জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডঃ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, আবুল মনসুর আহমদ একাধারে রাজনীতিবিদ ছিলেন, আইনজীবী ছিলেন, সাংবাদিক ছিলেন এবং সাহিত্যিক ছিলেন। এই চারটি পেশার সমন্বয়ে তিনি একজন অসাধারণ বুদ্ধিজীবী ছিলেন। আবুল মনসুর আহমদ নিজেকে বাঙালি হিসেবে সময়কে বিশ্লেষণ করেছেন। মেহনতি মানুষের কথা ভাবতেন ।
তিনি লিখেছেন , চিত্তরঞ্জন দাশ এর মৃত্যুর পর বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা গেল না। তিনি বঙ্গরচনা করতেন। যা উচিত এবং যা ঘটেছে তা নিয়ে হাস্যকর করে তুলছেন সাহিত্য কে । আবুল মনসুর আহমদ রচিত “আমার দেখা পঞ্চাশ বছর” এর লেখা অনেকটা উপন্যাস এর চরিত্রের মতো। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতা ছিল অসাধারণ।
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট এর ২১ দফা আবুল মনসুর আহমদ লিখেছেন।
৬ দফা তিনি লিখেছেন বলে অনেকে মনে করেন। তিনি ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন।
স্বাধীনতা চলে গেছে পুঁজিবাদের কাছে। একটা সামাজিক বিপ্লব দরকার। সামাজিক বিপ্লব ঘটে নাই বলে বৈষম্য বাড়ছে। সামাজিক বিপ্লব ছাড়া কোন মুক্তি নেই।
পুঁজিবাদ প্রকৃতিকে ধ্বংস করে। সংস্কৃতি কে তিনি গুরুত্ব দিতেন।সভ্যতা ধ্বংস হলেও সংস্কৃতি ধ্বংস হয় না।
আজ ১ সেপ্টেম্বর (২০২২) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের দ্বিতীয় তলায় মোজাফফর আহমদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আবুল মনসুর আহমদ রচিত “আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর এর পাঠ ও পর্যালোচনা” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন , আবুল মনসুর আহমদ এবং কাজী নজরুল ইসলাম সমসাময়িক।কাজী নজরুল ইসলামের সাথে আবুল মনসুর আহমদ এর অনেক কিছুই মিল আছে। দুইজনই আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাবের অধিকারী ছিলেন।
অল্পবয়সে তিনি কৃষক প্রজা পার্টির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে ছিলেন।
কংগ্রেসের চিন্তা ধারার সাথে তার কিছু মিল আছে। কারণ তিনি ১৯২০ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে আন্দোলনে ছিলেন।
“আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর” বইয়ে তিনি অতীত ও বর্তমানে বিবরণ দিয়েছেন। একটা গণতান্ত্রিক দেশের সাথে রাজনৈতিক দলের সম্পর্কের কথা তিনি বর্ণনা করেছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, হিন্দু -মুসলিম ঐক্যের প্রশ্নে আবুল মনসুর আহমদ লিখেছেন।
কংগ্রেসে মুসলমানগণ যুক্ত থাকলেও ভালো অবস্থানে ছিলেন না।
মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস এর মধ্যবর্তী অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে তিনি কৃষক প্রজা পার্টি সংগঠিত করেছেন।
হিন্দুরা মনে করতেন শেরেবাংলা হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য কৃষক প্রজা পার্টি গঠন করেছেন।
আবুল মনসুর আহমদ কে যখন কেউ নাস্তিক বলতেন , তখন তিনি বলতেন আমি মুসলমান নাস্তিক।যখন কেউ কমিউনিস্ট বলতেন তখন তিনি বলতেন আমি মুসলমান কমিউনিস্ট।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ বিন আলী বলেন, আবুল মনসুর আহমদ তার লেখা ” আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর” বইয়ে গণতন্ত্রের কথা বলেছেন। সেই গণতন্ত্র এখন মৃত। কিন্তু আমরা ভোট দিতে পারি না।তাই তরুণ প্রজন্মের কাছে আবুল মনসুর আহমদ এখনো প্রাসঙ্গিক।
আবুল মনসুর আহমদ এর পুত্র ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম সমাপনী বক্তব্যে উপস্থিত সবাই কে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন সাবেক আমলা আকবর আলী খান।