এম.এ আজিজ রাসেল:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ও বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী প্রখ্যাত কবি কামাল চৌধুরী বলেছেন, ‘যতদিন পৃথিবীর বুকে থাকবে বাঙালি অথবা বাংলাদেশের নাম, ততদিন অমর হয়ে থাকবেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে কখনওই ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বই বাঙালিকে দিয়েছে নিজেদের রাষ্ট্র। শুধু রাষ্ট্রই নয়, জাতিকে আত্মনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালিরই নয়, দুনিয়ার সকল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মুক্তি ও শান্তির প্রতীক। তিনি না থাকলে আমাদের লাল—সবুজের দেশ পেতোনা নিজেদের পতাকা। বাঙালির বাংলায় কথা বলার অধিকারও স্বীকৃতি পেতোনা পাকিস্তানি বর্বরতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাধ্যমে। তার কারণেই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি। তার অসাধারণ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কিউবার মুক্তিসূর্য ফিদেল কাস্ত্রো তাই তুলনা করেছিলেন হিমালয় পর্বতের। সাবেক পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাঙালির মুক্তির আসল সূর্য ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। প্রকৃত অর্থেই তিনি জাতির পিতা। তাই তাঁর আদর্শকে লালন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভবিষ্যত প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। তবেই সম্ভব বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার।’
সোমবার (২৯ আগস্ট) বিকালে কক্সবাজার ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেবির শহীদ সুভাষ হলে জাতীয় শোক দিবস—২০২২ উপলক্ষ্যে জাতীয় শোক দিবস উদযাপন পরিষদ, কক্সবাজার আয়োজিত ‘চিরন্তন বঙ্গবন্ধু বাংলার দূত’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘প্রথম থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। বাঙালি জাতিসত্তা ছিল তার কাছে সবার আগে। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের জাতির পিতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন গোটা দুনিয়ার জন্যই মুক্তিসূর্য। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। ২০০৪ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতার ধারে কাছেও ছিলোনা, সেই সময় বিবিসি একটি জরিপ চালায়। সেই জরিপে বিবিসির স্রোতারা শেখ মুজিবুর রহমানকেই শ্রেষ্ঠবাঙালি বলে নির্বাচিত করেন। বাঙালির মুক্তিদাতা তিনি। বাঙালীকে বসবাসের জন্য দিয়েছেন একটি বাংলাভাষী রাষ্ট্র। নিজের জীবন বিপন্ন জেনেও পাকিস্তান সেনার কাছে আত্মসমর্পণ না করে গোটা দুনিয়ার বুকে বাঙালির সম্মানকে উন্নীত করেছেন। বাঙালির নির্ভীক চরিত্র তুলে ধরেছেন তিনি। তার অসাম্প্রদায়িক ও নির্ভীক চেতনাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে।’
এতে সম্মানিত আলোচকের বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান ও কবি সাদিকুর রহমান পরাগ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় শোক দিবস উদযাপন পরিষদ, কক্সবাজারের আহবায়ক ও কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাতীয় শোক দিবস উদযাপন পরিষদ, কক্সবাজারের সচির ও কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল কর।
