মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

আদালতে ত্রুটিযুক্ত ও অসম্পূর্ণ চার্জশীট দাখিলের অপরাধে কক্সবাজার সদর মডেল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহজাহান কবির এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এসআই মোহাম্মদ মাহিদুল আলম ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পেয়েছেন।

আদালতের তলব মতে, গত ২৪ আগস্ট এই পুলিশ কর্মকর্তাদ্বয় স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে কক্সবাজার সদর আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গা এর কাছে এ ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক এলাহী শাহজাহান নুরী এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি আরো জানান, ২০১৯ সালের ৩ জুলাই সকাল ১০ টার দিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের উত্তর মাইজপাড়া গ্রামের আবদু শুক্কুর নিজের জমিতে চাষাবাদের কাজ করার সময় ৮/৯ জন লোক লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিতে তার উপর হামলা চালায়। এ হামলায় আবদু শুক্কুর গুরতর আহত হয়। তার ডান বাহু ভেঙে পঙ্গু করে দেওয়া হয়। হামলাকারীরা আবদু শুক্কুরের স্ত্রী শফিকা আক্তারের শ্লীলতা হানি করে এবং কয়েক হাজার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

এঘটনায় একই এলাকার মৃত কবির আহমদ এর ৪ পুত্র নুর মোহাম্মদ (৪২), নুরুল হক (৪৫), নুরুল ইসলাম (৪৮), কালা মিয়া (৫৫), মৃত গুরা মিয়া’র পুত্র বশির আহমদ (৩৫), নুরুল ইসলামের পুত্র মোঃ রিদুয়ান (২২) এবং অজ্ঞাত আরো ২/৩ জনকে আসামী করে শফিকা আক্তার বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ২০১৯ সালের ২২ জুলাই একটি মামলা দায়ের করেন। যার কক্সবাজার সদর মডেল থানা মামলা নম্বর : ৭০/২০১৯ ইংরেজি এবং জিআর মামলা নম্বর : ৮০২/২০১৯ ইংরেজি (সদর)। মামলায় আসামীরা পরস্পর যোগসাজশে অনাধিকার প্রবেশ করে গুরতর আঘাত পূর্বক হুমকি প্রদর্শন, চুরি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এবং কক্সবাজার সদর মডেল থানার এসআই মোহাম্মদ মাহিদুল আলম ২০২০ সালের ২৬ মার্চ ফৌজদারী দন্ড বিধির ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩৭৯/৩৫৪/৫০৬ ধারায় আদালতে মামলাটির চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। যার চার্জশীট নম্বর : ২৬৮।

এরমধ্যে, মামলার আসামী কালা মিয়া মৃত্যূবরন করেন। আদালতে দাখিলকৃত চার্জশীটে মামলার অপর ৫ জন আসামীর মধ্যে ৪ জন যথাক্রমে নুর মোহাম্মদ, নুরুল হক, নুরুল ইসলাম ও বশির আহমদ কে, কি ধরনের অপরাধ করেছে তার বিস্তারিত উল্লেখ আছে। মামলার অন্য আসামী মোঃ রিদুয়ান এর বিরুদ্ধে এজাহারে সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকা সত্বেও চার্জশীটে শুধুমাত্র মোঃ রিদুয়ান এর নামটি উল্লেখ করা হয়েছে। মোঃ রিদুয়ান কি অপরাধ করেছে, তার কত ধারায় শাস্তি হওয়া দরকার, তার কোন কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। চার্জশীটটি ত্রুটিযুক্ত ও অসম্পূর্ণ রেখে আদালতে সেটি দাখিল করা হয়।

গত ২০ জুলাই মামলাটির ধার্য্যদিনে তৎসময়ে কক্সবাজার সদর আমলী আদালতের দায়িত্ব পালনরত সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মোঃ আাসিফ চার্জশীটটি পর্যালোচনা করেন। পর্যালোচনা করতে গিয়ে বিজ্ঞ বিচারক চার্জশীটে ব্যাপক অসংগতি লক্ষ্য করেন। মামলাটি তদন্ত করার জন্য আইও যথেষ্ট সময় পাওয়া সত্বেও চার্জশীটের এই অসংগতি ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে কেন সুপারিশ করা হবে না, এ বিষয়ে স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে কক্সবাজার সদর মডেল থানার তৎকালীন ওসি সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহজাহান কবির এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মোহাম্মদ মাহিদুল আলমকে বিজ্ঞ বিচারক আদালতে তলব করেন।

পুলিশ কর্মকর্তাদ্বয় গত ২৪ আগস্ট কক্সবাজার সদর আমলী আদালতে বর্তমানে দায়িত্ব পালনরত সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গা’র কোর্টে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পুলিশ কর্মকর্তাদ্বয় বলেন, আদালতে দাখিলকৃত চার্জশীটে সংশোধন শেষে চুড়ান্ত প্রিন্ট করাকালে প্রিন্টিং মিচিং হয়ে যায়। যা তাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়ায় অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিযুক্ত সেই চার্জশীট আদালতে দাখিল করা হয়। যা তাদের অনিচ্ছাকৃত ভুল। এছাড়া তৎকালীন করোনা মহামারীর বিষয়ে থানার বাইরে বেশির ভাগ সময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁরা অফিসে পর্যাপ্ত সময় দিতে নাপারায় স্বল্প সময়ে এই চার্জশীট রেডি করতে হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তাদ্বয় আদালতকে জানান।

বিজ্ঞ বিচারক শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গা পুলিশ কর্মকর্তাদ্বয়ের প্রদত্ত ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হওয়ায়, সেসময়ে করোনা মহামারী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দাপ্তরিক কাজ বিঘ্ন ঘটায় তাদেরকে ব্যাখ্যা ও এই ভুলের দায় হতে অব্যাহতি দেন। বিজ্ঞ বিচারক এ বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদ্বয়কে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়ে ভবিষ্যতে মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে আরো পেশাদারীত্ব এবং দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশ দেন।

বিজ্ঞ বিচারক শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গা মামলাটি আরো অধিকতর তদন্ত করে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য কক্সবাজার সদর মডেল থানার বর্তমান ওসি-কে নির্দেশ দেন। আদেশের কপি কক্সবাজারের পুলিশ সুপার, কক্সবাজার সদর মডেল থানার বর্তমান ওসি এবং ব্যাখ্যা প্রদানকারী কক্সবাজার সদর মডেল থানার সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদ্বয়ের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।