অটো চার্জার গ্যারেজ। এসব গ্যারেজে অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারি চার্জের জন্য নামমাত্র মিটার ব্যবহার করে অবৈধ সংযোগ দিয়ে গ্যারেজ ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন অনেক গ্যারেজ মালিক। আর এ কারণে শহরে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে অলিগলিতে ২০ হাজার অটোরিকশা : চাঁপাইনবাবগঞ্জে অলিগলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ২০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা। এসব রিকশা ও অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে প্রায় আড়াই শতাধিক বৈধ অবৈধ চার্জিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। এতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করায় লোডশেডিংয়ের ওপর প্রভাব পড়ছে।
নারায়ণগঞ্জে প্রায় ৮০ হাজার অটোরিকশা : নারায়ণগঞ্জে প্রায় ৮০ হাজার অটোরিকশা বিদ্যুৎ চুরির অন্যতম উৎস বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। নারায়ণগঞ্জে আনাচে-কানাচে এসব অটোরিকশাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রায় ৫০০এর বেশি অটো গ্যারেজ। এসব গ্যারেজে অবৈধ ও বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে নিয়মের বাইরে চার্জ দেওয়া হচ্ছে বিশালসংখ্যক অটোরিকশা। বিদ্যুতের কিছু লোক এসব অটো গ্যারেজ থেকে মাসিক উৎকোচ নিচ্ছে।
বগুড়ায় অটোরিকশার দাপটে বেড়েছে লোডশেডিং : বগুড়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইকে জেলার জন্য বরাদ্দ বিদ্যুতের একটি অংশ খরচ হচ্ছে। বাকি বরাদ্দ দিয়ে জেলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালাতে গিয়ে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের আওতায় পড়ছে। বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং অন্যদিকে তীব্র যানজট নিয়ে জেলাবাসী নাজেহাল। বগুড়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দিনের পর দিন এসব অটোরিকশার সংখ্যা বেড়েই চলছে। বগুড়াসহ ১২টি উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ২ লক্ষাধিক অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলছে প্রতিদিন। ইজিবাইকের জন্য জেলা সদরেই গড়ে উঠেছে ২৫৯টি গ্যারেজ। শুধু এই পরিমাণ গ্যারেজে থাকা অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে প্রতিদিন বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে ৪.৬ মেগাওয়াট।
বরিশালে ২৪ হাজার রিকশা ও অটোরিকশা : বরিশাল নগরী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত ২৪ হাজার রিকশা ও অটোরিকশা। এসব রিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে প্রতিদিন খরচ হয় অন্তত ৯৬ হাজার কিলোওয়াট (ইউনিট) বিদ্যুৎ। ব্যাটারি চার্জিংয়ের অনুমোদিত পয়েন্ট না থাকলেও ব্যক্তি মালিকরা তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এসব রিকশার ব্যাটারি চার্জ দিয়ে থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই বিদ্যুৎ বিভাগের।
টাঙ্গাইলে অটো চার্জার গ্যারেজ : টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ অটো চার্জার গ্যারেজ। এসব গ্যারেজে অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারি চার্জের জন্য নামমাত্র মিটার ব্যবহার করে অবৈধ সংযোগ দিয়ে গ্যারেজ ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন অনেক গ্যারেজ মালিক। আর এ কারণে শহরে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। এসব গ্যারেজে অবৈধভাবে প্রতিদিন শুধু টাঙ্গাইল পৌর শহরেই ৮/৯ হাজারেরও বেশি অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারি চার্জ করা হয়।
সিলেটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১২ হাজার ইজিবাইক : সিলেটে মিলছে চাহিদার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ। সরবরাহ কম থাকায় শিডিউল লোডশেডিং করেও কূলকিনারা করতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। জাতীয় গ্রিডলাইন থেকে পাওয়া বিদ্যুতের বড় অংশ চলে যাচ্ছে ব্যাটারিচালিত যানবাহন চার্জে। প্রতিদিন সিলেট মহানগরীতে চলাচলকারী প্রায় ১২ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক চার্জে ব্যবহার হচ্ছে ৪০-৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর সমপরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে আবাসিক খাতে। ব্যাটারিচালিত পরিবহন মালিকদের সংগঠন ও বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
নোয়াখালীতে ১৫ হাজার ইজিবাইক : নোয়াখালীতে প্রায় ১৫/১৬ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মিশুক চলছে প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন উপজেলায়। এসব অটোরিকশার চালকরা ঘরের মালিক থেকে বিভিন্ন গ্যারেজ ভাড়া নিয়ে অবৈধভাবে ব্যাটারি চার্জ দিচ্ছে। এতে বিদ্যুতের ব্যাপক অপচয় হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী ও চৌমুহনীসহ বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধভাবে এ অটোরিকশাগুলো চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নাগরিক জানান, বিদ্যুৎ অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও লাইনম্যানদের সঙ্গে যোগসাজশে এই অবৈধ গ্যারেজগুলোতে ব্যাটারি চার্জ দিচ্ছে অটোচালকরা। প্রতিটি অটো থেকে ১০০/১৫০ টাকা চার্জ বাবদ নিচ্ছে গ্যারেজ মালিকরা। নোয়াখালীতে প্রায় ২ শতাধিক অবৈধ গ্যারেজ রয়েছে। এর একটা অংশ পান বিদ্যুৎ অফিসের এক শ্রেণির লোকজন।
বিদ্যুৎ খাচ্ছে ইজিবাইক : ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের নিবন্ধিত সংখ্যা ৭ হাজার। কিন্তু এই মহানগরীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার ইজিবাইক ও অটোরিকশা। পরিসংখ্যান বলছে, গোটা জেলার বৈধ-অবৈধ মিলে এসব ইজিবাইকের সংখ্যা রয়েছে অর্ধ লক্ষাধিকের বেশি।
কিশোরগঞ্জে ৭৫৭ গ্যারেজ : কিশোরগঞ্জ জেলায় ৭৫৭টি গ্যারেজে অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জে প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুৎ লাগে ১৪ হাজার ৬৫০ কিলোওয়াট। এটি বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব। এর বাইরে দ্বিগুণেরও বেশি অটোরিকশার গ্যারেজ রয়েছে বলে জানা গেছে। গ্যারেজের বাইরে অনেক বাড়িতেও চার্জ দেওয়া হয় অটোরিকশার ব্যাটারি।
নড়াইলে ইজিবাইক গিলে খাচ্ছে বিদ্যুৎ : নড়াইলে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ৭ হাজার ও ১০ হাজার অটো-ভ্যান রয়েছে। যা দৈনিক চার্জে গড়ে ব্যবহার হচ্ছে ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ। যে কারণে বিদ্যুতের অপচয়সহ এলাকায় লোডশেডিং বেড়েই চলেছে।
পটুয়াখালীতে ২৫ হাজার ব্যাটারিচালিত অটো : পটুয়াখালীতে প্রায় ২৫ হাজার ব্যাটারিচালিত অটো-মিশুক ও রিকশা চলছে। এর মধ্যে পটুয়াখালী পৌরসভায়ই চলছে ৫ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটো। এসব ব্যাটারিচালিত অটো-মিশুকের ব্যাটারি চার্জ দিতে হয় বিদ্যুতে। প্রতিটি ব্যাটারিচালিত অটো বা অটোরিকশা চার্জ দিতে প্রতিদিন গড়ে ৬ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয় বলে জানান পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা। প্রতিটি ১২ ভোল্টের ১২০ এম্পিয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন ৮ সিটের একটি বড় অটোর ৫টি ব্যাটারির চার্জ দিতে খরচ হয় কমপক্ষে ১০ ইউনিট বিদ্যুৎ।
-বিডি প্রতিদিন
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।