অনুষ্ঠানে কবি এডভোকেট রিদুয়ান আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন, কবি অমিত চৌধুরী, আসিফ নূর, জাহেদ সরওয়ার, মানিক বৈরাগী, আহাসানুল হক, ঋতিল মনীষা, নীলোৎপল বড়ুয়া, নুপা আলম, খালেদ শহীদ, শামীম আকতার, দর্পন বড়ুয়া, নিধু ঋষি, সিফাত আল নূর, কালাম আজাদ, মিজান মনির, রুদ্র সাহাদাৎ, মম আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীতের পাশাপাশি যৌথ গান ও একক গান পরিবেশন করেন, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী ও তাদের শিল্পী পূর্ণিতা বড়ুয়া। আবৃত্তি উপস্থাপন করেন, আবৃত্তিকার জসীম উদ্দিন বকুলের নেতৃত্বে শব্দায়ন আবৃত্তি একাডেমি ও প্রতিভা দাশের নেতৃত্বে শ্রুতি আবৃত্তি অঙ্গন। পরে কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগের শোক দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত তিন দিনব্যাপী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারি ও বিজয়ীদের মধ্যে পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
আয়োজিত পর্বে বিচারক হিসেবে সম্মাননা গ্রহণ করে প্রতিযোগিতা কমিটির আহবায়ক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন, আসিফ নূর ও পরেশ কান্তি দে। আয়োজিত কমিটির সচিব ওয়াহিদ মুরাদ সুমন, সদস্য ফয়সাল হুদা, আবুল কালাম, শমসের জুয়েল, সোহেল রানা, হেলাল উদ্দিন ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সহযোগিতায় বিজয়ীরা গ্রহণ করেন একে একে পুরষ্কার।
এতে আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ক গ্রুপে প্রথম হয়েছে পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়ুশ বিশ্বাস, দ্বিতীয় হয়েছে, বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের স্বয়ংদ্যুতি চৌধুরী ও একই প্রতিষ্ঠানের সিলমা সুবাহ, তৃতীয় হয়েছে পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের রুবাইয়া বিনতে রহমান আরওয়া। খ গ্রুপে প্রথম হয়েছে ল্যাবরেটরী স্কুলের মোহতাসিন হুদা উচ্ছ্বাস, দ্বিতীয় হয়েছে, হলি চাইল্ড স্কুলের ইফতিসাম চৌধুরী, তৃতীয় হয়েছে বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের এলিযাহ নূর ইস্তা। গ গ্রুপে প্রথম হয়েছে, বায়তুশ শরফ স্কুলের নুযহাত রহমান ওয়ারিশা, দ্বিতীয় হয়েছে, কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্পূর্ণা ধর, তৃতীয় হয়েছে, একই প্রতিষ্ঠানের সাফিয়া চৌধুরী সোহা ও মারিয়া কিবতিয়া। ঘ গ্রুপে প্রথম হয়েছে, কক্সবাজার সিটি কলেজের বাঁধন সরকার, দ্বিতীয় হয়েছে, কক্সবাজার সরকারি কলেজের ঐশি পাল, তৃতীয় হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের রাওজাতুল জান্নাত।
রচনা প্রতিযোগিতায় ক গ্রুপে প্রথম হয়েছে, বীচ পাবলিক স্কুলের শাহীন আলম নিশান, দ্বিতীয় হয়েছে, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের আবতাহী মো. আল্ জাওয়াদ, তৃতীয় হয়েছে বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের এলিজা নূর। খ গ্রুপে প্রথম হয়েছে, কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মুহাম্মদ শাহরিয়ার রাফসান লিমন, দ্বিতীয় হয়েছে, একই প্রতিষ্ঠানের মাউল ইসলাম নিহাল, তৃতীয় হয়েছে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের উপমা দাশ।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিায় ক গ্রুপে প্রথম হয়েছে, রামু ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের মেহেরীন রশিদ তাহা, দ্বিতীয় হয়েছে, বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের স্বয়ংদ্যুদি চৌধুরী, তৃতীয় হয়েছে, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ফারিপ্তা ইসলাম ইশাল। খ গ্রুপে প্রথম হয়েছে, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের কৌশিক দে বাপ্পী, দ্বিতীয় হয়েছে, একই প্রতিষ্ঠানে আদ্রিক বিশ্বাস, তৃতীয় হয়েছে মহেশখালী গোরকঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আব্তাহী মো. আল্ জাওয়াদ। গ গ্রুপে প্রথম হয়েছে, কক্সবাজার মডেল স্কুলের সামিয়া জান্নাত আরিবা, দ্বিতীয় হয়েছে, চৌধুরী তাজরিয়ান সাইফুল পুতুল, তৃতীয় হয়েছে, লিলিয়ান ত্রিপুরা।
শেষে স্বপন ভট্টাচার্যে্যর গ্রন্থনা ও নির্দেশনা কক্সবাজার থিয়েটারের পরিবেশনায় মঞ্চায়ন হয় মুক্তির মহানায়ক নাটক।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।