মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর সহ সর্বস্থরের মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন-কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ির বিদায়ী ইনচার্জ IGP’s exemplary good services badge-badge-2021 (আইজিপি ব্যাজ) অর্জন করা ইন্সপেক্টর মোঃ আনোয়ার হোসেন। শুক্রবার ২২ জুলাই বিকেলে দক্ষিণ রুমালিয়ার ছরা শহর পুলিশ ফাঁড়ির সামনের মাঠে ‘আমরা বৃহত্তর দক্ষিণ রুমালিয়ার ছরাবাসী’ নামক সংগঠনের উদ্যোগে বিদায় সমর্ধনার আয়োজন করা হলেও এতে সর্বস্থরের মানুষ ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের ঢল নামে। অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষের আকুতি এমনই ছিলো, আনোয়ার হোসেন নামক প্রাণের মানুষটি চাকুরীর সহজাত নিয়মে বদলী হলেও তাঁকে কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে তাঁরা যেতে দেবেননা।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, বাংলা পত্রিকা২৪ এর কক্সবাজার অফিস প্রধান ও মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ মেম্বারের সভাপতিত্বে বিদায় সমর্বধনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট আইনজীবী, অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা ব্যারিস্টার আবুল আলা ছিদ্দিকী।
প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন একেএম মোজাম্মেল মেমোরিয়াল কেজি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব মমতাজুল হক। শাহ জব্বারিয় প্রিন্টার্সের স্বত্বাধিকারী, সমাজকর্মী মোহাম্মদ সেলিমের নান্দনিক সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী, দৈনিক কক্সবাজার ৭১ পত্রিকার সম্পাদক ও রাজনীতিবিদ রুহুল আমিন সিকদার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আরীফ উল্লাহ কাওসার নুরী, ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম ওয়াজেদ, শহর আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল হাসান, আবদুল লতিফ, আব্দু রশিদ দলা, জয়নাল আবেদীন ও হামিদ আলী।
সমর্বধনার জবাবে ইন্সপেক্টর মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, দায়িত্ববোধ, সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে কক্সবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। দায়িত্বপালনকালে শহর পুলিশ ফাঁড়ির এলাকাটিকে একটি আদর্শ ও শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসাবে গড়ে তোলার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়েছি। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি নিরপরাধ একজন মানুষও যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য সর্তক ছিলাম সবসময়।
ইন্সপেক্টর মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, দায়িত্ব পালনকালে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোঃ হাসানুজ্জামান পিপিএম, কক্সবাজার জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা, বিশেষ করে এলাকার সর্বস্থরের মানুষের যে অকৃত্রিম সহযোগিতা পেয়েছি, তা কখনো ভুলার নয়। এ সহযোগিতা তাঁকে এবং তাঁর টিমকে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করেছে বলে উল্লেখ করে ইন্সপেক্টর মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, অপরাধমুক্ত, পরিচ্ছন্ন নিরাপদ শহর গড়ার প্রত্যয়কে কিছুটা হলেও এগিয়ে নিতে পেরেছি। তিনি বলেন, তাঁর ও তাঁর টিমের ২২ মাসের অদম্য কর্মতৎপরতায় যদি ন্যুনতম সফলতা এসে থাকে, তাহলে তার কৃতিত্ব তাঁর একার নয়, কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ির সকল সদস্যের এবং এলাকার শান্তিপ্রিয় সর্বস্থরের মানুষের।
শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, কাজ করতে গিয়ে শহর পুলিশ ফাঁড়ির এলাকার বাসিন্দাদের নিজের পরিবারের সদস্যদের মতো আপন করে নিয়েছি। শহর পুলিশ ফাঁড়ির এলাকাটি ছিলো সম্পূর্ণ একটি নতুন জায়গা। এখানে পাহাড়ি ও অপরাধপ্রবণ চিহ্নিত এলাকায় ঝুঁকি ও শংকা নিয়ে কাজ করে এলাকাকে অপরাধমুক্ত করতে সম্মিলিতভাবে কাজ করেছি। অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসাবে বদনাম দুর করার চেষ্টা ছিলো অবিরাম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করে এলাকার জনগণের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ ছিল নিরন্তর। তিনি বলেন, দায়িত্বকে নেহায়েত শুধু চাকরি মনে করিনি। অপরাধপ্রবণ এলাকাকে অপরাধমুক্ত করার মিশনকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছিলাম। যাতে এলাকার মানুষ নিরাপদে ও শান্তিতে ঘুমাতে পারে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখে।
ইন্সপেক্টর মো: আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, তাঁকে সমর্বধনা দিয়ে সর্বস্থরের মানুষ যে আশাতীত ভালোবাসা ও স্বতস্ফুর্ততা দেখিয়েছে, সেটা তার পাওয়ার কথা নয়। এর জন্য এলাকার মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতার পরশে আবদ্ধ হয়ে তিনি চিরঋণী হয়ে গেছেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন।
সমর্বধনা সভায় বক্তারা বলেন, ইন্সপেক্টর মো: আনোয়ার হোসেন ও তাঁর টিম মেধা, সাহস ও অপ্রতিরোধ্য কর্মতৎপরতা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকেটা নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। যার জন্য তিনি বদলীজনিত বিদায় বেলায় গণমানুষের কাছে সমর্বধিত হচ্ছেন। ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন। একজন কর্মট, দায়িত্বশীল, নির্লোভ ও সাহসী পুলিশ অফিসার হিসাবে ইন্সপেক্টর মো: আনোয়ার হোসেনকে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সম্পদ হিসাবে উল্লেখ করে বক্তারা তাঁর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের উত্তরোত্তর সাফল্য ও উন্নতি কামনা করেন। বক্তারা শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোঃ আনোয়ার হোসেন এর দায়িত্বপালনকালীন বিগত ২২ মাসের কর্মতৎপরতা তুলে ধরেন। এসময় অনেকে অশ্রুসিক্ত নয়নে ইন্সপেক্টর মো: আনোয়ার হোসেনকে বিদায় জানান।
একই অনুষ্ঠানে শহর পুলিশ ফাঁড়ির বদলী হওয়া এসআই মোহাম্মদ জুয়েল, কনস্টেবল রফিক উদ্দিন, নয়ন চন্দ্র সরকার, ফারুক হোসেন, মিনহাজ উদ্দিন, মোঃ সালাহ উদ্দিন এবং দুলাল তালুকদারকেও সমর্বধিত করা হয়।
সমর্বধনা সভায় দল মত নির্বিশেষে এলাকার সব শ্রেণী পেশার মানুষের স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সভায় অন্যান্যের মধ্যে দৈনিক ইনকিলাব এর কক্সবাজার অফিস প্রধান সামসুল হক শারেক, সরওয়ার আলম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন, শেফায়েত কামাল সৌরভ, দৈনিক আপন কন্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোঃ সেলিম, মোঃ শাহ আলম, সাইফুল ইসলাম নবাব, মিনহাজুল আবেদীন রকি, সাইফুল ইসলাম, মোঃ জাহাঙ্গীর, ইবনে সিনা, শামসুল আলম বদু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সমর্বধনা সভায় দৈনিক আপন কন্ঠ, আমরা বৃহত্তর দক্ষিণ রুমালিয়ার ছরাবাসী, দক্ষিণ রুমালিয়ার ছরা টমটম মালিক সমিতি, আবদুস সোবহান পরিবার, কক্সবাজার অটোরিকশা, সিএনজি ও টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন, দক্ষিণ রুমালিয়ার ছরা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বন্ধন, ৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্র-যুব পরিষদ, শাহ জব্বারিয়া প্রিন্টার্সের পক্ষে সমর্বধিত অতিথি ইন্সপেক্টর মোঃ আনোয়ার হোসেনকে ক্রেস্ট দিয়ে সমর্বধিত করা হয়। এছাড়া, সমিতিবাজার সমাজ কমিটি, দক্ষিণ রুমালিয়ার ছরা টমটম মালিক সমিতি, আবদুস সোবহান পরিবার, আমরা বৃহত্তর দক্ষিণ রুমালিয়ার ছরাবাসী সহ বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক, ক্রীড়া ও কল্যাণকর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ইন্সপেক্টর মোঃ আনোয়ার হোসেন-কে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করা হয়।
প্রসঙ্গত, মেধাবী, চৌকস ও জনবান্ধব পুলিশ কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মো: আনোয়ার হোসেন ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসাবে যোগদান করেছিলেন। নিয়মিত বদলীর অংশ হিসাবে সম্প্রতি তাঁকে বাংলাদেশ পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জে বদলী করা হয়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।