মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
নর হত্যার মামলায় ৩ জন আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, একইসাথে প্রত্যেক আসামীকে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন বৃহস্পতিবার ২৫ আগস্ট এ রায় ঘোষণা করেন। একই আদালতের অতিরিক্ত পিপি ও রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অ্যাডভোকেট সুলতানুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছে-কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকরা ইউনিয়নের নলবিলা গ্রামের মোহাম্মদ নুরু মিকারের পুত্র ছাবের আহমদ (৩১), একই উপজেলার পূর্ব কৈয়ারবিল ইসলাম নগর এলাকার ইসহাক আহমদের পুত্র মোঃ গিয়াস উদ্দিন (২৬) এবং একই উপজেলার কাকরা ইউনিয়নের নলবিলা দরগাহ পাড়া গ্রামের নুরুল আমিনের পুত্র মহিউদ্দিন (২৩)। ঘটনার দীর্ঘ ১৫ বছর পর এ রায় ঘোষণা করা হয়।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
২০০৭ সালের ২২ জুন রাত সাড়ে ৮ টার দিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার উজিরভিটি গ্রামের বাসিন্দা, ঘটনাকালীন বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাইতং ভুট্টোর বনজ খামার এলাকার বাসিন্দা নুরুচ্ছালাম ও তার স্ত্রী মরিয়ম বেগম চকরিয়া উপজেলার ইসলামনগরে বনজ খামারের মালিক ভূট্টোর কাছে চিকিৎসার খরচের টাকার জন্য যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ভূট্টোর বাড়ির আগে ইসলামনগর স্টেশনে জনৈক ছাবেরের দোকানের সামনে পৌঁছালে কতিপয় লোক দৌড়ে এসে চোর চোর বলে নুরুচ্ছালামকে পূব শত্রতার জের ধরে দীর্ঘক্ষন বেদম মারধর করে গাছের সাথে তাকে বেঁধে রাখে। পরে গাছের সাথে বাঁধা থাকাবস্থায় নুরুচ্ছালাম মার যায়।
এঘটনায় নিহত নুরুচ্ছালামের স্ত্রী মরিয়ম বেগম বাদী হয়ে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার চকরিয়া থানা মামলা নম্বর : ১৬/২০০৭ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ১৮২/২০০৭ ইংরেজি (চকরিয়া) এবং এসটি মামলা নম্বর ৮১/২০০৯ ইংরেজি।
মামলায় কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকরা ইউনিয়নের নববিলা গ্রামের মোহাম্মদ নুরু মিকারের পুত্র ছাবের আহমদকে এজাহারভুক্ত আসামী এবং আরো ৬/৭ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়। মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) চকরিয়া উপজেলার পূর্ব কৈয়ারবিল ইসলাম নগর এলাকার ইসহাক আহমদের পুত্র মোঃ গিয়াস উদ্দিন (২৬) এবং একই উপজেলার কাকরা ইউনিয়নের নলবিলা দরগাহ পাড়া গ্রামের নুরুল আমিনের পুত্র মহিউদ্দিন (২৩) এর বিরুদ্ধে এ হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ এনে চার্জশীটে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
বিচার ও রায় :
মামলাটি বিচারের জন্য ২০০৯ সালের ২৮ এপ্রিল চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলায় সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীদের পক্ষে জেরা, সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট যাচাই, আলামত প্রদর্শন, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উপরোক্ত ৩ জন আসামীকে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন উল্লেখিত রায় প্রদান করেন।
মামলার রায়ের পর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশন মতো কক্সবাজার বিচারবিভাগে হত্যা, মাদক, অস্ত্র সহ পুরাতন মামলা সমুহ গুরুত্ব দিয়ে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। ফলে অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় কক্সবাজার বিচারবিভাগে এখন সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম আরো বলেন, এজন্য কক্সবাজার বিচারবিভাগে মামলার জট কিছুটা হলেও হ্রাস পাচ্ছে এবং জণসাধারণ ও বিচারপ্রার্থীদের বিচারবিভাগের প্রতি আস্থা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।