মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, কক্সবাজার সদর মডেল থানার সাবেক ইন্সপেক্টর (অপারেশনস্) মোঃ মাইন উদ্দিন মামলা তদন্তে গাফিলতি, অবহেলা ও আদালতে ত্রুটিপূর্ণ চার্জশীট দাখিলের কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী সোমবার ২৯ আগস্ট ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ (আইজিপি) এর কাছে এ সুপারিশ প্রেরণ করেছেন। কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক এলাহী শাহজাহান নুরী এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রশাসনিক কর্মকর্তা মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে আরো জানান, ২০১৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ১২ টা ১৫ মিনিটের দিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানার একটি টিম কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইসুলুর ঘোনার মসজিদের পাশে ডাকাতির উদ্দেশ্যে সমবেত হওয়া এবং ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়া অবস্থায় এক অভিযান চালিয়ে অস্ত্র সহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলো-ইয়াছিন আরাফাত (২৩), মোঃ আবু নাছের (২৮) এবং মোঃ রোহেল (২১)।

এঘটনায় কক্সবাজার সদর মডেল থানার তৎকালীন এসআই রাজিব কান্তি নাথ বাদী হয়ে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তারকৃত ৩ জন সহ মোট ৬ জনকে আসামী করে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩৯৯/৪০২ ধারায় আসামীদের বিরুদ্ধে ডাকাতির উদ্দেশ্যে সমবেত হওয়া এবং প্রস্তুতি নেওয়ার অভিযোগ এনে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার সদর থানা মামলা নম্বর : ৫৮/২০১৬ ইংরেজি এবং জি.আর মামলা নম্বর : ৬৩৯/২০১৬ (সদর)। মামলায় ৩ জনকে পলাতক আসামী দেখানো হয়। পলাতক দেখানো আসামীরা হলো-ওয়াসিম (৩০), পেড়ান প্রকাশ পেঠান (২৬) এবং আবদুর রহিম (৩০)।

তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ইন্সপেক্টর মো: মাঈন উদ্দিন মামলাটি তদন্ত করে ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। যার চার্জশীট নম্বর : ৭৮৭।

সোমবার ২৯ আগস্ট কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী’র আদালতে মামলাটির চার্জ গঠনের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার দাখিলকৃত চার্জশীট পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডাকাতির উদ্দেশ্যে সমবেত হওয়া ও প্রস্তুতি গ্রহণের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত ৩ জন এবং পলাতক ৩ জন আসামী সহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

কিন্তু এ ৬ জন ব্যতীত চার্জশীটে এজাহার বর্হিভুত সন্ধিগ্ধ আরো ৬ জন আসামীকে কথিত তদন্তে প্রাপ্ত আসামী হিসাবে উল্লেখ করে তাদেরকে চার্জশীটে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ১২ জন আসামীর বিরুদ্ধে বিচারের প্রার্থনা জানিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মোঃ মইন উদ্দিন আদালতে চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। এজাহার বর্হিভুত কতিথ তদন্তে প্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছে-শহীদুল আলম প্রকাশ শাহীন (২০), আলী জোহার প্রকাশ ঘেলু জোহার (৩২), জাকির হোসেন প্রকাশ জাকির (২৪), শফিউর রহমান প্রকাশ শফি (২১), মোঃ নিয়ামত (২৬) এবং মোহাম্মদ রুবেল প্রকাশ তবলা বাদক রুবেল (২২)।

চার্জ (অভিযোগ) গঠন বিষয়ে শুনানীকালে বিজ্ঞ বিচারক পর্যবেক্ষণ করেন, এজাহারে নাম নাথাকা সত্ত্বেও যে ৬ জন সন্দিগ্ধ আসামীকে আইও তদন্তকালে চার্জশীটের অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে বিচারের প্রার্থনা জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীগণ দি কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর এর ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে কোন বক্তব্য তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এর নিকট প্রদান করেননি। এমনকি উক্ত সন্দিগ্ধ আসামী ৬ জনের নাম সাক্ষীগণ তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট প্রকাশও করেননি।

তাছাড়া এস.আই মোঃ আবদুর রহিম-কে চার্জশীটে সাক্ষী হিসেবে নাম অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তকালে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর এর ১৬১ ধারায় এস.আই মোঃ আবদুর রহিম এর কোন জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়নি। আদালত চার্জশীট ও তদন্তে আরো বিভিন্ন ত্রুটি লক্ষ্য করেন।

বিজ্ঞ বিচারক আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী দাখিলকৃত চার্জশীট, এজাহার, জব্দ তালিকা, সাক্ষীদের ১৬১ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দী সহ সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে এজাহারনামীয় ৬ জন আসামীর বিরুদ্ধে চর্জ (অভিযোগ) গঠন করেন। চার্জশীটে তদন্তকালে অন্তর্ভুক্ত করা বাকি সন্দিগ্ধ ৬ জন আসামীকে বিজ্ঞ বিচারক মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করেন।

পর্যবেক্ষণে আদালত উল্লেখ করেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) তদন্তকালে চরম অবহেলা ও গাফিলতি প্রদর্শন করেছেন। তিনি কেন, কি কারণে, কি অভিযোগে সন্দিদ্ধ ৬ জন আসামীকে চার্জশীটে অন্তর্ভুক্ত করেছেন-তা আদালতের নিকট মোটেও বোধগম্য হয়নি। তদন্তকারী কর্মকর্তার এ ধরণের খামখেয়ালি কার্যক্রম একাবারে কাম্য নয়। যা দায়িত্ববোধ ও পেশাদারিত্বের পরিপন্থী। মামলা তদন্তে তার এ ধরণের অবহেলা, ত্রুটি, বিচ্যুতি ও গাফিলতির বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসা উচিত বলে আদালত উপলব্ধি করেন।

এজন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মোঃ মাইন উদ্দিন এর বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী মামলাটির সোমবারের আদেশের কপি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বরাবর প্রেরণের আদেশ দেন। তাছাড়া আদেশের কপি বাংলাদেশ পুলিশের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকটও প্রেরণ করা হয়।