আহমদ গিয়াস :
কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর বড়ছড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘ঝাউবন প্রাথমিক বিদ্যা নিকেতন’ ১৪ বছর পরে আগামী সোমবার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজারবাগী পীর সিন্ডিকেট মাদ্রাসার নামে এতদিন এক একর আয়তনের জমিসহ স্কুলটি জবর দখল করে রাখে। তবে এখানে স্থানীয় কোন শিশুকে পড়ালেখা করানো হয় না। বরং বাইরের এলাকা থেকে কয়েকটি শিশুকে এখানে এনে রহস্যজনকভাবে রাখা হয়। এদের পড়ালেখার জন্য কথিত চারজন শিক্ষকও এই স্কুলে বসতবাড়ি বানিয়ে বসবাস করে। এনিয়ে আন্দোলনরত গ্রামবাসী ও জবর দখলকারী রাজারবাগী পীর সিন্ডিকেটের প্রতিনিধিদের সাথে বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজার সদর থানায় এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সদর থানার ওসি শেখ মুনীরুল গিয়াস ও ওসি অপারেশনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আগামী রোববার সকালের মধ্যে ঝাউবন বিদ্যা নিকেতন থেকে রাজারবাগী আস্তানা সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এবিষয়ে শুক্রবার রাতে আন্দোলনকারী গ্রামবাসীর এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, জবর দখলমুক্ত হওয়ার পর এই প্রতিষ্ঠানটিকে হাইস্কুলে উন্নীত করা হবে। বর্তমানে দরিয়ানগরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও কোন হাইস্কুল নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের অন্তত ৩ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়ালেখা করতে হয়।
ইতালীর ক্যাথলিক খৃস্টান ধর্মপ্রচারক ফাদার লুপি সমুদ্র সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্টের ‘দরবার পাড়ায়’ নব্বই এর দশকের শুরুতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু শহরের সমুদ্র তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষকে উচ্ছেদ করে দরিয়ানগরে পূনবার্সন করা হলে সেখান থেকে এই স্কুলটিও স্থানান্তর করে এখানে আনা হয় এবং নামটিও অপরিবর্তিত রাখা হয়। এখানে নির্মাণ করে দেয়া হয় টিনের ছাউনীযুক্ত পাকা ভবন। এই স্কুলটি উদ্বোধন করেন কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক এনামুল কবির। জেলা-উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারিদের ৩ বছর বেতনভাতাও দেয়া হয়েছে। বাকী সময়ে ইতালীর ফাদার লুপির পক্ষ থেকেই বেতনভাতা দেয়া হয়েছিল। এখানে ছিল শতাধিক শিক্ষার্থীও। কিন্তু ২০০৭ সালে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে স্কুলের জমি দখল করে সেখানে মাদ্রাসার নাম ব্যবহার করে রাজারবাগী আস্তানা গড়ে তোলার পর ওই শিশুরা আর পড়ালেখার সুযোগ পায়নি। ফলে শিক্ষাজীবন থেকে তারা ঝরে পড়ে। এখানে মাদ্রাসার নাম ব্যবহৃত হলেও আসলে কাউকে পড়ানো হয় না। বরং প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য আহমদ ফারুক খান নামের এক ছদ্মবেশী প্রতারক ও ধোঁকাবাজ তার নিজ এলাকা সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫/৬ টি শিশুকে এখানে এনে রেখেছে। এই আস্তানায় বাইরের এলাকার শিশুদের রেখে দেয়া রহস্যজনক বৈকি। তারা কোন শিশু পাচারকারী কীনা খোঁজ নেয়া দরকার।