মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
কক্সবাজারে মাদক ও মানবপাচার কাজে জড়িত ৫৬৬ জন অপরাধীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য কক্সবাজার জেলা পুলিশ কাজ করছে। এর মধ্যে ২৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো: রফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। সোমবার ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে কক্সবাজার জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আইনজীবী ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সাথে মানবপাচার বিষয়ে একটি কনসালটেশন সেশনে তিনি এ তথ্য প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানের অন্যতম অতিথি এডিশনাল এসপি মোঃ রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, ৪৯৫ টি মানবপাচারের মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে এবং ৩৫ টি মামলার তদন্ত কাজ চলছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, মানবপাচারকারীরা খুবই ধূর্ত, স্মার্ট, আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এবং কৌশলী। কক্সবাজার জেলা পুলিশের অপেক্ষাকৃত অপ্রতুল জনবল ও কম প্রশিক্ষণ দেওয়া পুলিশ সদস্যদের দিয়ে তাদের আইনের আওতায় আনা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এজন্য পুলিশ সদস্যদের আরো উন্নত ও আধুনিক প্রশিক্ষণের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
এডিশনাল এসপি মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধে জাতীয় ও স্থানীয় কমিটি গুলো আরো সক্রিয় করা দরকার। তিনি বলেন, মানবপাচারের শিকার ভিকটিমদের উদ্ধারের পর তাদের নিরাপদে রাখা, থাকা, খাওয়া নিয়ে বিবিধ সংকট সৃষ্টি হয়। এডিশনাল এসপি মোঃ রফিকুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে মানবপাচার প্রতিরোধে আইনজীবী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রকল্প ব্যবস্থাপক অ্যাডভোকেট দেবদুলাল মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছা লিপি, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসনা বেগম, ৩৪ বিজিবি’র সুপারিন্টেন্ডেন্ট মোঃ ফেরদৌস, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট একরামুল হুদা, এপিপি অ্যাডভোকেট প্রতিভা দাশ, এপিপি অ্যাডভোকেট সাকী এ কাউসার, অ্যাডভোকেট এহসান উল্লাহ, অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে অর্ধ শতাধিক আইনজীবী অংশ নেন।
অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজারের জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছা লিপি বলেন, দেশের মানবপাচার প্রতিরোধ আইন একটি পূনার্ঙ্গ আইন। মানবপাচারের শিকার লোকজনকে বিনামূল্যে লিগ্যাল এইড থেকে আইনী সহায়তা দেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এজন্য মানবপাচারের শিকার লিগ্যাল এইড অফিসে আইনী সহায়তা নিতে আসা বিচারপ্রার্থীদের গুরুত্ব দিয়ে তালিকা করে তা নিয়মিত মনিটরিং করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
মানবপাচারের জন্য ভৌগোলিকভাবে কক্সবাজার একটি চিহ্নিত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসাবে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে এ ঝুঁকি আরো বেড়েছে। এ অঞ্চলে মানবপাচারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার বলেন, মানবপাচারে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের শুধুমাত্র মামালায় আসামি করা দরকার। অহেতুক নির্দোষ ব্যক্তিদের মামলায় জড়ানো উচিত নয়। এ বিষয়ে এজাহারদাতা, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সতর্ক থাকতে হবে। নাহয় আদালতে মামলা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। বিচারপ্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটবে। মানবপাচার প্রতিরোধে এবং মানবপাচার আইনে দায়েরকৃত মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে আইনজীবীদের সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।
বিজিবি প্রতিনিধি সুপারিন্টেন্ডেন্ট মোঃ ফেরদৌস বলেন, এ অঞ্চলে সীমান্তের ২২ কিলোমিটার স্থলপথ এবং ৯ কিলোমিটার জলপথ। সীমান্তে বিজিবি’র কড়া ও দায়িত্বপূর্ণ পাহারার ব্যাবস্থা থাকায় সীমান্ত দিয়ে মানবপাচার হয়না। কিন্তু ভিন্নপথে মানবপাচারের ঘটনা ঘটে।
কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট একরামুল হুদা বলেন, পুলিশের দেওয়া এজাহারগুলো মানবপাচার আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দায়ের করা উচিত। ত্রুটিপূর্ণ এজাহারের দ্বারা আদালত বিব্রত হয়। বিচারপ্রক্রিয়া বিঘ্ন ঘটে। মামলার তদন্তের সময় প্রকৃত সাক্ষীদের চার্জশীটভুক্ত করা দরকার। নাহয় বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়। বিচারপ্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশান ফর মাইগ্রেশান (আইওএম) এবং অস্ট্রেলিয়ান এইড এর সহায়তায় বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি এ গুরুত্বপূর্ণ কনসালটেশনের আয়োজন করে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।