মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও), কক্সবাজারের উখিয়া থানার সাবেক এসআই মোঃ ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা তদন্তে গাফিলতি, চরম অবহেলা ও আদালতে ত্রুটিপূর্ণ চার্জশীট দাখিলের কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ (আইজিপি) এর কাছে এ সুপারিশ প্রেরণ করেছেন।
কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক এলাহী শাহজাহান নুরী ল‘ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম‘কে এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে আরো জানান, ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর রাত ২ টা ২৫ মিনিটের দিকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের বড়বিল এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়া অবস্থায় উখিয়া থানা পুলিশ এক অভিযান চালিয়ে ডাকাতির সরঞ্জাম সহ একজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী হলো-উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের রুমখাঁ মৌলভীপাড়ার তোফায়েল আহমেদ এর পুত্র মোঃ মনির (২৭)।
এঘটনায় উখিয়া থানার তৎকালীন এসআই নুরুল হক বাদী হয়ে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তারকৃত মো: মনিরকে আসামী করে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩৯৯/৪০২ ধারায় আসামীর বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার অভিযোগ এনে উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার উখিয়া থানা মামলা নম্বর : ১৩/২০১৮ ইংরেজি এবং জি.আর মামলা নম্বর : ৩৮২/২০১৮ (উখিয়া)।
তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এসআই মোঃ ফারুক হোসেন মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর ২০২০ সালের ২৬ মার্চ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। যার চার্জশীট নম্বর : ১৪০।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর ) কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী’র আদালতে মামলাটির চার্জ গঠনের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার দাখিলকৃত চার্জশীট পর্যালোচনায় দেখতে পান, এজাহারনামীয় উল্লেখিত আসামী ছাড়াও চার্জশীটে এজাহার বর্হিভুত সন্ধিগ্ধ আরো ২ জন আসামীকে কথিত তদন্তে প্রাপ্ত আসামী হিসাবে উল্লেখ করে তাদেরকে চার্জশীটে অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং মোট ৩ জন আসামীর বিরুদ্ধে বিচারের প্রার্থনা জানিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মোঃ ফারুক হোসেন আদালতে চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন।
এজাহার বর্হিভুত কথিত তদন্তে প্রাপ্ত আসামীরা হলো-উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পূর্ব মরিচ্যার জসিম উদ্দিন ও মৃত আরেফা বেগমের পুত্র কাউসার (২৫) এবং একই ইউনিয়নের পাগলীর বিল গ্রামের আমেনা খাতুন ও আলী আহমদ এর পুত্র সিরাজুল ইসলাম (৩৩)।
চার্জ (অভিযোগ) গঠন বিষয়ে শুনানীকালে বিচারক আরো পর্যবেক্ষণ করেন, এজাহারে নাম নাথাকা সত্ত্বেও যে ২ জন সন্দিগ্ধ আসামীকে আইও তদন্তকালে চার্জশীটের অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে বিচারের প্রার্থনা জানিয়েছেন, এ দু’জনের বিরুদ্ধে সাক্ষীগণ দি কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর এর ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে কোন বক্তব্য তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এর নিকট প্রদান করেননি। এমনকি উক্ত সন্দিগ্ধ আসামী ২ জনের নাম সাক্ষীগণ তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট প্রকাশও করেননি।
তাছাড়া, সাক্ষী আলহাজ্ব মোঃ শাহজাহান এর রেকর্ডকৃত জবানবন্দিতে তার নাম শাহজাহান এর স্থলে ‘‘মোঃ শামসুল আলম’’ মর্মে উল্লেখ করা হয়। আদালত অভিযোগপত্রে ও তদন্তে আরো অন্যান্য ত্রুটি লক্ষ্য করেন।
বিজ্ঞ বিচারক আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী দাখিলকৃত চার্জশীট, এজাহার, জব্দ তালিকা, সাক্ষীদের ১৬১ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দী সহ সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে শুধুমাত্র এজাহারনামীয় আসামী মোঃ মনির এর বিরুদ্ধে বিচারের জন্য চার্জ (অভিযোগ) গঠন করেন। কথিত তদন্তে প্রাপ্ত বাকি ২ জন আসামীকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করেন।
পর্যবেক্ষণে আদালত উল্লেখ করেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তকালে চরম অবহেলা ও গাফিলতি প্রদর্শন করেছেন। তিনি কেন, কি কারণে এবং কি অভিযোগে এজাহার বর্হিভুত সন্দিদ্ধ ২ জন আসামীকে সেন্ট আপ করেছেন অর্থাৎ চার্জশীটভূক্ত করে আদালতে বিচারের জন্য প্রার্থনা জানিয়েছেন-তা আদালতের নিকট বোধগম্য হয়নি। এ ২ জন আসামীর ঘটনার সাথে কি সম্পৃক্ততা আছে-তার কোন কিছু চার্জশীটে উল্লেখ নেই। পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও উল্লেখ করেন, তদন্তকারী কর্মকর্তার এ ধরণের খামখেয়ালি কার্যক্রম একাবারে কাম্য নয়। যা দায়িত্ববোধ ও পেশাদারিত্বের পরিপন্থী। যা সঠিক, সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচারের অন্তরায়। তার এ ধরণের অবহেলা, ত্রুটি ও বিচ্যুতির বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসা উচিত বলে বিজ্ঞ বিচারক উপলব্ধি করেন।
এজন্য, তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ ফারুক হোসেন এর বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী মামলাটির মঙ্গলবারের এ সংক্রান্ত আদেশের কপি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বরাবর প্রেরণের আদেশ দেন। তাছাড়া আদেশের কপি বাংলাদেশ পুলিশের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকটও প্রেরণ করা হয়। এসআই মোঃ ফারুক হোসেন বর্তমানে হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানায় কর্মরত রয়েছেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।