মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় আসামীদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ ও মোঃ দেলোয়ার হোসেন শামীম এর জবানবন্দী ও আসামীদের পক্ষে তাঁদের জেরা করা হবে। এ মামলার ষষ্ঠ দফায় সাক্ষ্য গ্রহনের তৃতীয় দিনে বুধবার ২৭ অক্টোবর কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে তাঁদের এ সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। বিজ্ঞ বিচারক মঙ্গলবার ২৬ অক্টোবর আদালতে তাদের সাক্ষ্য দেওয়ার দিন ধার্য করেন।

এই ২ জন বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সিনহা হত্যা মামলার ১৫ জন আসামীর মধ্যে ১২ জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেছিলেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: দেলোয়ার হোসেন শামীম ও তামান্না ফারাহ কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীতে জ্যৈষ্ঠ বিচারিক হাকিম হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।

২০২০ সালের ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ এর আদালতে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর : এসটি-৪৯৩/২০২১ ইংরেজী। যার জিআর মামলা নম্বর : ৭০৩/২০২০ ইংরেজি। যার টেকনাফ মডেল থানা মামলা নম্বর : ৯/২০২০ ইংরেজি। তখন থেকে একজন সাহসী, সৎ ও দায়িত্বশীল বিচারক হিসাবে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ সারাদেশে ইতিবাচক আলোচনায় আসেন।

এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় তিন নম্বর আসামি। মামলার দুই নম্বর আসামি করা হয় টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে। মামলাটি তদন্তভার দেওয়া হয় র‍্যাব-১৫ কে।

যে ১২ জন আসামী ১৬৪ ধারায় আদালতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছিলেন তারা হলেন : বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

আর যে ৩ জন আসামী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেননি, তারা হলো : টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও কনস্টেবল সাগর দেব। আদালতে চার্জশীট জমা দেওয়ার পর গত ২৪ জুন কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করে।

এদিকে, এর আগে গত ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত এ মামলায় আরো মোট ৫৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন করা হয়। আগে আরো যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা হলেন-মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাহিদুল ইসলাম সিফাত, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ আমিন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও হাফেজ শহীদুল ইসলাম, আবদুল হামিদ, ফিরোজ মাহমুদ ও মোহাম্মদ শওকত আলী, হাফেজ জহিরুল ইসলাম, ডা. রনধীর দেবনাথ, সেনা সদস্য সার্জেন্ট আইয়ুব আলী, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. মোঃ শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী, মোক্তার আহমদ, ছেনোয়ারা বেগম, হামজালাল, আলী আকবর, ফরিদুল মোস্তফা খান, বেবী ইসলাম, সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মোঃ মুনতাসীর আরেফিন, সার্জেন্ট মোঃ মোক্তার হোসেন, কর্পোরাল নুর মোহাম্মদ, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার সৈয়দ মঈন, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আবু জাফর এবং লেন্স কর্পোরাল মোঃ রুহুল আমিন, আহমদ কবির মনু, ধলা মিয়া, সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট মোঃ জিয়াউর রহমান, সার্জেন্ট আনিসুর রহমান, কনস্টেবল কামরুল হাসান, রামু সেনানিবাসের ১০, এমপি ইউনিটের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ইমরান হাসান, র‍্যাব-১৫ এর এএসআই নজরুল ইসলাম, এসআই সোহেল সিকদার, পুলিশের কনস্টেবল শুভ পাল, এসআই মোঃ আমিনুল ইসলাম ও একই থানার কনস্টেবল পলাশ ভট্টাচার্য, জব্দ তালিকার সাক্ষী কনস্টেবল উসালা মার্মা, সেনা সদস্য হীরা মিয়া, র‍্যাব-১৫ এর নৌবাহিনীর সদস্য আবু সালাম, কাউন্টার ম্যানেজার নবী হোসেন, আবুল কালাম ও শহীদ উদ্দিন, নিহত সিনহাকে খুনের আগে-পরে বিভিন্ন জনের মোবাইল ফোন রেকর্ডকারী গ্রামীণ ফোনের প্রতিনিধি মোঃ আহসানুল হক, রবি অপারেটরের প্রতিনিধি সৈকত আহমদ শিপলু, রাসায়নিক পরীক্ষক মিজানুর রহমান ও পিংকু পোদ্দার, কনস্টেবল সাখাওয়াত হোসেন, এসআই বাবুল মিয়া, এসআই রাশেদুল হাসান, এসআই হাশেম, এসআই মোহাম্মদ মুছা, এসআই আবদুল জলিল, এসআই আবদুল্লাহ আল হাসান, এএসআই মোঃ বাবুল মিয়া, এসআই নাজমুল হোসেন এবং এসআই সুমন কান্তি দে।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তাদার এম. নুরুল কবির জানান-এ মামলার চার্জশীটের ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮১ নম্বর পর্যন্ত সাক্ষীকে সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত থাকার জন্য সমন দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) র‍্যাব-১৫ সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আমিনুল হক এবং দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) র‍্যাব-১৫ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ খায়রুল ইসলামকে আদালতে সাক্ষ্য দিতে এখনো সমন দেওয়া হয়নি।

সাক্ষ্য গ্রহণকালে মামলার ১৫ জন আসামীকেও কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হবে বলে জানান-পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম। মামলায় কারাগার থেকে এনে আদালতে যে ১৫ জন আসামিকে হাজির করা হবে, তারা হলো : বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

গত ২৩ আগস্ট সকালে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক এ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।