যুগান্তর: কক্সবাজারের ডিসি মামুনুর রশিদকে তলব করে কঠোরভাবে ভর্ৎসনা করেছেন হাইকোর্ট। তাকে কঠোর বার্তা দিয়ে উচ্চ আদালত বলেছেন, বার বার বলার পরও আপনি সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করেননি। আপনি সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ মান্য করুন। আদালতের আদেশ না মানলে আপনার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। আপনি এই ঝুঁকিতে যাবেন না।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ সংক্রান্ত সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মানায় বুধবার বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ডিসিকে এমন কঠোর বার্তা দেন।
ডিসিকে আদালত বলেন, কক্সবাজারের সৌন্দর্য রক্ষায় আপনার পারফরমেন্স শুধু জিরো নয়, নেগেটিভও। বার বার বলার পরও আপনি সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করেননি। আপনি সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ মান্য করুন। আদালতের আদেশ না মানলে আপনার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। আপনি এই ঝুঁকিতে যাবেন না।
শুনানির শুরুতে কক্সবাজারের ডিসির পক্ষে অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকিরকে উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেন, আমরা কখনো ঢালাওভাবে কারো বিরুদ্ধে কনটেম্পট করি না। তাকে অনেকবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাকে আদালতের মনোভাব জানিয়েছেন। এরপরও তিনি সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ মানেননি। এ কারণে তলব করেছি।
ডিসিকে উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেন, কক্সবাজারকে সারা বিশ্বের মানুষ চেনে। আপনি সেই কক্সবাজারের ডিসি। কক্সবাজারের সৌন্দর্য রক্ষায় ভূমিকা রাখুন। আপনাকে সারা বিশ্বের মানুষ চিনবে।উচ্ছেদ করে আমরা তাদের বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিতে বলছি না। আপনি সুন্দর ব্যবস্থাপনা করুন। মানুষ আপনাকে মনে রাখবে। আমরা প্রতিদিন পত্রিকা-টিভি খুলে দেখি আপনি কী করছেন। কিন্তু আপনার পারফরমেন্স জিরো তো নয়ই, নেগেটিভও।
এ সময় কক্সবাজারের ডিসি আদালতকে বলেন, আমি কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। এখন আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করব।তখন আদালত বলেন, শুধু করব বললে হবে না। আপনাকে করতেই হবে। আদালতের আদেশ না মানলে আপনার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে।তখন ডিসি বলেন, আমি আদালতের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।
পরে আদালত তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। একইসঙ্গে ৯ নভেম্বরের মধ্যে তাকে আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন।
এর আগে সকালে সমুদ্র সৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মানার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে হাইকোর্টে হাজির হন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক। আদালতের আদেশ না মানায় তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
গত ২৫ আগস্ট আদালত অবমাননার অভিযোগের এক আবেদনের শুনানি নিয়ে রুল জারি করে ডিসিকে তলব করেন হাইকোর্ট। সেদিন ডিসি ছাড়াও আরও চারজনের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন আদালত।
সেই চারজন হলেন- কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ, উপ-পরিচালক, টাউন প্ল্যানার তানভির হাসান, পুলিশ সুপার (এসপি) হাসানুজ্জামান ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মজিবর রহমান।
তার আগে কক্সবাজার সৈকত এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ একটি আইনি নোটিশ দেন।সেই নোটিশে বলা হয়, কক্সবাজার সৈকত এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রাখতে সেখান থেকে সব অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করার আবেদন জানিয়ে জনস্বার্থে এইচআরপিবি আদালতে রিট মামলা দায়ের করলে আদালত রায় দেন। রায়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নির্দেশনা দেন। জনস্বার্থ বিবেচনা করে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ৭ জুন বিবাদীদের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকার অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিলেও এখনো তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয়নি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।